বেদে ও হিজড়াদের জীবনমান উন্নয়নে ‘উত্তরণ ফাউন্ডেশন ও ভারতের ‘হাবিব ফাউন্ডেশন’এর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর

বেদে ও হিজড়াদের জীবনমান উন্নয়নে 'উত্তরণ ফাউন্ডেশন ও ভারতের ‘হাবিব ফাউন্ডেশন’এর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর

 মোহাম্মদ আব্দুস সালাম (রুবেল):

ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে (২৯ নভেম্বেব) বেদে ও হিজড়াদের জীবনমান উন্নয়নে ‘উত্তরণ’ ফাউন্ডেশন ও ভারতের জাবেদ হাবিব ফাউন্ডেশন চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর সাংবাদিক সম্মেলন উত্তরণ ফাউন্ডেশন সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান শায়ক লিখিত আকারে বক্তব্য পাঠ করেন। বেদে জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি উত্তরণ ফাউন্ডেশন পিছিয়ে পড়া হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নেও নানাবিধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। এদের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪টি বিউটি পার্লার, ৩টি ডেইরি ফার্ম, বুটিক হাউস, মিনি গার্মেন্টস ও টেইলার্স স্থাপন করা হয়েছে। এতে প্রায় শতাধিক সদস্য তাদের নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন। উত্তরণ ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী এম এম মাহবুব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বখ্যাত হেয়ার এক্সপাট ও হাবিব ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা জাভেদ হাবিব, উত্তরণ ফাউন্ডেশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান শায়ক, পরিচালক ও পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি বিধান ত্রিপুরা, পরিচালক ও গাজীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, পরিচালক মোহাম্মদ এনামুল হক খন্দকার, পরিচালক মোঃ রমজান আহম্মেদ, আর্টিসান আউট ফিটার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী আহম্মেদ রাসেল, হাবিব ফাউন্ডেশনের হেড অব ফ্রেন্সাইজি কোহিনূর মন্ডল, যমুনা ব্যাংকের হেড অব মার্কেটিং নূর নবী খান, তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের মধ্যে অনন্যা, শাম্মী, নিশাত, আলেয়া, সজীব, ঝুমা, চৈতীসহ প্রমুখ। উত্তরণ ফাউন্ডেশন সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান শায়ক উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। ২০১৪ সালে তৎকালীন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার ও বর্তমান ডিআইজি (প্রশাসন ও শৃঙ্খলা) হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম পিছিয়ে পড়া বেদে ও হিজড়া (তৃতীয় লিঙ্গ) জনগোষ্ঠীর আর্থিক এবং সামাজিক জীবনমান উন্নয়নের লক্ষে উত্তরণ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন প্রতিষ্ঠানটি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের গণমাধ্যমের প্রচার প্রচারণায় সরকারসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আজ উত্তরণ ফাউন্ডেশনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, ফলে সাভারসহ সমগ্র বাংলাদেশের কর্মবিমুখ ও অচ্ছুত বেদে জনগোষ্ঠী বিগত সাড়ে চারশো বছরের গ্লানিময় জীবন থেকে বেরিয়ে আসার স্বপ্ন দেখার সাহস পাচ্ছেন। উত্তরণ ফাউন্ডেশন পিছিয়েপড়া হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নেও নানাবিধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে, যার মধ্যে ঢাকার আশুলিয়া ও সাভারে, মানিকগঞ্জ সদরে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি করে মোট ৪টি ‘উত্তরণ বিউটি পার্লার’ স্থাপন করা হয়েছে, ঢাকার কামার পাড়ায়, গাইবান্ধার ডেভিড কোম্পানি পাড়ায় এবং রাজবাড়ী সদরে একটি করে মোট ৩টি ডেইরি ফার্ম স্থাপন করা হয়েছে যেখানে প্রায় ৫০ জন সদস্য তাদের নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন। ঢাকার উত্তরার ডিয়াবাড়ীতে মিনি গার্মেন্টস, উত্তরা রাজউক মার্কেটে টেইলার্স, তুরাগ থানা এলাকায় টেইলার্স এবং ধামরাই বাজারে একটি বুটিক হাউজ স্থাপন করা হয়েছে যেখানে ইতোমধ্যে ৫০ জনেরও অধিক সদস্য কাজ করে যাচ্ছেন। হিজড়াদের সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে বলেন, তারা জ্ঞানে, দক্ষতায় এবং মেধা-মননে মূল ধারার জনগোষ্ঠীর থেকে কোন অংশেই কম নয়। শুধুমাত্র শারীরীক গঠনের কারণে আজ তাদেরকে পরিবার ও সমাজ আর দশ জনের মত মেনে নিতে পারছে না। হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্যগণ সমাজের জন্য বোঝা নয়। তারা কারো না কারো ঘরেরই সন্তান। সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক কারণে তারা আজ তাদের নিজের সন্তান থেকে দূরে থাকছেন। আমাদের মত একই রক্ত মাংসের মানুষ হয়ে হিজড়ারা নানান সামাজিক বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন, যেমন- তাদেরকে কেউ বাসা ভাড়া দিতে চায় না, হিজড়া জনগোষ্ঠীর অনেকের মধ্যে দৃষ্টিকটু আচরনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। অথচ আমাদের একটু ভালবাসা ও সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাবই উত্তরণ ফাউন্ডেশনের বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোর অর্জিত সফলতা যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হতে পারে। সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে বলেন, ২০১৩ সালে রাষ্ট্র তাদেরকে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে মর্যাদা প্রদান করেছে, পাশাপাশি সরকার এই জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বেশকিছু কার্যক্রমও হাতে নিয়েছেন। কিছুদিন আগে আমরা লক্ষ করেছি যে, তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদেরকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বুকে টেনে নিয়েছেন। সরকারের এই মহতি মনোভাবকে তিনি হিজড়াদের ভাগ্য পরিবর্তনের ইতিবাচক দিক হিসেবে মনে করেন এবং উত্তরণ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান শায়ক আজকের সংবাদ সম্মেলেনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে উপস্থিত বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বলেন, উত্তরণ ফাউন্ডেশনের অগ্রযাত্রায় আপনাদের মত অনেককেই বন্ধু ও শুভাকাঙ্খী হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বিশ্বখ্যাত হেয়ার এক্সপার্ট, প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতের নাগরিক তথা আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু মি: জাভেদ হাবিব। জাবেদ হাবিব ফাউন্ডেশন এর সাথে চুক্তি স্বাক্ষর হয় বছরে দুইজন হিজড়াকে তারা ভারতের হাবিব ফাউন্ডেশন নিয়ে প্রশিক্ষণ প্রধান করবেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment