‘‘ছাতকে এমপি মানিক ও চেয়ারম্যানদের বিরোধ সরকারি বরাদ্দের সুফল থেকে বঞ্চিত স্থানীয় জনগন

‘‘ছাতকে এমপি মানিক ও চেয়ারম্যানদের বিরোধ সরকারি বরাদ্দের সুফল থেকে বঞ্চিত স্থানীয় জনগন

হাবিবুর রহমান নাসির, ছাতক, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
ছাতক-দোয়ারার এমপি মুহিবুর রহমান মানিকরে সাথে স্থানীয় ৫জন ইউপি চেয়ারম্যানদের বিরোধের কারণে উপজেলার ৫’টি ইউনিয়নের সাধারন মানুষকে সরকারি ভিবিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা- থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে এসব ইউনিয়নের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও দারিদ্র্যবিমোচনসহ বিভিন্ন সরকারি বরাদ্দের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয় জনগন
। বরাদ্দ বণ্টনের ক্ষেত্রেও বৈষম্য করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগন।বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে এমপি মুহিবুর রহমান মানিক বলয় থেকে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতিক নিয়ে ৬জন এবং এমপি বলয় থেকে অপর একজন (আ’লীগ-বিদ্রুহী) সতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী বিজয়ী হন। এবং ৫টি ইউনিয়নে ছাতক পৌর সভার মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আবুল কালাম চৌধুরীর বলয় থেকে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতিক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এখানে ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে ১টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বিএনপি দলীয় প্রার্থী।কিন্তু নির্বাচনের পর থেকে উপজেলার সিংচাপইড়, নোয়ারাই, কালারুকা, ছাতক সদর ও গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যারা পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরীর বলয় থেকে নির্বাচিত হওয়ার কারনে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন এই ৫টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ সাধারন জনগন।সংশ্লিষ্টদের এমন কর্মকা-ে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পাঁচ ইউনিয়নের কয়েক লক্ষাধিক মানুষ।

এতে ইউনিয়নগুলোতে রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কার, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং দারিদ্র্যবিমোচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মকা- ব্যাহত হওয়ার পাশা-পাশি এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয় সাধারন জনগন।জানা গেছে, সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সরকার দলীয় বর্তমান সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের সঙ্গে দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে দ্বন্দ্ব রয়েছে ছাতক পৌরসভার মেয়র ও সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম চৌধুরীর। গত ইউপি নির্বাচনে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১২টিতে জয় পায় আওয়ামী লীগ। এদের মধ্যে পাঁচ ইউপি চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য মানিকের প্রতিপক্ষ মেয়র আবুল কালাম চৌধুরীর বলয়ে রাজনীতি করেন।
এ কারণেই তাদেরকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে ইউপি চেয়ারম্যানরা জানান।তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ননওয়েজ খাতের পাঁচ ইউনিয়নের সমুদয় বরাদ্দের টাকা দিয়ে কালারুকা ইউনিয়নের একটি প্রতিরক্ষামূলক বাঁধ নির্মাণ করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ডিও লেটার দেন সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক।বাস্তবে প্রকল্প’র অস্তিত্ব নেই বলে ইউপি চেয়ারম্যান জানান। এ ছাড়া বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে সিংচাপইড় ইউনিয়নের চাউলি হাওরের বেড়িবাঁধে প্যালাসাইডিং স্থাপনের জন্য ৬১ হাজার ৩২১ টাকা উত্তোলন করা হলেও এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন মোহাম্মদ সাহেল।

একইভাবে ঐ ইউনিয়নের অপর একটি প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে আরো ৩৮ হাজার ৫৯৩ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।এদিকে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ছাতক উপজেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কাবিখা, কাবিটা, টিআর, কর্মসৃজনসহ বিভিন্ন খাতের সরকারি বরাদ্দ নিরীক্ষা করতে গিয়ে মন্ত্রণালয়ের তিন সদস্যের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা মোটা অঙ্কের অনিয়মের সন্ধান পায়। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ছাতক উপজেলা মন্ত্রণালয়ের আদেশ লঙ্ঘন করে ননওয়েজ কষ্ট খাতের ৮টি প্রকল্পে ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ৫৫২ টাকা নির্ধারিত সময়ের পরে ব্যয় করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক ওই অর্থ ২০১৭ সালের ১৬ই এপ্রিলের পরে ব্যয় না করার সুস্পষ্ট নির্দেশ থাকার পরও মে ও জুন মাসে ব্যয় করা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস কর্তৃক পুল ও সেতু নির্মাণ কর্মসূচির ৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার অনিয়ম ধরা পড়ে নিরীক্ষা দলের চোখে।জানা যায়, ১০১৬-১৭ অর্থবছরে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় প্রথম পর্যায়ে ৫২টি প্রকল্প গ্রহণ করে চেকের মাধ্যমে শ্রমিক সর্দারের দুই হাজার করে টাকা প্রদান করার কথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পিআইও স্বাক্ষরিত সরকারি নথিতে উল্লেখ করা হলেও নোয়ারাই ও সিংচাপইড় ইউপি চেয়ারম্যান তাদের ইউনিয়নের ২০ জন সর্দারের মজুরি পরিশোধের ব্যাপারে জানেন না বলে জানান।এদিকে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে অতি দরিদ্রদের কর্মসৃজন প্রকল্পের তালিকা প্রণয়নের এমপির সঙ্গে বিরোধ থাকা ৫ ইউপি চেয়ারম্যানকে অবগতই করা হয়নি। সিংচাপইড় ইউপি চেয়ারম্যান সাহাবউদ্দিন মোহাম্মদ সাহেল বলেন, ‘জনগণ ইউনিয়নের উন্নয়নের জন্য আমাদের নির্বাচিত করলেও সংসদ সদস্য মহোদয়ের রোষানলে পড়ে আমরা সেটা করতে পারছি না।

আমাদের ইউনিয়নের ন্যায্য বরাদ্দও উনি ডিও লেটার দিয়ে উনার পছন্দের ইউনিয়নে কেটে নিয়ে যাচ্ছেন।’ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাছির উল্লাহ খান বলেন, ‘সংসদ সদস্য মহোদয় অনেক কমিটির উপদেষ্টা। সেই হিসেবে তাঁর মতামতকে অনেকক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতে হয়।উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আব্দুল করিমের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন গত দুই দিন ধরে বন্ধ থাকায় কোনো বক্তব্য নেয়া যায়নি।সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের সঙ্গে এ ব্যাপারেযোগাযোগ করা হলে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment