ইয়েমেনে বড় পেশা জঙ্গি চাকরি

ইয়েমেনে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ২০১৫ সাল থেকে হুথিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে সৌদি জোট। সৌদি আরব আকাশ থেকে বিমান হামলায় লণ্ডভণ্ড করছে ইয়েমেন।

এ জঙ্গি বাহিনীর চাকরি এখন দেশটিতে সবচেয়ে বড় ও লোভনীয় পেশা। ইয়েমেনের শহরে শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো সামরিক ক্যাম্প বসিয়েছে তারা। নির্যাতন, গুম, হত্যা- এমন কোনো অপকর্ম নেই তারা করছে না।

সব মিলিয়ে সৌদি-আমিরাতের সহায়তায় ইয়েমেনে খাকি পোশাকধারী জঙ্গিদের রামরাজত্ব চলছে। শুক্রবার দ্য গার্ডিয়ান এক বিশেষ প্রতিবেদনে ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধের ভয়াবহ এ চিত্র তুলে ধরেছে।

২০১১ সালে দেশটির দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট আলি আবদুল্লাহ সালেহ তার ডেপুটি আবদরাব্বু মানসুর হাদির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হন। কিন্তু হুথি বিদ্রোহী ও ইয়েমেনি সেনাদের অধিকাংশ সালেহ সমর্থিত।

মানসুর হাদির বিরুদ্ধে হুথিদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেয়ার অভিযোগ করা হয়।

হাদি সমর্থিত বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করে হুথিরা। ২০১৪ সালে হাদিকে বের করে দিয়ে সানার দখল নেয় তারা। পরবর্তীতে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন হাদি।

অন্যদিকে, দক্ষিণের বিদ্রোহীরা স্বাধীনতার জন্য নড়াচড়া শুরু করে। ইয়েমেনের এমন বিশৃঙ্খলার সুযোগে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ আরব সাগর ও লোহিত সাগরের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টায় নামে আরব আমিরাত।

হুথিদের দমনের নামে স্থানীয় জঙ্গি, সালাফি যোদ্ধা, দক্ষিণের বিদ্রোহীদের ব্যক্তিগত সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দিচ্ছে আমিরাত। হত্যার আসামি আয়মান আসকার চার বছর আগে জেলে ছিল। মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল তার।

বর্তমানে আসকার ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর এডেনের একটি জেলার প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা। ইয়েমেন সরকার ও আরব আমিরাত তাকে এ পদে নিয়োগ দিয়েছে। অথচ কয়েক দিন আগেও সে আলকায়দা সদস্য ছিল।

জেলে থাকাকালে একটি দোকান পরিচালনা করত আসকার। সেখান থেকেই আলকায়দার সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা যখন সানার দখল নেয় তখন দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

এই সুযোগে জেল থেকে পালায় আলকায়দার জঙ্গিরা। তাদের সঙ্গে ছিল আসকার। তার জঙ্গি বন্ধুদের সঙ্গে আরব আমিরাতের গড়া ‘জঙ্গি সেনাদলে’ যোগ দেয় সে। অল্প সময়ের মধ্যেই লুটপাট, গুম, নির্যাতন, হত্যায় অভিজ্ঞ হয়ে ওঠে। বেপরোয়া সেনা থেকে কমান্ডার পদে উন্নীত হয় আসকার।

আসকারের মতো দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের হাতে ইয়েমেনকে শাসন করছে আরব আমিরাত। দেশটির ছোট বড় সব শহর এখন জঙ্গিদের দখলে। ভারি মেশিন গান নিয়ে শহরে শহরে টহল দিচ্ছে তারা। ইয়েমেনে প্রায় ২ লাখ সেনা। তাদের বেশির ভাগই বেতনভোগী নন। এ সেনাদের বাইরে ‘ভুতুড়ে সেনা’ রয়েছে।

তাদের বেতন সরকারি সেনা কর্মকর্তাদের চেয়েও বেশি। আরব আমিরাত অর্থ ঢেলে এ জঙ্গি সেনাদের নিয়োগ দিয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই, ইয়েমেনে হুথিদের দমনের নামে আরব সাগর ও লোহিত সাগরের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।

গত সেপ্টেম্বরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইয়েমেনি কমান্ডার বলেন, আমরা আশা করেছিলাম জঙ্গিদের দিয়ে এভাবে দেশ শাসনের মতো বোকামি থেকে আরব আমিরাতের বাধা দেবে সৌদি আরব। কিন্তু তারা তা করেনি।

তিনি আরও বলেন, ‘ইয়েমেন যুদ্ধ তার নিজস্ব গতিতে নেই। দক্ষিণে কী ঘটছে এতে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment