ঢাকার ২০টি আসনে বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত!

ঢাকার ২০টি আসনে বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত!

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। রোববার থেকে বিভিন্ন আসনের প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়নের চিঠি দেয়া হচ্ছে। এদিক থেকে এখনও পিছিয়ে রয়েছে রাজপথের বিরোধীদল বিএনপি।

তারা আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন চিঠি ইস্যু না করলেও খসড়া তালিকা চূড়ান্ত করেছে। সেখানে রাজধানী ঢাকার ২০টি আসন ঘিরে নানা সমীকরণ দেখা গেছে। শরিকদের সঙ্গে শেষ মুহূর্তে দলটি চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে।

১৯৯১ সালের পর থেকে বিগত নির্বাচনগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যারা ঢাকার আসন নিজেদের দখলে রাখতে পেরেছে, তারাই সরকার গঠন করেছে। তাই এবারের নির্বাচনেও ঢাকার ২০টি আসনে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি।

জোট এবং ঐক্যফ্রন্টকে ছাড়া দিয়ে হলেও ঢাকার আসনগুলো ধরে রাখতে চাইছে প্রায় এক যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি।

১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকার মোট ১৩টি আসনের সবক’টিতেই জয় পেয়েছিল বিএনপি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ঘটে উল্টো। সবক’টি আসন পায় আওয়ামী লীগ। তারাই সরকার গঠন করে।

২০০১ সালের নির্বাচনে ১৩টির মধ্যে ৭টি আওয়ামী লীগ এবং ৬টি আসন পায় বিএনপি। ২০০৮ সালে আসন বেড়ে হয় ২০টি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৯টিতে জিতে সরকার গঠন করে। একটি আসন পায় তাদের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি। আর ২০১৪ সালের নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছিল।

আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচননে সেই হিসাব মাথায় রেখে বিএনপি প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করছে। যে কারণে একাধিক আসনে বিকল্প প্রার্থী রেখে নির্বাচনে প্রস্ততি নিচ্ছে দলটি।

এবার ঢাকা-১ আসনে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানের ধানের শীষের মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত। তিনি বর্তমানে ঢাকার জেলা বিএনপির সভাপতি। আগে তিনি ঢাকা থেকে তিনবার এমপি হয়েছেন।

ঢাকা-২ আসনে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানের মনোনয়ন পাওয়াটা সময়ের ব্যাপার। আসন ভাগ হওয়ার আগে ঢাকা-৩ থেকে তিনি দু’বার এমপি হয়েছেন। আমান ঢাকসুর দাপুটে ভিপি ছিলেন।

ঢাকা-৩ আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন। কোনো কারণে তিনি নির্বাচন করতে না পারলে, তার পুত্রবধূ দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায়কে দেয়া হবে। যদিও তিনি এখন কারাগারে রয়েছেন।

ঢাকা-৪ আসনে বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদের শক্ত ভিত রয়েছে। যে কারণে এখানে তাকে দেয়া হচ্ছে ধানের শীষের টিকিট। তবে বিকল্প হিসেবে তার ছেলে তানভির আহমেদ রবিনকেও রাখা হয়েছে।

ঢাকা-৫ আসনে ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির ভাইস-চেয়ারপাম্যান সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইসরাক হোসেন মনোনয়ন তুলেছেন। তাকেই হাই-কমান্ড সক্রিয় হিসেবে বিবেচনা করছেন। তবে বিকল্প হিসেবে ঢাকা মহানগর বিএনপি দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারও রয়েছেন।

গণফোরামের কার্যকরি সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ঢাকা- ৬ আসনে নির্বাচন করতে আগ্রহী। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সমীকরণ মেলাতে বিএনপি এ আসনে ছাড় দিতে পারে। তবে বিকল্প হিসেবে এখানে পেশাজীবী নেতা বিএনপির গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়াকে রাখা হয়েছে। একাধিক মামলা থাকায় দ্বিতীয় বিকল্প রয়েছেন মহানগর বিএনপি নেতা নবীউল্লাহ নবী।

বিডিআর বিদ্রোহের মামলায় কারাগারে থাকা অবস্থায় মারা যান নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু। ঢাকা-৭ আসনে তার স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনাকে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে। পিন্টু পুরাতন ঢাকা-৮ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে ঐক্যফ্রন্টের জন্য ছাড় দিলে এখানে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টুও প্রার্থী হতে পারেন।

ঢাকা-৮ আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে হাবীব-উন নবী খান সোহেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এবারের নির্বাচনেও তার নাম চূড়ান্ত তালিকায় রাখা হয়েছে। মামলায় বেড়াজালে বাদ পড়লে ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা হাবীবুর রশিদ হাবীবকে বিকল্প প্রার্থী রাখা হয়েছে। আবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসও এ আসনে মনোনয়ন তুলেছেন।

১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে ঢাকা-৬ থেকে নির্বাচিত হন মির্জা আব্বাস। এরপর এ আসন ভাগ হয়ে বড় একটা অংশ নিয়ে ঢাকা-৯ আসন করা হয়। এ আসনে মির্জা আব্বাসের মনোনয়ন চূড়ান্ত রয়েছে। তবে তিনি ঢাকা- ৮ আসন থেকেও দলীয় মনোনয়ন তুলেছেন।

ঢাকা-১০ আসনে আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসিমের নাম রাখা হয়েছে। এখানে বিকল্প প্রার্থী ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা রবিউল আলম রবি। এ আসনে নেতাকর্মীদের মধ্যে রবির ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।

ঢাকা-১১ আসনে এমএ কাইয়ুমের নাম রাখা হয়েছে। যদিও তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না।

ড. কামাল হোসেনের মেয়ে ব্যারিস্টার সারা হোসেন ঢাকা-১২ আসনে নির্বাচন করতে চান। এখানে বিএনপির মনোনয়ন তুলেছেন যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব।

গুরুত্বপূর্ণ তিন নেতার নাম শোনা যাচ্ছে ঢাকা-১৩ আসনে। এ আসছে এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালীর নাম রাখা হয়েছে। তবে ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালামও এ আসনে ধানের শীষের কাণ্ডারি হতে চান। এ ছাড়া কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর নাম শোনা যাচ্ছে। কারণ, তাকে ঢাকা আসনে নিয়ে তুলে আনতে চায় বিএনপি।

ঢাকা-১৪ আসনে এসএ খালেক আলোচিত প্রার্থী। তবে তার ছেলে এসএ সিদ্দীক সাজুর জন্য মনোনয়ন চান তিনি। ১৯৭৯ সালে প্রথমবার, সংসদ সদস্য হন তিনি। এরপর তিনি পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। খালেক সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ড. কামাল হোসেনও বিপুল ভোটে পরাজিত করেন।

জোট আর দলের সমীকরণে ঢাকা-১৫ আসন। এ আসনে দলের বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন এবং যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান দলীয় মনোয়ন তুলেছেন। এ ছাড়া ২০ দলীয় জোটের অন্যমত শরিক জামায়াতের শফিকুল ইসলাম ও লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান এ আসনে নির্বাচন করতে চান।

ঢাকা-১৬ আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত ছিল। কিন্তু, সম্প্রতি তিন বছরে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারান্তরীণ হওয়ায় বিকল্প হিসেবে তার স্ত্রী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. শাহিদা রফিকের নাম রাখা হয়েছে।

ঢাকা-১৭ আসনে মেজর (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী অনেকটা নিশ্চিত। এখানে ২০ দলীয় জোটের কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীমের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু, তিনি এখন পর্যন্ত রাজি নন।

নানা হিসাব-নিকাশ ঢাকা-১৮ আসনে। এখানে যুবদল উত্তরের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর মনোনয়ন তুলেছেন। কিন্তু, এ আসনে সাবেক সদস্য মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম বিএনপির মনোনয়নই তোলেননি। তবু তিনি আলোচনায়। এ ছাড়া জেএসডির তানিয়া রবও এ আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী।

ঢাকা-১৯ আসনে দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু বিএনপির টিকিট পাচ্ছেন। এর আগে তিনি ঢাকা-১৩ (পুরাতন) থেকে দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন।

পুরনো আসন বিন্যাসে ঢাকা-১৩ থেকে ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার ঢাকা-২০ আসনে তিনি পাচ্ছেন ধানের শীষের টিকিট।

ঘোষিত তফসিল অনুসারে, আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ২৮ নভেম্বর, ২ ডিসেম্বর যাচাই-বাছাই ও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন নির্ধারিত রয়েছে ৯ ডিসেম্বর।

https://www.youtube.com/watch?v=Iuwp-mgvggw&t=31s

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment