অভিজিৎ হত্যা মামলায় মেজর জিয়াসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

অভিজিৎ হত্যা মামলায় মেজর জিয়াসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় হত্যা ঘটনায় চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াসহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

ঢাকা মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনসারীর আদালতে গতকাল বুধবার এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম।

মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৫ মার্চ দিন ধার্য রয়েছে।

শাহবাগ থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক নিজাম উদ্দিন বিষয়টি বৃহস্পতিবার পরিবর্তন ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।

মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ৩৪ জনকে।

সাদেক আলী ওরফে মিঠুসহ ১৫ জনকে অব্যাহতির আবেদন করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তকারী কমকর্তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুমতির জন্য নথি পাঠান।

মেজর জিয়া ছাড়া অপর আসামিরা হলেন— মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, আকরাম হোসেন ওরফে আবির, মো. মুকুল রানা ওরফে শরিফুল ইসলাম ওরফে হাদী, মো. আরাফাত রহমান, শফিউর রহমান ফারাবি।

মেজর জিয়া ও আকরাম হোসেন পলাতক রয়েছেন।

এর মধ্যে মেজর জিয়াকে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী এবং ফারাবিকে উসকানি বা প্ররোচদানকারী হিসাবে শানাক্ত করা হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কমকর্তা এ হত্যাকাণ্ডে ১১ জন জড়িত ছিল বলে

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন। কিন্তু সঠিক নাম ঠিকানা না থাকায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেন।

অভিযোগপত্রে আরো বলেন, যাদের মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাদের পূর্ণ নাম-ঠিকানা পেলে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের মধ্যে ৭ জন জামিনে আছেন। জামিনপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন— জাফরান হাসান, সাদেক আলী মিঠু, জুলহাস বিশ্বাস, আমিনুল মল্লিক, তহিদুল রহমান সামা, সিফাত ওরফে ইফরান ও আবুল বাসার।

আবুল বাসার গত ২০১৬ সালের ২৭ নভেন্বর মারা গেছেন। কারাগারে আছেন —আবুল সবুর সাদ ওরফে রাজু, অমিনুল হাসান শামীম, শফিউর রহমান ফারাজী, আবু সিদ্দিকি সোহেল, মোজাম্মেল হোসেন নাইমুল, শামীম তারেক ও মান্না ইয়াহিয়া। কারাগারে থাকা অবস্থায় গত ২০১৭ সালের ২ নভেন্বর মান্না ইয়াহিয়া মারা যান।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, অভিজিৎ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মেজর জিয়া। অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিনজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, অন্যান্য আলামত বিশ্লেষণ ও তদন্তে প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণাদি

সবকিছু মিলে স্পষ্ট হয়েছে মেজর জিয়ার জড়িত থাকার বিষয়টি।

হত্যার দায় স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন তিনজন। তারা হলেন— মোজ্জামেল হোসেন সায়মুন, আবু সিদ্দিক সোহেল ও আরাফাত হোসেন শামস।

এতে আরো বলা হয়, অভিজিৎ রায় যুক্তরাষ্ট্রে থাকতেন। তিনি কবে দেশে আসবেন তা তালাশ করেন জঙ্গিরা। অভিজিতের বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে গোপনে খোঁজ করতে থাকেন কবে দেশে ফিরবেন তিনি। তারা প্রকাশনী ও পরিবার সূত্রে জানতে পারে যে, অভিজিৎ বইমেলার সময় অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ফিরতে পারেন। সে লক্ষ্যেই তারা রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে তাদের কথিত মারকাজ বা বাড়ি ভাড়া নিয়ে অবজার্ভ করতে থাকে। একপর্যায়ে তারা নিশ্চিত হয় অভিজিৎ রায় দেশে ফিরেছে। এরপর থেকে তারা নিয়মিত বইমেলায় যাতায়াত করতে থাকে। ২০১৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে তারা অভিজিৎকে রেকি করতে থাকে। ২২ ফেব্রুয়ারি জাগৃতি প্রকাশনীর সামনে তারা অভিজিৎকে দেখতে পায়। ওইদিন স্ত্রীকে নিয়ে অভিজিৎ রায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যায় বার-বি-কিউ পার্টিতে। যে কারণে তাদের মিশন সেদিন সাকসেস হয়নি। এরপর ২৩, ২৪ ও ২৫ তারিখেও তারা ফলো করেছে। ২৬ তারিখে তারা হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। এদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে অভিজিৎ তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে টিএসসির উত্তর-পূর্ব পাশে যান। তখন আনসারুল্লার অপারেশন শাখার চারজন অভিজিৎকে কুপিয়ে জখম করেন। বাধা দেওয়ায় স্ত্রীকে আঘাত করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জঙ্গি নেতা মেজর জিয়া, সেলিম, আকরাম, হাসান ও মোজাম্মেল।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment