নম্বর আতঙ্কে দিশেহারা শিক্ষার্থীরা

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের দুই শিক্ষিকার ক্লাস বর্জন করেছে ওই বিভাগের দুটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা । পরীক্ষায় নম্বর কম দিয়ে রেজাল্টে ধ্বস  নামানোর অভিযোগ এনে ক্লাস বর্জন করেছে দুই ব্যাচের সকল শিক্ষার্থী ।

২০১৪-১৫ সেশন থেকে চালু হওয়া ফোকলোর বিভাগটিতে বর্তমানে ৪টি ব্যাচ রয়েছে । সম্প্রতি সেই বিভাগের ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের দুটি ব্যাচ বিভাগের দুই শিক্ষিকা নিগার সুলতানা ও আতিজা দীল আফরোজ এর ক্লাস বর্জন করেছে । একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সকল শিক্ষা গ্রহনে এই দুই শিক্ষিকার  ক্লাস আর করবেন না বলে ঘোষনা দিয়েছে তারা ।

দুই শিক্ষিকা ইনকোর্স পরীক্ষার  খাতায় নম্বর কম দেয়া ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সাথে বাজে ব্যবহার করা এর অভিযোগ তুলেছে শিক্ষার্থীরা । ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা দুই দফা দাবি জানিয়ে বিভাগীয় প্রধান বরাবর স্মারক লিপি জমা দেন । যেখানে দাবি গুলোর মধ্যে রয়েছে ১। অভিযুক্ত দুই শিক্ষিকার ক্লাসে যাবে না শিক্ষার্থীরা, ২। পরীক্ষার ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন  বা মিড ,এসাইনমেন্ট সহ কোর্সের পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে ।

এর আগেও ২০১৭ সালের ২১ মে বিভাগীয় প্রধান ড. মোঃ সাইফুল ইসলাম ও  তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহীত উল আলম এর কাছে অভিযোগ জানালেও তার কোন ফলাফল পায়নি শিক্ষার্থীরা । বরং তার প্রভাবে শিক্ষার্থীদের ফলাফলে প্রকাশ পেয়েছে দুই শিক্ষিকার ক্ষোভ এমনটায় জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা ।

বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ২য় বর্ষ ১ম সেমিস্টার এর ফলাফল এর দিকে লক্ষ্য করে দেখার আহ্বান জানালে দেখা যায় অন্যান্য কোর্সে তাদের ফলাফল জিপিএ ৩.০০-৩.৭৫ পর্যন্ত পাচ্ছে কিন্তু কোর্স নং ২০৩ ও ২০৫ এ অধিকাংশ শিক্ষার্থী জিপিএ ২.০০-২.৭৫ এর মধ্যে । যার দরুন প্রভাব পড়েছে সম্পূর্ন ফলাফলে । যেখানে সর্বোচ্চ ফলাফল হলো ৩.৪৫ যা একজন পেয়েছেন । অকৃতকার্য হয়েছেন ১০ জন  যার মধ্যে ২০৩ নং কোর্সে ৬ জন,  ২০৩ ও ২০৫ উভয় কোর্সে ৩জন এবং ২০২ নং কোর্সে ১ জন ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন- “দুই ম্যাম কি ক্লাস নেয় তা আমরা বুঝি না, ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সাথে বাজে ভাষায় কথা বলেন । নম্বর দিবে কি দিবে না তা তাদের বিষয় । নম্বর নিয়ে কথা বলা যাবে না। ক্লাসে ছেলে শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে বাজে ইঙ্গিতপূর্ন কথা বলেন যা সকল শিক্ষার্থীদের জন্য মানসিক ভাবে বিপর্যয়ের সামিল । দুইজনে মিলে আমাদের নম্বর নিয়ে খেলছে ,আমরা শিক্ষার্থীরা নম্বর আতঙ্কে ভুগছি ,আমরা মুক্তি চাই। সমস্যা সমাধানে উপচার্য স্যার এর দ্রুত সমাধান করবেন এমনটাই প্রত্যাশা করি আমরা”।

এবিষয়ে ফোকলোর বিভাগের প্রভাষক নিগার সুলতানা বলেন- আমার নামে এগুলো মিথ্যাচার । আমরা কেন এমন করবো? তারা তো আমাদের শত্রু না । ওরা ওদের সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসে না। আমাদের কাছে আসুক বলুক কি চায় তারা । উপাচার্য স্যার বিষয়টি দেখচ্ছে তাই আমি কিছু বলতে চাই না ।

শিক্ষার্থীদের একটি মতামত দুই ম্যাম যেন দুই নয় একই অংশ এই বিষয়ে জানতে চাইলে নিগার সুলতানা বলেন –যারা সঠিক তারা তো এক থাকবেই ।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন তিনি এবং পরিবারের পরিচয় প্রদান করে সাংবাদিকদের ভীত করার চেষ্টা করেন ।

২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের  শিক্ষার্থীরাও  একই সমস্যায় অভিযোগ এনে ক্লাস বর্জন করেছে । যতোক্ষন পর্যন্ত সমস্যার সমাধান না হবে তারা কোন ক্লাসে যাবে না বলে ঘোষনা দিয়েছে । পর্যবেক্ষন করে দেখা গেছে ঘোষণা অনুযায়ী ক্লাস থাকলেও ক্লাসে যায় নি শিক্ষার্থীরা ।

অন্যদিকে আতিজা দীল আফরোজ বলেন- “এটা আমার বা আমাদের সমস্যা না । আর তারা(শিক্ষার্থী) চাইলেই তো সব হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম আছে সেভাবেই সব হবে । ক্লাস করবে না তারা বললেই তো হবে না । আর শিক্ষার্থীদের সবাই এটা চাচ্ছে না। কয়েকজন শিক্ষার্থী আমার কাছে এসেছিলো তাদের জোড় করে  কয়েকজন রেখেছে বলে জানিয়েছে তারা। এ বিষয়ে উপাচার্য স্যার দেখবেন বলেছেন তাই আমরা এখন কিছু বলতে পারবো না ।

এবিষয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন বিষয়টি আমি শুনেছি । এটির সমাধান হবে ।

অভিযোগের পরো দৃশ্যমান সমাধান দেখা যায় নি ।

উল্লেখ্য নিগার সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃবিজ্ঞান ও আতিজা দীল আফরোজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর ফোকলোর বিভাগ থেকে  পড়াশোনা শেষে প্রভাষক হিসেবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন । যোগ দেয়ার বছরের মধ্যেই একাধিকবার তাদের নামে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ উঠে ।

ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ থাকায় সেশন জটের আশংকা করছে অনেকেই ।তাই সমস্যা দ্রুত সমাধানের আহ্বান সকলের ।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment