‘খেলনা চাই না, বাবা তুমি সুস্থ হয়ে যাও’

‘খেলনা চাই না। খাবার চাই না। বাবা শুধু তুমি সুস্থ হয়ে যাও। তুমি ভালো হয়ে বাসায় ফিরে আসো।’ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের লবিতে দাঁড়িয়ে এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে আকুতি জানাচ্ছিল ১১ বছরের নাজির হোসেন। আর ভাইয়ের মুখের দিকে করুণ চাহনি তিন বছরের বোন নূরজাহানের। সে হয়তো কিছুই বুঝতে পারছে না, কিন্তু মা আর ভাইয়ের কান্না তাকেও ছুঁয়ে যাচ্ছে।

চকবাজারের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে সেখানে ভর্তি আছেন তাদের বাবা জাকির হোসেন (৪০)। দুই সন্তানকে নিয়ে বার্ন ইউনিটের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে ছুটছেন জাকিরের স্ত্রী খাদিজা বেগম। কিছুক্ষণ পর পর শাড়ির আঁচলে মুছছেন চোখের জল।

তাদের সঙ্গে আসা আবুল বাশার সান্ত¡না দিয়ে খাদিজাকে কাঁদতে নিষেধ করছেন, কিন্তু কিছুতেই শাসন মানছে না চোখের জল। বিড়বিড় করে কেবল বললেন, ‘আমি তো কাঁদি না।’ অথচ এ কথা বলার সময়ও তিনি চোখ মুছলেন। জাকিরের স্বজন বলতে তার স্ত্রী-সন্তান আর ‘পরিচিত এক ভাই’ আবুল বাশার। তার সঙ্গেই ছোট্ট নূরজাহান কোলে, আর মায়ের হাত ধরে হাঁটছে নাজির। চলতে চলতেই কথা হয় আবুল বাশারের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘পরিবারে জাকির ছাড়া তো উপার্জন করার মতো কেউ নেই। তার কিছু হলে পরিবারটির কী অবস্থা হবে তা তো বুঝতেই পারছেন।’ আবুল বাশার জানালেন, তিনি জাকিরের রক্তের কেউ নন। এমনকি তার রক্তের সম্পর্কের কোনো আত্মীয় আছে কিনা সে সম্পর্কেও জানেন না। মাত্র ১০ বছর বয়সে টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় আসেন জাকির। থিতু হন পুরান ঢাকায়।

কৈশর-তারুণ্য কেটেছে সেখানেই। মানুষের সাহায্যে ধীরে ধীরে কাজ শিখে ফেলেন তিনি। ভালো আয় রোজগারও হতে থাকে। এখানে এসেই পরিচয় হয় আবুল বাশারের সঙ্গে। সেই থেকে বাশারই জাকিরের ভাইয়ের মতো। একপর্যায়ে আরমানিটোলার মেয়ে খাদিজাকে বিয়ে করেন। তাদের কোল আলো করে আসে নাজির আর নূরজাহান। আত্মীয়স্বজনের কোনো খোঁজ না জানলেও সুখের সংসার ছিল জাকিরের। কিন্তু চুড়িহাট্টার আগুন ফিকে করে দিতে বসেছে সেই স্বপ্নের রঙ।

ঘটনার দিন ইসলামবাগের এক বাসা থেকে আরমানিটোলায় নিজের বাসায় ফিরছিলেন জাকির। পথে চুড়িহাট্টায় আগুনের কবলে পড়েন। শরীরের ৩৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে তার। খাদিজা আমাদের সময়কে বলেন, ‘রাত ৯টার দিকে ছেলেটার সঙ্গে উনার (জাকির) কথা হয়। তখন ছেলেকে বলেন বিরিয়ানি আর খেলনা নিয়ে আসবেন। এ জন্য ছেলেমেয়ে দুজনই জেগে ছিল, কিন্তু মধ্যরাতেও আর ফেরেননি।’ স্বামীর এমন অবস্থার খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে আসেন খাদিজা। চিকিৎসা সবকিছু সরকারি খরচে হচ্ছে।

প্রথম দুবার আসার টাকা থাকলেও এখন হাত একেবারে শূন্য। খাদিজার বাবার বাড়ি কেরানীগঞ্জে। তাদের আর্থিক অবস্থাও তেমন ভালো নয়। এদিকে গতকাল অগ্নিকা-ের ঘটনায় দগ্ধ ৯ জনকেই বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শংকর পাল আমাদের সময়কে বলেন, ‘এখনো আমরা কাউকে আশঙ্কামুক্ত বলতে পারছি না।’শেয়ার ফেসবুক

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment