জগন্নাথপুরে ধান কাটার শ্রমিক সংকট,কৃষি বিভাগের বার্তায় কৃষকরা হতাশাগ্রস্থ

মোঃ হুমায়ুন কবীর ফরীদি, জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
জগনন্নাথপুরের নলুয়ার হাওর সহ ছোট-বড় সবকটি হাওরে এবার বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে।হাওর গুলোতে ইতিমধ্যে  ধান কাটা শুরু হয়েছে। হাওরে হাওরে পাকা ও আধা পাকা ধান মৃদূ বাতাসের আলিঙ্গনে দুলছে। মনোমুগ্ধকর পরিবেশ আর ধানের মৌ মৌ গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।  উপজেলার কিছু সংখ্যক হাওরে আগুল্যা জাতের কিছু ধান কাটা শুরু হলেও অত্র এলাকায় দেখা দিয়েছে ধান কাটার শ্রমিক সংকট।এবং জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক কৃষকদের দেওয়া এক বার্তায় অত্র এলাকার কৃষকগন হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন।
সরেজমিন হাওর ঘুরে আলাপকালে জানাযায়,  সুনামগঞ্জ জেলাধীন জগন্নাথপুর উপজেলার সর্ববৃহৎ  নলুয়ার হাওর সহ ১৫টি ছোট-বড় সবকটি  হাওর গুলোতে সবুজের ডগায় ধানের এ সোনালী রং আর মৌ মৌ ঘ্রান সর্বত্র  মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরী হলেও এখন পর্যন্ত ধান কাটার শ্রমিক যোগাড় করতে পারেননী বেশীর ভাগ কৃষকরা।শ্রমিকের সন্ধানে বিভিন্ন জেলায় খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। উপজেলার নলুয়ার হাওর এলাকার কলকলিয়া ইউনিয়নের বালিকান্দী নিবাসী জহিরুল হক বলেন, যদিও ধান কাটার কিছু শ্রমিক বিভিন্ন এলাকা থেকে ইতিমধ্যে এসেছেন। তা  তুলনামূলক ভাবে অনেক কম। যেখানে চাষাবাদকৃত জমির কৃষক (মালিক)এর ২০/ ২৫ জন ধান কাটার শ্রমিকের প্রয়োজন। উপজেলার নলুয়ার হাওর পাড়ের কৃষক কলকলিয়া ইউনিয়নের বালিকান্দী নিবাসী দীপু মিয়া বলেন জমির ধান কাটা শুরু করেছি পর্যাপ্ত সংখ্যক শ্রমিক না থাকায় শংকায় আছি।আকাশের যে অবস্থা কখন জানি কি হয়।একই অভিমত ব্যাক্ত করে অনেক কৃষক বলেন,ধান কাটার শ্রমিক এখনেো পাইনি।বিভিন্ন এলাকায় যোগাযোগ করছি।শ্রমিকরা আসার কথা বলেছে তাদের আশায় বুক বেধে আছি। ওরা আসলে মনে কিছুটা হলেও শান্তি পাব।কেননা ইতিমধ্যে কালবৈশাখী ঝড়-তুফান আর শিলা বৃষ্টি শংকিত করে ফেলেছে। অন্তরে ভয়,কখন জানি কি হয়।
কৃষকরা একান্ত আলাপকালে আরো জানান দেশের পাবনা,খুলনা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, রংপুর সহ তাহিরপুর উপজেলার লাউরগড় এলাকার শ্রমিক ধান কাটার কাজ করত। স্থানীয় ভাবেও গ্রুপে গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ধান কাটে শ্রমিকরা। এসব শ্রমিকদের সাথে যোগাযোগ করেও শ্রমিক জোগাড় করতে পারছেন না বেশীর ভাগ কৃষক।তারা আরো বলেন,সবে মাত্র ধান পাকতে শুরু করেছে।কিছু কিছু জমির ধান কাটা হচ্ছে। এরই মধ্যে কৃষি  বিভাগের লোকজন জানিয়েছেন ১৭ই এপ্রিল এর মধ্যে ধান কাটতে হবে। কারন হিসাবে জিজ্ঞাসা করিলে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা বলেন,পরে নাকি   লাগাতার বৃষ্টিপাত হওয়ার সংবাদ তাদের নিকট রয়েছে। তাই কৃষকরা হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান মজুমদার বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে বার্তা দেওয়া হয়েছে আগামী ১৭ ই এপ্রিল থেকে লাগাতার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বিরাজমান। তাই নলুয়া, পিংলা ও মই হাওরে বড় সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে দিয়েছি।যাতে কৃষকরা দ্রুত পাকা ধান গোলায় তুলে নেন।এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উপজেলার   সর্ববৃহৎ নলুয়ার হাওর সহ ছোট বড়  ১৫ টি হাওরে ২০ হাজার ৭ শত ২৩ হেক্টর জমিতে ধান চাষাবাদ হয়েছে। এবার আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে কোল্ড ইনজুরির ফলে ধানের উপর প্রভাব পড়েছে। তাই আগে যারা ধান লাগিয়েছেন সেই ধান গুলোই চিটা হয়েছে। বিশেষ করে ২৮ ও ৫৮ ধানে চিটা হয়েছে। হাইব্রিড, শক্তি, হীরা, সুপ্রিম ও ২৯ ধানের ফলন ভাল হয়েছে। হাওরের ৫০ভাগ ধান পেকে গেছ।
উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের  সদস্য কৃষক মোঃ তারা মিয়া বলেন, এ বছর ১৫/১৬ কেদার জমি আবাদ করেছি। ধান কাটার শ্রমিক না পেয়ে আত্মীয় স্বজন নিয়ে নিজেই ধান কাটতেছি। সর্দারগণ ধান কাটার শ্রমিক সংকট দেখিয়ে কৃষকদের কাছে বাড়তি মজুরি ও সুবিধা দাবি করছেন।
এমনকি নিরুপায় হয়ে অনেক কৃষক ৫০০/৬০০ টাকা দৈনিক মজুরী দিয়ে ধান কাটছেন।
উপজেলার হাওর পারের চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের চিলাউড়া গ্রামের কৃষক ডালিম মিয়া বলেন, আমি ৬ হাল বোরো জমি করেছি এখন পর্যন্ত ধান কাটার বেপারি বা শ্রমিক পাইনি। নেত্রকোণার এক পার্টির সাথে আলোচনা করেছি তারা ৬/৭ শতটাকা দৈনিক মজুরী  চায়। সব সময় ৭ ভাগা ধানে ধান কাটলেও এখন বেপারি না পাওয়ায় বেশী টাকা দাবি করছে। শ্রমিক না পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছি।
একদিকে শ্রমিক জোগাড়ের চেষ্টায় কৃষকরা বিভিন্ন জায়গায় ধরণা দিচ্ছেন অন্যদিকে তাদের কষ্টার্জিত ফসল ঘোলায় তোলার জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন। তারা ধান শুকানোর জন্য খলা তৈরী, মাড়াই মেশিন মেরামত করা, ধান বহন করার জন্য বস্তা, উড়া, দুছুন,  সহ গৃহস্থালির সকল উপকরণ ঠিকটাক করে রাখছেন কৃষকগণ।
এদিকে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর  হাওর রক্ষা বেড়ীবাঁধ গুলো সময় মত ও সঠিক ভাবে হওয়ায় কৃষকরা কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment