বুটিক শিল্পই মিতুর স্বপ্ন পুরনের একমাত্র লক্ষ্য

স্টাফ রিপোর্টার, নওগাঁ: মিতু। নওগাঁ সরকারি বিএমসি মহিলা কলেজের অর্নাস প্রথম বর্ষের
শিক্ষার্থী। সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশুনা করছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি স্ব-উদ্যোগে হাতের কাজ
করে বাড়তি আয় করছেন তিনি। শুধু নিজের জন্য নয়। এলাকার ১০ জন নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরও
কাজের ব্যবস্থা করেছেন। নওগাঁ সদর উপজেলার মধ্য দূর্গাপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান ও শাহিদা
বেগমের ছোট মেয়ে। বাবা আব্দুল মান্নান শারীরিক প্রতিবন্ধী একজন অবসর প্রাপ্ত সরকারি
চাকুরিজীবি ও মা শাহিদা বেগম গৃহিনী। বড় মেয়ে বিয়ে হয়েছে এবং এক ছেলে সেনা সদস্য।
মা শাহিদা বেগমের কাছ থেকে সুই সুতোর কাজের হাতেখড়ি। প্রথমে অল্প স্বল্প কাজ করা হতো।
বুটিকসের দোকান থেকে চাহিদা মতো কাপড় এনে কাজ শেষে যথা সময়ের মধ্যে দিতে হতো।
তার কাজের মান ও ডিজাইন ভাল হওয়ায় এখন চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে কাজের চাপও। গত
দু’বছর থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি সুই সুতোর কাজ করছেন মিতু।
কাজের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন প্রতি সপ্তাহে তার নির্দিষ্ট বুটিকসের দোকান থেকে ১৫/২০
টি থ্রি-পিচ ও শাড়ি সেট নিয়ে আসেন। আর এগুলোর উপর নিজের পছন্দ মতো গ্রাফিক্স করে
সেলাই করতে দেয়া হয় প্রশিক্ষণ নেয়া নারীদের। আর এ কাজের সাথে সম্পৃক্ত গ্রামের হতদরিদ্র
গৃহবধুরা। সংসারের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি ঘরে বসে সুই আর সুতোয় কাপড়ের উপর ফুটিয়ে
তুলা হয় চিত্র। পাঞ্জাবি, ফতুয়া, কটি, ওয়ালম্যাট, কুশন কভার, শাড়ির নকশি পাড়, থ্রি-পিস, ওড়না,
বেডসিট সহ নানা রকম কাপড়ে নকশা করে সেলাই করা হয়। এছাড়া পুঁতি পাথরের বিভিন্ন
সামগ্রী তৈরি করা হচ্ছে। থ্রি-পিচ সেলাই ১৫০ টাকা, ছবি আঁকা ৫০ টাকা, পাঞ্জাবি
সেলাই ৪৫০ টাকা, ছবি আঁকা ১০০ টাকা, শাড়ি সেলাই ৫০০-৬০০ টাকা, ছবি আঁকা ১০০-
১৫০ টাকা, কুশন কভার সম্পন্ন সেলাই ৩০০-৩৫০ টাকা।
একটু একটু করে টাকা জমিয়ে গত ঈদে নিজেও কিছু থ্রি-পিচ তৈরী করেন এবং ভাল লাভ পান।
কিন্তু স্বপ্ন থাকলেও মুলধনের অভাবে ভাল কিছু করতে গিয়েও হোচট খেতে হচ্ছে।
গৃহবধু বিথীকা বলেন, স্বামী একজন ভ্যান চালক। স্বামীর আয় থেকে সংসার চালাতে গিয়ে মাস
শেষে টানাপোড়ন দেখা দিত। গত তিন মাস থেকে সুই সুতো দিয়ে হাতের কাজ করছেন। মাসে
প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা আয় হয়। এই টাকায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচসহ
সংসারের বাড়তি চাহিদা মেটান।
প্রশিক্ষণ নেয়া শোভা রানী ও মোমতা সহ কয়েকজন গৃহবধু বলেন, সেলাই শেখার আগে তাদের
কোনো রোজগার ছিলনা। মিতুর কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে সংসারের কাজের পাশাপাশি অবসর সময়ে
এ কাজ করা হয়। আগের তুলনায় হাতের কাজের এসব কাপড়ের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। মানে ও গুনে
বেশ ভাল।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় মিতু বলেন, অনেক বড় একটা বুটিকস খোলা। যেখানে অনেক নারীরা কাজ
করবেন। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অন্য নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তবে প্রয়োজনীয়
আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ শিল্পকে বিকশিত করা সম্ভব।
বাবা আব্দুল মান্নান বলেন, মেয়ের হাতের অনেক কাজ জানা আছে। বেকারত্ব দূর করার জন্য নিজেই
কিছু করার চেষ্টা করছে। এলাকার নারীদেরও সহযোগীতা করছে। অনেক নারীদের এখন এ কাজের
প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।#

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment