নবাবগঞ্জের বান্দুরায় সড়কে যানবাহনে চাঁদাবাজি

স্টাফ রিপোর্টার

. ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বান্দুরা বাসস্ট্যান্ড, ব্রীজ ও হাসনাবাদ সড়কে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন থেকে জোরপূর্বক চাঁদা করছে সংঙ্ঘবব্ধ একটি চক্র। এ নিয়ে যানবাহনের মালিকেরা প্রতিবাদ করে আসলেও তারা প্রতিকার পাচ্ছে না। ফলে প্রতিদিন প্রতিটি যানবাহনকে গুনতে হচ্ছে ২০-৫০ টাকা। এ ব্যাপারে প্রশাসনে নিশ্চুপ ভূমিকায় স্থানীয়রা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয়ভাবে জানা যায়, বান্দুরা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বাসটার্মিনালে ২০ শতাংশ সরকারী খালি জায়গা ব্যবহারের জন্য বাংলা ১৪২৫ সানের ইজারা নেন এন মল্লিক পরিবহনের মালিক নার্গিস মল্লিক। জায়গাটি এতো দিন তিনি বিনা ইজারায় ব্যবহার করছিলেন নিজের বাস টার্মিনাল হিসেবে। এখান থেকেই মুলত ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এন মল্লিক পরিবহনের বাস। কিন্তু এখান থেকে প্রায় ৩শ’ ফুট অদূরে বান্দুরা ব্রিজের উপরে দাড়িয়ে ইজারার কথা বলে সিএনজি, ইজিবাইক, ট্রাক, ভ্যান থেকে ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা আদায় করছে। কেউ যদি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায় তাহলে চাঁদা আদায়কারী লোকজন তাকে মারধর করে বলে অভিযোগ রয়েছে যানবাহন চালকদের। প্রতিদিন এখান থেকে অবৈধভাবে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। ভুক্তভোগিরা জানান, এন মল্লিক পরিবহনের মালিক নার্গিস মল্লিক ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ব্যবহার করে চাঁদা আদায় করছে। আর ইউনিয়ন যুবলীগ নেতারা নেপথ্যে থেকে কিছু শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে তাদের দিয়েই চাঁদা আদায় করছে। তাদের অধিকাংশের হাতে থাকে লোহার রড। দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার চলাচলকারী কোন যানবাহন যদি সেই পথ দিয়ে খালি গাড়ী নিয়ে যাতায়াত করলেও তাদের চাঁদা দিতে হয়। এ নিয়ে বিস্তুর অভিযোগ রয়েছে গাড়ীর চালকদের। এ ব্যাপারে দোহার উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ এলাকার ইসিবাইক চালক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, সময় অসময়ে আমাদের বান্দুরা যাওয়া লাগে কিন্তু সেখানে গেলেই ২০টাকা না দিলে নানাভাবে হয়রানি করে কর্মীরা। কোন সময় যদি টাকা না থাকে তাহলে লাঞ্চিত করা হয় গাড়ীর চালকদের। জানা যায়, এ সড়কে উপজেলার বেড়িবাঁধ, বারুয়াখালী, শিকারীপাড়া, জামসা, হাটিপাড়া এলাকার ৪০০-৫০০ ইজিবাইক প্রতিদিন নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলায় যাতায়াত করে। বান্দুরা এলাকা দিয়ে গেলে প্রতিটি ইজিবাইক থেকে দিনে ২০ টাকা করে আদায় করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকেও আসা সিএনজি চালিত থ্রি-হুইলার থেকে ৩০ টাকা, ট্যাক্সি ও ট্রাক থেকে ৫০ টাকা আদায় করা হয়। এ হিসেবে দৈনিক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকাভ যা মাসে প্রায় ৫-৬ লাখ টাকা আদায় করেন তারা। পেশী শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তারা কৌশলে এ কাজ করে আসছে বলে জানা গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, নার্গিস মল্লিকের পক্ষে সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াতকারী যানবাহন থেকে টাকা আদায় করছেন হাসনাবাদ এলাকার ইকবাল, মামুন ও চৈতন্ত সহ আরো দু-তিনজন। কেবল সেতুর ওপর নয়, আশপাশের এলাকায় নিজেদের দখলে নিয়ে চাঁদা আদায় করে। ফলে সেতু ও বাজার এলাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কেউ টাকা দিতে দেরি বা অস্বীকার করলে লাঞ্ছিত করা হয়। এভাবে প্রকাশ্যে দিনের পর দিন চাঁদা জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করলেও তা প্রতিরোধে দেখা যাননি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। একাধিক চালক অভিযোগ করেন, বর্তমানে পবিরহন ব্যবসা মন্দাভাব এর মধ্য আবার ২০ টাকা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। চালকদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জিত অর্থ টোলের নামে জোরপূর্বক আদায় করা হচ্ছে। ইজিবাইক চালক আরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা কিন্তু ব্রিজে স্ট্যান্ডও করি না। সরাসরি চলে যাই। তাহলে আমাদের টাকা দিতে হয়। এটা জুলুম ছাড়া আর কিছুই না। টাকা আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে বান্দুরা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. মাসুদ জানান, এন মল্লিক পরিবহনের কাছ থেকে আমরা একটি চুক্তির ভিত্তিতে তাদেরকে টোল আদায় করে দিচ্ছি। যদি সরকার এই লিজ বাতিল করে তাহলে আমরা আর টাকা তুলব না। এ ব্যাপারে এন মল্লিক পরিবহনের কর্ণধার নার্গিস মল্লিকের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। নবাবগঞ্জ ইউএনও তোফাজ্জল হোসেন বলেন, বাস ষ্টান্ড ব্যবহারের জন্য জমি ইজারা নিয়ে কেউ যদি অন্যায়ভাবে যানবাহন থেকে চাঁদাবাজি করে থাকে তাহলে তাদের বিরোদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment