নার্সের দুর্ব্যবহারে হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে গাছতলায় সন্তান প্রসব করলেন মা

নার্সের দুর্ব্যবহারে হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে গাছতলায় সন্তান প্রসব করলেন মা

সন্তান প্রসবের কঠিনতম মুহূর্তে চিকিৎসাসেবা দূরে থাক ন্যূনতম মানবিকতাও পেলেন না তিনি। বাধ্য হয়ে গাছতলাতেই জন্ম দিতে হলো সন্তানের। সম্প্রতি এমনটাই ঘটেছে দিনাজপুরের এক গৃহবধূর সঙ্গে।

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোববার (১২ আগস্ট) ভোরে সন্তান প্রসবের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় প্রসব ব্যথায় কাতর রিনা পারভীনকে (৩৫)। কিন্তু ‘ডাক্তার নেই, এখানে চিকিৎসা হবে না’ বলে তাদের তাড়িয়ে দেন ওই হাসপাতালের দুই নার্স। এমনকি রিনার স্বজনরা একটু দেখার কথা বললেও তারা সেটা না করে উল্টো তাদের হাসপাতাল থেকে বের করে দেন।

উপায়ন্তর না দেখে রিনাকে নিয়ে অন্য হাসপাতালে যেতে চান স্বজনরা। কিন্তু প্রসব বেদনা এতটাই প্রবল ছিল যে ওই হাসপাতালের একটি গাছের নিচেই পিঁপড়ার বাসার ওপর একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেন রিনা।

এদিকে, এ ঘটনার প্রতিবাদে এলাকার শত শত মানুষ হাসপাতালটি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন। একই সঙ্গে তারা অমানবিক আচরণ করা বিশেষত সেবিকাদের শাস্তি দাবি করেছেন।

ঘটনার শিকার রিনা পারভীন পার্বতীপুর উপজেলার হামিপুর ইউনিয়নের বাঁশপুকুর গ্রামের বাসিন্দা রিকশাচালক আবু তাহেরের স্ত্রী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রসব বেদনা শুরু হলে রিনা পারভীনকে গতকাল ভোর সাড়ে ৫টায় ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। সে সময় হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। দায়িত্বরত নার্স রোজিনা আক্তার ও আফরোজা খাতুন প্রসব বেদনায় ছটফট করতে থাকা রিনাকে চেকআপ না করেই ‘এখানে হবে না’ বলে পার্শ্ববর্তী টিএম হেলথ কেয়ার এমদাদ-সিতারা কিডনি সেন্টারে নিয়ে যেতে বলেন। স্বজনরা অন্তত একবার প্রসূতিকে দেখার অনুরোধ জানালে ওই দুই নার্স তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। একপর্যায়ে প্রসূতি ও তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে জোরপূর্বক হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়।

হাসপাতাল থেকে বিতাড়িত হয়ে স্বজনরা প্রসূতিকে নিয়ে বিপাকে পড়ে যান। কারণ প্রচণ্ড ব্যথায় প্রসূতিকে নিয়ে কোথাও যাওয়ার মতো অবস্থা ছিল না। এ অবস্থায় স্বজনরা রোগীকে হাসপাতাল চত্বরের পূর্ব পাশে কামরাঙা গাছতলায় তড়িঘড়ি শুয়ে দেন। একপর্যায়ে সেখানেই খোলা আকাশের নিচে এক চা দোকানির স্ত্রীর সহযোগিতায় রিনা পারভীন একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেন।

প্রসূতিকে যেখানে রাখা হয় সেখানে পিঁপড়ার বাসা থাকায় পিঁপড়ার কামড়ে মা ও শিশুর শরীর ফুলে যায়।

বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকার শত শত মানুষ এসে হাসপাতাল ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করে। তারা এমন অমানবিক আচরণের জন্য দোষী নার্সদের শাস্তি দাবি করে।

খবর পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এসে দোষীদের শাস্তির নিশ্চয়তা দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। বর্তমানে সদ্যোজাত সন্তান নিয়ে মা রিনা পারভীন ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই চিকিৎসাধীন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment