জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলের জোট গঠন নতুন নয়। ক্ষমতাসীন দলের বিপক্ষে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একাট্টা হয়ে জোট গঠন করতে দেখা যায়। এবারো আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নড়েচড়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরেও জোট গঠনের তৎপরতা বেড়েছে। তবে সব জোটই কার্যত সরকারি দল আওয়ামী লীগ বিরোধী। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে ছিটকে ফেলাই হচ্ছে জোটের মূল লক্ষ্য। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সাবেক রাষ্ট্রপতি ও যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য গঠনের ডাক দিয়েছেন। বর্তমান সরকারের সময়কে দেশের ক্রান্তিকাল উল্লেখ করে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে আগামী মাস থেকে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন জোটের নেতারা। বি. চৌধুরী এবং ড. কামাল হোসেনের এ জোট নীতিহীন ও জনবিচ্ছিন্ন বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জোট গঠন নিয়ে ব্যস্ত নেতারা রাজনীতি থেকে ছিটকেপড়া। তাদের তৎপরতা সরকারের বিরুদ্ধে, সংসদের বিরুদ্ধে ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। এসব অসাংবিধানিক তৎপরতা, যার মূলে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। সেজন্য জোটের কার্যক্রমে নজর রাখবে দলটি। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তারা। দলটির নেতারা বলছেন, তাদের জোটের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। জোটের নামে তারা সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের ছক কষছেন। জোট গঠনের প্রক্রিয়া ও নেতাদের বক্তব্যে তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাসিম এমপি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হবে। তাদের জোটের সঙ্গে তৃণমূলের মানুষের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এরা জনবিচ্ছিন্ন। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন। এরা অনেক কথা বলবে, অনেক কথা জীবনে বলেছে, বাকি জীবনেও অনেক কিছু করার চেষ্টা করবে। এদের কথাবার্তা, সভা-সমাবেশ নিয়ে বিচলিত বা চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। তথ্য মতে, অনেক দিন ধরেই বিকল্পধারা, গণফোরামসহ কয়েকটি দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠনের গুঞ্জন চলছিল। এসময় যুক্তফ্রন্ট গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে বি. চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের মধ্যে মতবিরোধ ছিল। মূল নেতৃত্বে কে থাকবে, এটা ছিল বিরোধের কারণ। ওই সময়ে ড. কামাল হোসেন বিদেশে থাকাবস্থায় যুক্তফ্রন্ট গঠন করে চেয়ারম্যান হন অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। এরপর যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়। একই রেশে যুক্তফ্রন্টে যোগ দেয়ার কথা থাকলেও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও যোগ দেননি।সাম্প্রতিক সময়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মধ্যস্থতায় আবারো ঐক্যবদ্ধ হতে সম্মত হন ড. কামাল হোসেন। যার ফলশ্রুতিতে কামাল হোসেনের বাসায় অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে আরও অংশ নেন জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রব, বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। বৈঠকে জাতীয় ঐক্য গড়ার লক্ষ্যে ড. কামালকে যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে সাতটি প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। জাতীয় ঐক্যের ঘোষণাপত্র তৈরিতে একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া স্বাধীনতাবিরোধী দল ব্যতিরেকে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলসমূহ জোটে আনার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে নামার ব্যাপারে ঐক্যমত হন সকলেই। আর ওই আন্দোলনে পেছন থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সমর্থন বা সহায়তা দেয়ার বিষয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী নিশ্চয়তা দেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। বৈঠক শেষে যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে আমি বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছি। এ সময় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, নির্বাচন কমিশন দুর্বলতার পরিচয় দিয়েছে। তাই তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সেপ্টেম্বরে আমরা আন্দোলনে যাচ্ছি। গত মঙ্গলবারের বৈঠকে যোগ না দিলেও জাতীয় ঐক্যে থাকছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। গতকাল বৃহস্পতিবার মতিঝিলে গণফোরামের কার্যালয়ে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বৈঠকে মিলিত। বৈঠকে কাদের সিদ্দিকী জাতীয় ঐক্যে আসতে সম্মত হয়েছেন বলে সূত্রে জানা গেছে। এদিকে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জোট গঠন হলে সাধুবাদ জানাবে আওয়ামী লীগ। লোক দেখানো জোটের নামে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা হলে ছাড় না দেয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, যে কোনো গণতান্ত্রিক অহিংস আন্দোলনকে আওয়ামী লীগ স্বাগত জানায়। কিন্তু আন্দোলনের নামে নির্বাচন বানচাল বা দেশবিরোধী চক্রান্ত হলে প্রতিহত করা হবে। এজন্য জনগণের জানমাল রক্ষায় নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার পরামর্শ দেন তারা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেন, জাতীয় ঐক্যের নামে, আন্দোলনের নামে কেউ যদি সহিংসতার দিকে পা বাড়ায় তাহলে দেশের জনগণকে নিয়ে আমরা কঠিনভাবে সমুচিত জবাব দেব। অহিংস আন্দোলনে কোনো বাধা নেই, সহিংসতা করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জাতীয় ঐক্য প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, জোট করে তারা আন্দোলন করবেন। ভালো কথা। গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করার অধিকার সবার আছে। কিন্তু জোট বেঁধে আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।
আপনি আরও পড়তে পারেন
-
সরকারের লোকদের লুটপাটের খবর বের হতে শুরু করেছে : রিজভী
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে একটি লুটপাটের স্বর্গ দেশ বানাতে চাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র... -
বুয়েটে জঙ্গিবাদের সংশ্লিষ্টতা পেলে সরকার অ্যাকশনে যাবে: কাদের
March 31, 2024 নিউজ ডেস্ক Comments Off on বুয়েটে জঙ্গিবাদের সংশ্লিষ্টতা পেলে সরকার অ্যাকশনে যাবে: কাদেরআমি রাজনীতি করি, সে জন্য বুয়েটে আমি যেতে পারব না? এটা কোন ধরনের আইন? এমন প্রশ্ন... -
আমরা একটা দুঃসময় অতিক্রম করছি : মির্জা ফখরুল
আমরা একটা কঠিন ও দুঃসময় অতিক্রম করছি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।...