দুটি কেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাই : ৫টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহন স্তগিত

 কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : ১০-০৩-১৯

কুড়িগ্রামে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহন শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনায় ৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহন স্তগিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে, উলিপুর উপজেলায় হোকোডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মদিনাতুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসা, সদরের শিবরাম প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাগেশ^রীর কুটি নাওডাঙ্গা ফোরকানিয়া এবতেদায়ী মাদ্রাসা এবং রৌমারীর যাদুরচর ইউনিয়নের ধনার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। এসব কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগে ভোটগ্রহন স্তগিত করা হয়। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি হতাশাজনক। ভোট কেন্দ্র এবং এর চারপাশে নেই কোন কোলাহল। কেন্দ্রগুলোতে সকল প্রার্থীর এজেন্টও পাওয়া যায়নি। সকাল ১০টা পর্যন্ত বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়। উলিপুরের হোকোডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’র প্রিজাইডিং অফিসার আবু বকর সিদ্দিক জানান, ৭নং বুথে একদল দুস্কৃতকারী হামলা চালিয়ে একটি ব্যালট বাক্স, চেয়ারম্যানের ১টি এবং দুই ভাইস চেয়ারম্যানের ২টি ব্যালট বই ছিনতাই করে নিয়ে যায়। সকাল ৯টায় ১০ মিনিটের দিকে এ ঘটনা ঘটে। অপরদিকে মদিনাতুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসা কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মিজানুর রহমান জানান, সকাল ১০টা ৫ মিনিটের দিকে এই কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে বেশ কিছু ব্যালট বই ছিনতাই করে নিয়ে যায়। পরে কিছু উদ্ধার করা সম্ভব হলেও ২শ’ বই উদ্ধার করা সম্ভব হয় নাই। এদিকে নাগেশ^রীর কুটি নাওডাঙ্গা ফোরকানিয়া এবতেদায়ী মাদ্রাসা কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার সাদিকুর রহমান জানান, ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে মহিলা ভাইসচেয়ারম্যানের ব্যালট পেপার ছিনতাই করে সিল মারার অভিযোগে এবং সদর উপজেলার শিবরাম প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সকাল ১১টার দিকে একদল দৃস্কৃতকারী ৭নং বুথে ঢুকে সকল ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্সে ঢোকান। এরপর আমাকে চাপ সৃষ্টি করেন আরো ব্যালট পেপার দেওয়ার জন্য ফলে বাধ্য হয়ে এই কেন্দ্রে ভোট গ্রহন স্তগিত করা হয়। এছাড়াও রৌমারীর যাদুরচর ইউনিয়নের ধনার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুস্কৃতকারীর ৫শ’ ব্যালট পেপার ছিনতাই করে জোর করে বাক্সে ঢোকানোর চেষ্টা করলে ভোট গ্রহন স্তগিত করা হয়। সরজমিন সকাল সোয়া ৯টায় কুড়িগ্রাম আলিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে গিয়ে ভোটার শূন্য অবস্থা পরিলক্ষিত হয়। এখানকার প্রিজাইডিং অফিসার আবু নছর বকসী জানান, এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ৪৬০টি। বুথ ৭টি। এখানে ৭নং বুথে ভোট পরেছে মাত্র ৩টি। কারো কোন এজেন্ট নেই। ৫নং বুথে ৮টি এবং ৪ নং বুথে ৫টি ভোট পরেছে। বেশিরভাগ বুথে সব প্রার্থীর এজেন্ট নেই। সকাল ৯টা ৪০ থেকে ৯টা ৫১ মিনিট পর্যন্ত ৮নং পশ্চিম কবিরাজপাড়া নুরানী তালিমুল কোরআন ও হাফিজিয়া মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, এই কেন্দ্রের ৮নং বুথে মাত্র ১টি ভোট পরেছে। ১নং বুথে পরেছে সর্বোচ্চ ৩৫ ভোট। এখানকার প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল হাই জানান, এই কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ হাজার ৪১৭জন। বুথ ১২টি। এখন পর্যন্ত গড় ভোটের সংখ্যা ১৩ দশমিক ৫৫জন। বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহন চলছে বলে দাবি করেন রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও সকল প্রার্থীর সমান সুযোগ করার পরও ভোটার উপস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। উল্লেখ্য, দেশে পঞ্চম বারের মত উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জেলার ৮টি উপজেলায় ৩টি পৌরসভাসহ ৬৭টি ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ১৪ লাখ ২০ হাজার ৬০৭ জন। এরমধ্যে নারী ভোটার ৭ লাখ ২১হাজার ৭৫৩জন এবং পুরুষ ভোটার ৬লাখ ৯৮হাজার ৮৫৪জন। মোট ৬৬১টি কেন্দ্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৩৭৮টি কেন্দ্র চিহ্নিত করেছে আইনশৃংখলা বাহিনী। মোট ভোট কক্ষ রয়েছে ৪ হাজার ২০টি। নির্বাচনে ২৪ জন চেয়ারম্যান, ৩৬জন ভাইস চেয়ারম্যান এবং ২৭জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৮৭জন। শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহনের জন্য জেলায় বিজিবি ১৮ প্লাটুন, আনসার ও ভিডিপি ৮ হাজার ৫৫৬জন এবং পুলিশ-র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃংখলা বাহিনী মোট ১১ হাজার ২১৩জন। এছাড়াও ২৭জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইন শৃংখলা বাহিনী নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায় বিলুপ্ত ছিটমহল দাশিয়ারছড়াকে ইউনিয়ন ঘোষণার দাবিতে হাইকোর্টে রীটের প্রেক্ষিতে স্তগিতাদেশ প্রদান করায় এই উপজেলায় নির্বাচন স্তগিদ করা হয়।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment