মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে তৃতীয় রমজান অতিবাহিত করছি আমরা। এই রমজান তাহাজ্জুদ নামাজের সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে এসেছে। সেহরির সময় চাইলেই যে কেউ দুই
রাকাত করে ৪/৮/১২ কিংবা তদূর্ধ্ব রাকাত এ নামাজ পড়তে পারেন। রমজানে অনেক মসজিদে জামাতের সঙ্গেও তাহাজ্জুদ আদায় করা হয়। তাহাজ্জুদ নামাজ সব নবীর সুন্নত, আল্লাহতায়ালার প্রিয় বান্দাদের অভ্যাস এবং আল্লাহর সঙ্গে বান্দার গভীর সম্পর্ক স্থাপন তথা সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম পন্থা। তাহাজ্জুদের ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, রাতের কিছু অংশ কোরআন পাঠসহ জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্য অতিরিক্ত। হয়তো বা আপনার পালনকর্তা আপনাকে প্রশংসিত স্থানে পৌঁছাবেন (বনি ইসরাইল :৭৯)।
আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, তারা শয্যা ত্যাগ করে আকাঙ্ক্ষা ও আশঙ্কার সঙ্গে তাদের প্রতিপালককে ডাকে এবং আমি তাদের যে রুজি প্রদান করেছি, তা থেকে তারা দান করে (সিজদাহ :১৬)।
তাহাজ্জুদ নামাজ নফসের রিয়াজাত ও তারবিয়াতের এক বিশেষ মাধ্যম। কারণ, আপন প্রভুর প্রেমে গভীর রাতে সুখশয্যা ত্যাগ করেই মহান রবের ইবাদতে মশগুল হতে হয়। এ নামাজ মন ও চরিত্রকে নির্মল ও পবিত্র করা এবং সত্যপথে অবিচল থাকার জন্য অপরিহার্য, পরীক্ষিত ও কার্যকর পন্থা।
পবিত্র কোরআনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, নিশ্চয়ই ইবাদতের জন্য রাতে ওঠা নফসকে দমিত করার সহায়ক এবং সে সময়ের কোরআন পাঠ বা জিকির একেবারেই যথার্থ (মুজ্জাম্মিল :৬)।
প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র হাদিসেও তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আবু হুরায়রাহ (রা.) ইরশাদ করেন, আমি রাসুলকে (সা.) বলতে শুনেছি, ‘ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদ নামাজ।’
আবু হুরায়রা (রা.) অন্য আরেকটি হাদিসে ইরশাদ করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা প্রতি রাতেই নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন। আর যখন রাতের শেষ তৃতীয়ভাগ অবশিষ্ট থাকে, তিনি তখন বলতে থাকেন, কে আছো, আমায় ডাকবে, আর আমি তার ডাকে সাড়া দেবো? কে আছো আমার কাছে কিছু চাইবে, আর আমি তাকে তা দান করব? কে আছো আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আর আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো? (মুসলিম :১২৬৩)।
অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, তিন শ্রেণির বান্দার প্রতি আল্লাহ বেশি খুশি হোন-
এক. যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের জন্য ওঠে এবং তাহাজ্জুদ আদায় করে; দুই. সেসব মুসল্লি, যারা নামাজের জন্য সারিবদ্ধভাবে কাতারে দাঁড়ায় এবং তিন. ওই সব মুজাহিদ, যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায়।
অন্য একটি হাদিসে এসেছে, হজরত জাবির (রা.) বলেন, আমি রাসুলকে (সা.) বলতে শুনেছি, ‘রাতের মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যদি কোনো মুসলিম তা হাসিল করে এবং আল্লাহর কাছে ইহ ও পরকালের কোনো কল্যাণ চায়, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে তা দান করেন (মুসলিম)।
রমজানে রাত জেগে ইবাদতের প্রতি হাদিসে বিশেষ গুরুত্ব আমাদের সামনে প্রমাণিত। তবে খেয়াল রাখতে হবে, যে রাত জাগরণ ফজরের জামাত থেকে বঞ্চিত করে, তা কাম্য নয়। হজরত ওমর (রা.) বলেছেন, সারারাত সালাতে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে ফজরের সালাত জামাতের সঙ্গে আদায় করা আমার কাছে প্রিয়তর, শ্রেয়তর।