আগামী বৃহস্পতিবার ডিএনসিসি’র ভোটগ্রহণ

আগামী বৃহস্পতিবার ডিএনসিসি’র ভোটগ্রহণ

ঢাকার উত্তর সিটি কর্পোরেশনে (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপ-নির্বাচন ও ঢাকার দুই সিটির সম্প্রসারিত ৩৬টি ওয়ার্ডের সাধারন কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের প্রচারণা মঙ্গলবার মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে। আর বৃহস্পতিবার এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

এরইমধ্যে ভোটের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে এনেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওইদিন ডিএনসিসিতে সাধারণ ছুটিও ঘোষণা করা হয়েছে। তবে স্থানীয় সরকারের অন্যতম প্রতিষ্ঠান রাজধানীর এই দুই সিটি নির্বাচনকে ঘিরে কোনো আগ্রহ নেই ভোটারদের মাঝে। পরশু ভোট অনুষ্ঠানের কথাও অনেক ভোটার জানেন না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. আতিকুল ইসলাম ছাড়া উল্লেখ করার মতো কোনো প্রচারণাও নেই আর কারও।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের আড়াই বছর পর ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেয়র আনিসুল হক মারা গেলে আসনটি শূন্য হয়ে পড়ে। মেয়র পদে শূন্য আসনে উপনির্বাচন ও দুই সিটির ৩৬টি নতুন ওয়ার্ডে সাধারণ নির্বাচন করতে ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি ইসি ডিএনসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণের কথা ছিল।

কিন্তু গত বছরের ১৭ জানুয়ারি এই নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিতের আদেশ দেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি স্থগিতের আদেশ খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। এরপর গত ২২ জানুয়ারি ইসি নতুন তফসিল ঘোষণা করে।

প্রথমবার উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল কিন্তু ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ২৮ ফেব্রুয়ারির এই নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও তাদের সতির্থরা। দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে এবার মোট মেয়র প্রার্থী ৫ জন। আওয়ামী লীগ থেকে আতিকুল ইসলাম, জাতীয় পার্টি থেকে শাফিন আহমেদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি থেকে আনিসুর রহমান দেওয়ান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টির শাহীন খান ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রহিম।

এদিকে ঢাকা উত্তর সিটির ২০টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৪০ জন ও সংরক্ষিত ৬টি ওয়ার্ডে ১ জন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১৮টি ওয়ার্ডে ২৬ জন ও সংরক্ষিত ৬টি ওয়ার্ডে ১ জন প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে। ফলে, চূড়ান্তভাবে ডিএনসিসিতে ২০টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ১২০ জন এবং ৬টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর প্রার্থী ৪৪ জন। আর ডিএসসিসি’র ১৮টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ১২৩ জন এবং ৬টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর প্রার্থী ২৪ জন। সবমিলিয়ে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি নির্বাচনে ৩৮টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ২৪৩ জন। দুই সিটিতে ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিল পদে প্রার্থীর সংখ্যা ৬৮ জন।

আগ্রহ নেই ভোটারদের; তৎপরতা নেই প্রার্থীদের ঢাকার দুই সিটির এই ভোটকে ঘিরে ভোটারদের মাঝে কোনো আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। একই সাথে অংমগ্রহণকারী প্রার্থীদের তৎপরতাও চোখে পড়ার মতো না। সরেজমিনে ঢাকা উত্তরের বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চারদিকে শুধুই আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামের ব্যানার-পোস্টার। দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আতিকুল ইসলামকেও উত্তরের ভোটারদের সঙ্গে নিয়মিত মত বিনিময় করতে দেখা গেছে। এদিকে জাতীয় পার্টি থেকে মেয়র প্রার্থী ব্যান্ডশিল্পী শাফিন আহমেদের নির্বাচনী প্রচারণা তেমনটা চোখে না পড়লেও মানিকদী, মাটিকাটা, ইসিবি চত্বর, গুলশানে তার নির্বাচনী পোস্টার দেখা গেছে। অন্য তিন প্রার্থী যেন উধাও হয়ে গেছেন। না আছে তাদের কোনো পোস্টার, আ না আছে কোন প্রচারণা।

স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোটের মাঠে তারা শুধু আওয়ামী লীগের প্রার্থীকেই পেয়েছেন। বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনে অন্য যারা আছেন তারা নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে খুব একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। তাই ভোট নিয়েও জনগণের মধ্যে আগ্রহ কম। ঢাকা উত্তর সিটির মিরপুর এলাকায় বেশ কয়েকজন ভোটার জানান, কোনো প্রার্থী তাদের এলাকায় ভোট চাইতে যাননি। এলাকায় কোনো মিছিল মিটিংও হয়নি। তারা শুধু জানেন ভোট হবে। তবে কবে হবে নির্দিষ্ট তারিখ জানাতে পারেননি দিনমজুর এসব ভোটার। একই সিটির মগবাজার মধুবাগ এলাকার বেশ কয়েকজন ভোটার জানান, শক্ত বিরোধী দল না থাকায় এই ভোট নিয়ে আগ্রহ নেই কারও। তারা মনে করেন, নির্বাচনে যেহেতু বিএনপি নেই, তাই এই ভোটে কোনো লড়াই হচ্ছেনা। ফলে প্রার্থীদেরও তৎপরতা নেই, ভোটারদেরও আগ্রহ নেই।

এদিকে উত্তর সিটিতে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টির মেয়র প্রার্থী শাহীন খান বলেন, নির্বাচন নিয়ে জনগনের কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। সদ্য সমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনের পর ভোটের ব্যাপারে মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ওদের কথা হলো, রাতেই যদি ভোট হয়ে যায়, তবে প্রার্থীকে ভোট দিয়ে কী লাভ? এবার ভোটকেন্দ্রে ৫ শতাংশ মানুষও ভোট দিতে যাবে না বলে মন্তব্য করেন এই প্রার্থী।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment