মেনোপোজ হলে স্বামীর সঙ্গে মেলামেশা করা যায় যেভাবে: ডা. কাজী ফয়েজা

মেনোপোজ হলে স্বামীর সঙ্গে মেলামেশা করা যায় যেভাবে: ডা. কাজী ফয়েজা

ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার

একটা মেয়ের বয়স যখন ১২- ১৩ তখন তাঁর মাসিক শুরু হয়। বয়স ৫২ বা তার কাছাকাছি সময়ে গিয়ে মাসিক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। যদি পুরো এক বছর মাসিকটা বন্ধ থাকে, তখনই আমরা বলি ওই নারী মেনোপোজে গেছে।   

একটা সময় মানুষের ধারণা ছিল, মেনোপোজ হলো মানেই নারীর সব শেষ। আমাদের দাদী-নানীদের সময় এমনটাই মনে করা হতো। তাদের (মেনোপোজ) জীবনে আর কোন আনন্দ, প্রাপ্তি, প্রত্যাশা নেই। তখন অনেকে স্বামীর সঙ্গে বিছানাও আলাদা করে ফেলত।

কিন্তু এখনকার লাইফস্টাইল ভিন্ন। এখনকার মেয়েরা তাদের দাম্পত্য জীবনটাই শুরু করে চল্লিশের দিকে। ফলে ৫২ – তে তারা মেনোপোজে আগের মতো অক্ষম হয়ে যায় না। এখন তারা চায় সাপ্লিমেন্ট।

অর্থাৎ তারা এমন কোন কিছু চায় যা তাদের জীবনটাকে উপভোগ করতে পারে। আমাদের দেশের চাইতে বিদেশে এটা আরো বেশী প্রকট।

 

বিদেশে মেনোপোজ হলে নারীরা সব করছে। তাদের কোন কিছু থেমে নেই। তারা খুব এ্যাক্টিভ। এজন্যই এই ট্রিটমেন্ট অপশনগুলো এখন এসেছে।

মেনোপোজ হলে কিছু শারীরিক পরিবর্তন দেখা দেয়। যেমন যোনিপথ শুষ্ক হয়ে যায়। ফলে তখন তারা স্বামী কিংবা সঙ্গীর সঙ্গে শারীরীক মিলন করতে পারে না। করলেও প্রচুর ব্যথা অনুভব করে।

একজন নারীর মাসিক চলাবস্থায় তার শরীরে হরমোনের একটা সাপোর্ট থাকে। কিন্তু মেনোপোজ হওয়ার পর তার শরীরে হরমোনের সেই সাপোর্ট যেহেতু থাকে না, তখন তারা খুব ঘন ঘন প্রসাবের ইনফেকশনে ভোগেন।

 

এমন অবস্থায় নারীরা আমাদের ( ডাক্তার) কাছে আসে। আমরা তাদের কিছু ট্রিটমেন্ট দিই। ট্রিটমেন্টের মধ্যে কিছু নন হরমোনাল ট্রিটমেন্ট আছে। আবার কিছু আছে হরমোনাল ট্রিটমেন্ট। হরমোনাল ট্রিটমেন্টে খুব তাড়াতাড়ি তাদের সমস্যাগুলো সমাধান হয়।

কিন্তু হরমোনাল ট্রিটমেন্ট খুব বেশি দিন কন্টিনিউ করা যায় না। কারণ, এই ট্রিটমেন্টে স্ট্রোক হওয়ার, হাইপার টেনশান বাড়ানোর,  ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

এজন্য আমরা ছ`মাস বা এক বছরের জন্য খুব বম ডোজে এই ওষুধ দিয়ে থাকি। এরপর যখন রোগী তার সমস্যাগুলো নিয়ে অভ্যস্ত হয়ে যায় তখন আমরা তাকে নন হরমোনাল ওষুধ ব্যবহার করতে বলি।

এর মধ্যে অন্যতম হলো সে খাবার দাবারে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। শাকসব্জি ও পানি বেশি খেতে হবে। রিচ ফুড ( পোলাও, মাংস জাতীয় খাবার) খাওয়া যাবে না। রোজ ব্যায়াম করতে হবে। ব্যায়ামের মধ্যে ইয়োগা, ভারোত্তোলন- এগুলো করা ভালো। তবে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন ব্যায়াম ভুলেও করা যাবেনা।

 

এ সময় সূর্যস্নান করা ভালো। এর ফলে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম ধারণ করতে পারে। ফলে হাড় শক্ত হবে। আর আমরা তাদেরকে সাপ্লিমেন্টারী ক্যালসিয়াম মুখে দিয়ে থাকি। অন্তত ১৫০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম মুখে খাবে। সঙ্গে যদি ক্যালসিয়াম রিচ খাবার খায় সেটা আনো ভাল। এগুলোর ফলে হাড় ভাল থাকে।

আর যোনিপথের পিচ্ছিলতার জন্য আমরা তাদেরকে কিছু জেলী ব্যবহার করতে বলি। এর ফলে যোনিপথ পিচ্ছিল হয়। ফলে দাম্পত্য জীবন সুখী হয়। আর ইউরিন ইনফেকশানের জন্য আমরা তাদেরকে এন্টিবায়োটিক দিয়ে রাখি। এভাবেই মেনোপোজাল নারীদের আমরা চিকিৎসা দিই।

শরীর- স্বাস্থ্যের সব নিয়ম মেনে চলুন। জীবনকে উপভোগ করুন।

**লেখক: ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার, এমবিবিএস, এফসিপিএস, এমসিপিএস। কনসালটেন্ট, ইমপালস হাসপাতাল ও সহকারী অধ্যাপক, গাইনী, প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment