রাজ্জাকের ‘বোধোদয়’ কৌশল কি না, প্রশ্ন রাজনীতির অঙ্গনে

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাঁড়িয়ে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে যিনি আইনি লড়াই চালিয়েছেন, সেই আব্দুর রাজ্জাক একাত্তরে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা নিয়ে আপত্তির কথা জানিয়ে দল ত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

জামায়াতের দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী বিএনপির পাশাপাশি আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টি ও ওয়ার্কার্স পার্টির কয়েকজন নেতা বলেছেন, ব্যারিস্টার রাজ্জাকের এই বিলম্বিত বোধোদয়কে তারা ‘ইতিবাচক’ হিসেবেই দেখতে চান।

তবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল এবং দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে আদালতে যাওয়া তরিকত ফেডারেশন বলছে, রাজ্জাকের এতদিনের অবস্থান থেকে তার জামায়াত ছাড়ার ঘোষণা ‘অবিশ্বাস্য’।

অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টায় এটা জামায়াতের কোনো কূটকৌশল কি না- সেই প্রশ্নও এসেছে রাজনীতিবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে।  

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অবশ্য জামায়াতের একজন আইনজীবীর দল ছাড়ার খবরকে গুরুত্ব দিতে চাইছে না। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী ওই দলের নিষিদ্ধ হওয়ার অপেক্ষায় আছেন তারা।

জামায়াতের জ্যেষ্ঠ নেতাদের প্রধান আইনজীবী হিসেবে তিন বছর মামলা লড়ার পর ২০১৩ সালে হঠাৎ করেই দেশ ছাড়েন যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্বধারী রাজ্জাক। সেখান থেকেই শুক্রবার দলের আমি ম কবুল আহমদের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন তিনি।   

সেখানে তিনি লিখেছেন, একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করার জন্য জামায়াতে ইসলামী ‘জনগণের কাছে ক্ষমা না চাওয়ায়’ এবং একবিংশ শতাব্দির বস্তবতার আলোকে দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনকে বিবেচনায় এনে ‘দলের সংস্কার করতে’ ব্যর্থ হওয়ায় তার এই সিদ্ধান্ত। 

একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের স্বাধীনতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করতে রাজাকার, আলবদর, আলশামস নামে বিভিন্ন দল গঠন করে জামায়াত নেতারা লিপ্ত হয়েছিলেন যুদ্ধাপরাধে।

সে সময় হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের মত অপরাধের দায়ে জামায়াতের সাত শীর্ষ নেতার সাজা হয়েছে আদালতে, তাদের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে।

একাত্তরের সেই ভূমিকার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বানে কখনোই সাড়া দেননি জামায়াত নেতারা। রাজ্জাকের আগে আর কেউ দলের সেই অবস্থানের জন্য অনুতাপও কখনও প্রকাশ করেননি।

পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেছেন, “যে কোনো রাজনৈতিক দল, ইতিহাসের কোনো এক পর্বে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ত্রুটি-বিচ্যুতির শিকার হতে পারে। কিন্তু তাকে ক্রামাগত অস্বীকার করে, সেই সিদ্ধান্ত ও তার ফলাফল মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অনড় অবস্থান বজায় রাখা শুধু অগ্রহণযোগ্যই নয় বরং আত্মঘাতী রাজনীতি। তা কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।”

তার ভাষায়, একাত্তরের ভূমিকার জন্য জামায়াত জাতির কাছে ক্ষমা চাইলে তা হবে একটি ‘ঐতিহাসিক অর্জন’।

ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দল জামায়াতের কাঠামোগত সংস্কারের দাবি নিয়েও এর আগে এত স্পষ্ট বক্তব্য দেননি দলটির কোনো নেতা।

১৯৮৬ সালে দেশে ফিরে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে সক্রিয় রাজ্জাক বলেছেন, “কয়েকটি দেশে ইসলামি মূল্যবোধের ভিত্তিতে গঠিত মধ্যমপন্থি দলগুলো সফলতা অর্জন করেছে। এই পরিবর্তনের বাতাস যদিও এখনও বাংলাদেশের গায়ে লাগেনি, কিন্তু সময় এসেছে আমাদের পূর্বপুরুষের তৈরি ইসলামি রাষ্ট্রের ধারণায় কোনো পরিবর্তন আনা যায় কি না, তা নিয়ে নতুন প্রজন্মের গভীরভাবে চিন্তা করার।”

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment