গণতন্ত্র একদলীয় হয় না: ইসি মাহবুব

গণতন্ত্র একদলীয় হয় না: ইসি মাহবুব

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কমিশনে এখন পর্যন্ত আত্মবিশ্লেষণমূলক আলোচনা হয়নি বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেছেন, গণতন্ত্র কখনো একদলীয় হয় না। বহুদলীয় না হলে গণতন্ত্র রূপ লাভ করে না।

আগারগাঁওস্থ নির্বাচন নির্বাচন ভবনে ২য় পর্যায়ে উপজেলা নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্রিফিং অনুষ্ঠানে এমন কথা বলেন তিনি।

ইসি মাহবুব রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করে ব্রিফিং অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার প্রতি বলেন, ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। নববসন্তের এই সকালে আপনাদের জানাই ফল্গুনী শুভকামনা। আজ ভালোবাসা দিবস। ভালোবাসা দিবসে আপনাদের জানাই অফুরন্ত ভালোবাসা। এর পরই তিনি ‘এবারের উপজেলা নির্বাচন সর্বোতভাবে অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় তা কৌলিন্য হারিয়েছে’বলে মন্তব্য করেন।

বলেন, গণতন্ত্র কখনো একদলীয় হয় না। বহুদলীয় না হলে গণতন্ত্র রূপ লাভ করে না। এ জন্য নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়ার বিষয়টিতে সর্বদা গুরুত্ব আরোপ করা হয়। তবে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়া নিতান্তই প্রাথমিক প্রাপ্তি। নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য হতে হয়। এ দুটি শব্দের পরিমাপক জনগণ, যারা নির্বাচন করেন তারা নয়। এই প্রেক্ষাপট মনে রেখে আগামী উপজেলা নির্বাচন যাতে নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার প্রতি জনগণকে অধিকতর আস্থাশীল করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, নির্বাচন হতে হবে সুষ্ঠু ও শুদ্ধ। বিতর্কিত বা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কখনও কাম্য নয়।

ইসি মাহবুব বলেন, ১৯৭১ সালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যাত্রা শুরু হয়েছিল। নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় বা স্থানীয় বিভিন্ন স্তরে জনপ্রতিনিধি বেছে নেয়াই হলো অভীষ্ট লক্ষ্য। নির্বাচনই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায়। নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র সংরক্ষিত ও পরিপালিত হয়।

বিশেষত, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা সকল কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন অভিপ্রেত। এ জন্য উপজেলা, এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পর্যন্ত গণতান্ত্রিক কাঠামোতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমান ব্যবস্থায় উপজেলা পরিষদ যেভাবে দায়িত্ব পালন করার কথা, তা সম্ভব হচ্ছে না। এখানে অন্য কারও খবরদারি বা নিয়ন্ত্রণ থাকার কথা নয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, উপজেলা পরিষদ জেলা পরিষদের অধীনস্থ নয়। কথাটা এ জন্য বলছি যে, উপজেলা পরিষদ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী না হলে এর নির্বাচনও গুরুত্বহীন হয়ে পড়া স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে বিচারপতি খায়রুল হক ও বিচারপতি ফজলে কবীর প্রদত্ত ২০০৮ সালের রায়টি বাস্তবায়িত হলে উপজেলা পরিষদ পরিপূর্ণ স্বায়ত্বশাসিত রূপ লাভ করবে এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও অধিকতর গৌরবমন্ডিত হবে।

তিনি বলেন, আমরা সবাই বলে থাকি নির্বাচন আইনানুগ হতে হবে। কথাটার কিছু ব্যাখ্যা প্রয়োজন। নির্বাচন আইনানুগ হওয়ার অর্থ সবার সম অধিকার ও সবার প্রতি সম আচরণ নিশ্চিত করা। এ জন্য আপনাদের কঠোর নিরপেক্ষতা অবলম্বন করতে হবে। কোনো প্রকার ভয়-ভীতি চাপ, লোভ বা প্রলোভনের কাছে আপনারা নতি স্বীকার করবেন না। নিজের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থেকে সাহসিকতার সঙ্গে আপনারা দায়িত্ব পালন করুন। অনেক অপ্রত্যাশিত সমস্যা আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারে। আইনের কাঠামোর মধ্যে থেকেই আপনাদের তা মোকাবেলা করতে হবে। আইন কখনও সমস্যা সৃষ্টি করে না, সমাধান দেয়। আইনের ব্যত্যয়ই সকল সমস্যার মূল কারণ। যারা নির্বাচনের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করছেন, তারা প্রতি পদক্ষেপে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন, এটাই প্রত্যাশা।

আলোচিত নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার আরও বলেন, প্রসঙ্গত আরেকটি কথা বলতে চাই। বর্তমান কমিশনের কার্যকালে অনেকগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সদ্যসমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়াও ৭টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এসব নির্বাচনে আপনার সবাই অংশগ্রহণ করেছেন। এসব নির্বাচনের সাফল্য ও ব্যর্থতা সম্পর্কে আপনারা সম্যক অবিহিত। নির্বাচন কমিশনে এখন পর্যন্ত নির্বাচনগুলোর সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়ে আত্মবিশ্লেষণমূলক আলোচনা হয়নি। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আপনারা সাফল্য ও ব্যর্থতার যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন, তা থেকে পরবর্তী পর্যায়ের নির্বাচনগুলোর ভুলগুলো শুধরে নেয়ার বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন। নির্বাচনের ব্যর্থতাই কেবল যাচাই হবে তা নয়, যেসব বিষয়ে সাফল্য অর্জিত হয়েছে, সেসব বিষয়গুলো যাতে আগামী নির্বাচনগুলোতে অক্ষুন্ন ও অব্যাহত থাকে, যাতে হারিয়ে না যায়, সে সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।

রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের উদ্দেশ্যে ইসি মাহবুব বলেন, আপনারা আসন্ন পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনের মূল শক্তি। আপনাদের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা আছেন। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে সর্বাঙ্গীন সুন্দর গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়ার মূল দায়িত্ব আপনাদের। মনে রাখতে হবে যে, নির্বাচন কমিশন সরাসরি নির্বাচন করে না। নির্বাচনকালে আপনারাই প্রকারান্তরে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালন করেন। আপনাদের সাফল্যের ওপরই নির্বাচন কমিশনের সাফল্য নির্ভরশীল।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment