শরীয়তপুর-২ এ আ:লীগের প্রার্থী শামীম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থীর চিঠি পেয়েছেন  ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে আওয়ামী লগের েসাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম।

আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে প্রার্থীদের চিঠি দেওয়া শুরু করেছে দলটি। দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চিঠি বিতরণ করছেন।

গত ৯ নভেম্বর মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা নেওয়া শুরু করে অাওয়ামী লীগ। মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা নেওয়া চলে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত চলে।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ সংখ্যক ৪ হাজার ২৩টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে। যা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিক্রি হওয়া মনোনয়ন ফরম থেকে ১৪০০ বেশি।

এনামুল হক শামীম

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি  একেএম এনামুল হক শামীম বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের একজন ত্যাগী, জনপ্রিয় ও পরিশ্রমী শীর্ষনেতা। তৃনমূল পর্যায় থেকে শুরু করে দলের শীর্ষস্থান পর্যন্ত উনার গ্রহনযোগ্যতা প্রশ্নাতীত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা ও বঙ্গবন্ধুকন্যা  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাঙ্ক্ষিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার সংগ্রামে উনি দিনরাত নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বর্তমানে উনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন।

একেএম এনামুল হক শামীম ১৯৬৫ সালে শরিয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার পাইকবাড়িতে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। উনার পিতার নাম আলহাজ্ব মোহাম্মদ আবুল হাশেম মিয়া ও মাতার নাম বেগম আশরাফুন্নেসা। পেশাগত জীবনে উনার বাবা ছিলেন একজন প্রকৌশলী।  এনামুল হক শামীমের দাদা  আলহাজ্ব রওশন আলী ছিলেন একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং নানা  আব্দুল জলিল মুন্সী ছিলেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। বলা যায় ছোটবেলা থেকেই রাজনৈতিক আবহে বড় হয়েছেন তিনি।
স্কুলজীবনেই ছাত্ররাজনীতির হাতেখড়ি হয় এনামুল হক শামীমের। প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশ সত্ত্বেও জাতির পিতার আদর্শ বুকে নিয়ে যোগ দেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগে। ১৯৭৯ সালে নোয়াখালীর এমএ উচ্চবিদ্যালয়ে পাঠরত অবস্থায় উনি স্কুল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাশ করার পর উচ্চশিক্ষা লাভের ব্রত নিয়ে উনি ভর্তি হন ঐতিহ্যবাহী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে আরো নিবিড়ভাবে জড়িয়ে পড়েন তিনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে উনি ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের বিপুল ভোটে ১৯৮৯ সালে উনি জাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির পাশাপাশি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়েও উনার ছিলো সদর্প বিচরণ। ১৯৯০ সালে তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। সততা, আন্তরিকতা, কঠোর পরিশ্রম ও শেখ হাসিনার প্রতি বিশ্বস্ততার পরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে উনি ধীরে ধীরে উঠে আসেন ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে। ১৯৯২ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সহ-সভাপতি এবং ১৯৯৪ সালে উনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। শেখ হাসিনা সারাদেশের ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে ছাত্রলীগের পতাকাতলে নিয়ে আসার যে গুরু দায়িত্ব উনার উপর অর্পন করেন তা অত্যন্ত সফলতার সাথে তিনি পালন করেন। শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির বার্তা নিয়ে তিনি ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ছুটে বেড়িয়েছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।

মূলত উনার নেতৃত্বের গুণেই উনার মেয়াদকালে ৭৫ পরবর্তী সময়ে প্রথমবারের মত সারাদেশে ছড়িয়ে পরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জয় জয়কার। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইতিহাসে এনামুল হক শামীমের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে সবসময়। এখনো যেকোন রাজনৈতিক কর্মসূচীতে অংশগ্রহন করতে গেলে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা শ্লোগান দেন, ‘রাজপথের শামীম ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’, ‘ছাত্রলীগের শামীম ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’।

’৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং ’৯৬ এর খালেদাবিরোধী ‘জনতার মঞ্চ’ এর অন্যতম সংগঠক ছিলেন এনামুল হক শামীম। প্রগতিশীল রাজনীতির ধারক বাহক এনামুল হক শামীম বারবার প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত অবস্থায় হত্যার উদ্দেশ্য উনার উপর একাধিকবার হামলা চালানো হয়, প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর নিষ্ঠুর আঘাতে তাঁর কোমড় ভেঙ্গে যায়। মৃত ভেবে তাকে ড্রেনের মাঝে ফেলে রাখা হয়েছিলো। নেতাকর্মীদের অফুরান্ত ভালোবাসায় বলীয়ান হয়ে মৃত্যুকে জয় করে বারবার ফিরে আসেন তিনি রাজপথে।

২০০১-২০০৬ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে সারাদেশের আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে উনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যার ফলে উনার উপর নেমে আসে অত্যাচারের খড়গহস্ত। শতাধিক মামলার আসামী করা হয়ে উনাকে, একাধিক বার কারাবরণ করেন তিনি। ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলায় মারাত্মক ভাবে আহত হয়ে মৃত্যুর লড়াই থেকে ফিরে আসেন তিনি। গায়ে শতাধিক গ্রেনেডের স্প্লিন্টার প্রথমে রাজধানীর শিকদার মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। অবস্থার অবনতি হলে উনাকে ভারতের এপোলো হসপিটালে পাঠানো হয়। এখনো শরীরে গ্রেনেডের আঘাতের চিহ্ন ও স্প্লিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।

১/১১ এর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আওয়ামীলীগের সংস্কারপন্থীরা যখন জননেত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা ও বিরোধিতা করা শুরু করেন এবং ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলা বাস্তবায়ন করে দলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় মত্ত হন তখন তাদের এই হীন অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম প্রকাশ্য বিরোধিতা করেন একেএম এনামুল হক শামীম। শেখ হাসিনাকে যখন গ্রেফতার করা হয় তখন আওয়ামীলীগের অনেক শীর্ষ নেতা নিশ্চুপ থাকলেও  একেএম এনামুল হক শামীম সমমনাদের সাথে নিয়ে সারাদেশের ছাত্রসমাজ ও আওয়ামী অন্তঃপ্রান মানুষদের ঐক্যবদ্ধ করে নেত্রীর মুক্তির জন্য রাজপথে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি।

তৎকালীন সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্দেশে নিরাপত্তা বাহিনী তাঁকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। তৎকালীন সময়ে আওয়ামীলীগের অনেক হেভি ওয়েট নেতা তত্ত্ববধায়ক সরকারের নীল নকশা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করলেও জীবনের মায়া তুচ্ছ করে একেএম শামীম জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করতে অস্বীকৃতি জানান। এতে করে তৎকালীন সরকারের চক্ষুশূলে পরিণত হন তিনি। উনার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস পোড়ানোর মামলা সহ একাধিক মামলা করা হয়, মিথ্যা দুর্নীতির মামলা দায়ের করে দেশের প্রভাবশালী বিভিন্ন পত্রিকা ও মিডিয়াতে হুলিয়া জারি করা হয় উনার বিরুদ্ধে। উনার পরিবারের উপরও নেমে আসে নিষ্ঠুর নির্যাতন। উনার বাবা মায়ের ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হয়। সেনাবাহিনীতে কর্মরত উনার এক ভাইকে প্রাপ্য পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা হয়, চিকিৎসক অন্যভাইকেও নির্যাতন এড়াতে কর্মস্থল ত্যাগ করে পালিয়ে বেড়াতে হয়। এতোকিছু করেও উনাকে টলাতে না পেরে শেষপর্যন্ত দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। জননেত্রীর প্রতি আনুগত্য ও বিশ্বস্ততার এমন নজির সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একান্তই বিরল।

একেএম এনামুল হক শামীম ২০০২ থেকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অবজারভার মেমবার হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারীতে প্রথমবারের মতো এবং ২০১২ সালের ডিসেম্বরের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্য মনোনীত হন।
জনাব একেএম এনামুল হক শামীম একজন আজন্ম সংগ্রামী মানুষ। প্রচারবিমুখ এই নেতা প্রচারের আলো থেকে সচেতন ভাবে দূরে থেকে সর্বদা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে কাজ করে যাচ্ছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতিটি নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে হয়ে উঠেছেন বিশ্বস্ত সহচর। জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বিশ্বস্ততার সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের রাজনীতির জাতীয় পর্যায়ে উঠে এসেছেন তিনি। এমন বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের উদাহরন বর্তমানে বিরল।

একনজরে জনাব একেএম এনামুল হক শামীমের রাজনৈতিক জীবনঃ
১৯৭৯ : এ এম উচ্চবিদ্যালয় স্কুল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক
১৯৮৪ : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক
১৯৮৬ : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক
১৯৮৮ : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি
১৯৮৯ : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদ (জাকসু)’র ভিপি
১৯৯০ : বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য
১৯৯২ : বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি
১৯৯৪ : বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি
১৯৯৮ : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য
২০০২ : বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির অবজারভার মেম্বার
২০১২, ফেব্রুয়ারি : বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য (১ম বার)
২০১২, ডিসেম্বর : বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য (২য় বার)
২০১৬, অবস্যই ভাল অবস্থানে চলে আসবেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাবেক মন্ত্রী জননেতা আব্দুর রাজ্জাকের মৃত্যুর পরে শরীয়তপুরের মানুষ এনামুল হক শামীমকেই শরীয়তপুর আওয়ামীলীগের অবিভাবক হিসাবে জানে। তরুণ প্রজন্মের এই নেতাকে তারা সর্বদাই কাছে পেতে চায়।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment