ইতিহাস গড়া জয়ে হোয়াইটওয়াশ উইন্ডিজ

মিরপুরে ২-০ এর লক্ষ্য নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টটি খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম টেস্ট জয়ের পর এই স্বপ্ন আকাশ কুসুম কল্পনা ছিল না মোটেও। মিরপুরে একাধিক রেকর্ড গড়ে জয় তুলে নিয়ে প্রতিপক্ষকে সিরিজে ২-০ তেই হারাল বাংলাদেশ। মিরপুরে ক্যারিবীয়দের বাংলাদেশ হারিয়েছে ইনিংস ও ১৮৪ রানে। নিজেদের ইতিহাসে এই প্রথম প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করল টাইগাররা।

২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদেরই মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। সেবারও টাইগারদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। এবার বাংলাদেশের মাটিকে কুপোকাত দলটি। তবে সেবার দ্বিতীয় সারির দল বলে একটি অপবাদ ছিল। কিন্তু এবার সেই অপবাদ থেকেও মুক্তি বাংলাদেশের।

আগে ব্যাট করে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৫০৮ রান করে স্বাগতিকরা। বিপরীতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যায় মাত্র ১১১ রানে। বাংলাদেশ পায় ৩৯৭ রানের বিশাল লিড। ফলো অনে পড়ে উইন্ডিজ। প্রতিপক্ষকে এই প্রথম ফলো অনে করার স্বাদ টাইগারদের।

ফলো অনে নেমেও বদলায়নি ক্যারিবীয়দের ভাগ্য। টাইগারদের স্পিনারদের দংশণে নীল হতে হয়েছে। দ্বিতীয় ইনিংসে দলটি গুটিয়ে গেছে ২১৩ রানে।

চট্টগ্রামে আড়াই দিনে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। উইন্ডিজ আসলে ব্যাকফুটে চলে যায় তখনই। যেখান থেকে ঘুড়ে দাঁড়াতে বা সিরিজ বাঁচাতে লিখতে হতো দুর্দান্ত কিছু। কিন্তু বাংলাদেশ যে হোম কন্ডিশনের সুবিধা নিয়ে প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করতে তাতিয়ে ছিল আগে থেকেই।

মাস পাঁচেক আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে টেস্টে নাজেহাল হতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। দুই ম্যাচের সিরিজ হোয়াইটওয়াশ হয় টাইগাররা। নিজেদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানে অল আউট হওয়ার ঘটনাও ঘটে সেই সফরে।

প্রথম টেস্টেই ৪৩ রানে অল আউট হয়ে যাওয়ার লজ্জায় কি ঘোর অমানিশাই না নেমে এসেছিল তখন। প্রথম টেস্টে ইনিংস ও ২১৯ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টেস্টে হারে ১৬৬ রানে। তবে ওই সফরেই ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি সিরিজ নিজেদের করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সাদা পোশাকের ক্ষতে কি আর প্রলেপ পড়েছিল তাতে?

কোনো ব্যর্থতা হয়তো ঢেকে যায় না কখনোই। বাংলাদেশ ক্যারিবীয় সফর, বা উপমহাদেশের বাইরে টেস্ট ম্যাচের চ্যালেঞ্জটা নিতে পারছে না সেভাবে। যেটা নিজেদের উন্নতির জন্য কাজ করার বড় ক্ষেত্র অবশ্যই। কিন্তু প্রতিপক্ষের মাঠে গিয়ে গিয়ে অসহায়ত্ব ফুঠে উঠলেও, নিজেদের মাঠে এখন অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডকেও ছাড় দিতে রাজি নয় বাংলাদেশ।

বরং নিজেদের পাওয়া জ্বালাগুলোই ফিরিয়ে দিতে চায় সব সময়। তাই তো একে একে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, উইন্ডিজের মতো দল কুপোকাত বাংলাদেশে এসে। হোম কন্ডিশনের পূর্ণ সুবিধা নিয়ে কিভাবে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেওয়া যায়, সেই জিনিসটা রপ্ত করেছে বাংলাদেশ দারুণভাবে।

উপমহাদেশ সব সময়ই ছিল স্পিনারদের স্বর্গ রাজ্য। বাংলাদেশ তেমনই বা-হাতি স্পিনারদের উর্বর ভূমি। সাকিব-তাইজুলদের সঙ্গে এখন অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ বিশ্বমানের হিসেবে পরিচিত করেছেন নিজেকে। এই সিরিজেই আরেক অফ স্পিনারকে দেখেছে বিশ্ব। অভিষেকে সবচেয়ে কম বয়সে ৫ উইকেট নিয়ে রেকর্ড গড়েছে নাঈম হাসানের। সাকিব-তাইজুল-মিরাজ-নাঈম বাংলাদেশের স্পিন চতুষ্টয়েই এবার পুড়ে ছাই উইন্ডিড।

মিরাজ প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেট নেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসেও নিলেন ৫ উইকেট। গড়লেন একাধিক রেকর্ড। চার স্পিনারের ম্যাচে এক মিরাজের কাছেই যেনে পারভূত উইন্ডিজ।

অবশ্য এই জয়ে ব্যাটিংটাও হয়ে থাকবে স্মরণীয়। যেখানে মাহমদুউল্লাহ তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটি মনে রাখবেন আজীবন। সাকিব আল হাসান, লিটন দাসের ব্যাটিংও থাকবে স্মরণীয় হয়ে।

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment