গৃহবধুর নগ্ন ভিডিও ধারন: ব্লাকমেইল করে টাকা চাওয়ায় আত্মহত্যা

 নাহিদ হোসেন, নাটোর প্রতিনিধি:

নাটোরের বড়াইগ্রামে তিন বখাটেদের নির্মম নির্যাতনের পর নগ্ন করে ছবি তোলায় লজ্জায় ও অপমানে আত্মহত্যা করেছে খৃস্টান সম্প্রদায়ের এক গৃহবধূ। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৮টার দিকে ঘটনার শিকার উপজেলার জোনাইল ইউনিয়নের সরাবাড়িয়া গ্রামের ডমিনিক রোজারিও স্ত্রী শিপ্রা কস্তা (৩০) গলায় দড়ি লাগিয়ে ঘরের আড়ার সাথে ঝুলে আতœহত্যা করে। এর আগে গত ১৭ জুলাই তারিখে সন্ধ্যা রাতে ওই গৃহবধূর বাড়িতে স্থানীয় এক দোকানদার পাওনা টাকা আদায়ের জন্য গেলে একই এলাকার ৩ বখাটে তাদের দুজনকে ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে শারিরীক নির্যাতন ও শ্লীলতাহানী চালায়। বখাটেরা এসময় তাদের দুই জনকে জোরপূর্বক নগ্ন করে ছবিও তুলে। ছিনিয়ে নেয় গলায় থাকা একটি স্বর্ণের গলার চেইন, নগদ ১০ হাজার টাকা ও মোবাইল সেট। পরবর্তীতে শিপ্ধসঢ়;্রা থানা ও ইউনিয়ন পরিষদ সহ বিভিন্ন জায়গায় এর বিচার চাইলে দীর্ঘদিনেও কোন বিচার না পাওয়ায় এবং উপরন্তু বখাটেরা বিভিন্ন জায়গায় নগ্ন ছবি প্রদর্শন করতে থাকায় লজ্জা ও অপমানে অবশেষে আত্মহত্যা করে। বুধবার (৮ আগষ্ট) সকালে শিপ্ধসঢ়;্রার মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য থানা পুলিশ নাটোর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। এদিকে শিপ্রার স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্রটি ঘটনার ২১ দিন পর এবং তার আত্মহত্যা পর মঙ্গলবার (৭ আগষ্ট) রাতে নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। স্থানীয় জনগণ ও থানায় দায়েরকৃত অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, নয় ও ছয় বছরের দুইটি মেয়েকে নিয়ে গৃহবধূ শিপ্রা সরাবাড়িয়া গ্রামে তার স্বামীর বাড়িতে বসবাস করছিলেন। তার স্বামী ঢাকায় চাকরী করেন। স্থানীয় এক দোকানদার রাত সাড়ে ৯টার দিকে দোকান বন্ধ করে পাওনা টাকা চাইতে তার বাড়িতে আসে। ঐ দোকানদারের সাথে পূর্ব শত্রুতা ছিলো স্থানীয় বখাটে সংগ্রামপুরের রমজান ফকিরের ছেলে আলম ফকির (২৮), সরাবাড়িয়া গ্রামের মান্নান আলীর ছেলে সবুজ সরকার (৩৩), আনার কুলির ছেলে আবু হানিফের (৩৫)। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা লাঠি-সোঠা নিয়ে তাদেরকে ঘরের মধ্যে জোরপূর্বক ঢুকিয়ে অপবাদ দিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবী করে। এ টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাদের দুজনকে শারিরীক নির্যাতন করে এবং পাশাপাশি গৃহবধূকে শ্লীলতাহানী করে। এক পর্যায়ে জোরপূর্বক তাদের দুইজনকে পূর্ণ নগ্ন করে আপত্তিকর দৃশ্য তৈরী করতে বাধ্য করে এবং ছবি তুলে। তিনদিনের মধ্যে টাকা দিতে ব্যর্থ হলে এই ছবি ফেসবুকসহ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে শ্রিপা তার মা-বাবার সহযোগিতায় এ ঘটনার বিচার চেয়ে বড়াইগ্রাম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। পাশাপাশি এ ঘটনার বিচার চাওয়া হয় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হকের কাছেও। কিন্তু দীর্ঘদিন পার হলেও বিচার না পাওয়ায় এবং ভবিষ্যতে ওই বখাটেদের দ্বারা আরও বড় ক্ষতি হবে এমন আশংকায় গৃহবধূ শিপ্রা আতœহত্যার পথ বেছে নেয় বলে দাবি শিপ্রার পরিবারের। ইউপি চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক জানান, পুরো ঘটনাই তার জানা রয়েছে। তবে শিপ্ধসঢ়;্রার পরিবার রহস্যজনক কারণে মামলা করতে রাজী ছিলেন না। ধারণা করা হচ্ছে, মামলা করলে আরও বড় ধরণের ক্ষতি করা হবে বখাটেদের এমন হুমকীর কারণে হয়তো তাদের পরিবার মামলা করা বা থানায় অনেক তথ্যই গোপন করে অভিযোগে দায়ের করেছেন। তিনি দোষিদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন। বড়াইগ্রাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সৈকত হাসান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, শিপ্রাকে নির্যাতনের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়েরের পর অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছে। তাদের আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদপূর্বক থানায় মামলা রেকর্ড করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছিলো কিন্তু তার আগেই শিপ্রা আত্মহত্যা করে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলিপ কুমার দাস জানান, গৃহবধূ শিপ্রার আত্মহত্যা পেছনে যারা দায়ী তাদেরকে কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। অভিযুক্তদের আটকের জন্য জোর পুলিশী তৎপরতা চালানো হচ্ছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment