মেয়রহীন নির্বাচনের ব্যয় ১১ কোটি টাকা

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (এমসিসি) নির্বাচন আগামী ৫ মে। প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিতব্য দেশের ১২তম এ সিটির সবকটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে ইলেকক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। যদিও প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় মেয়র নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইকরামুল হক টিটু। ফলে মেয়র পদ ছাড়াই এ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠানে ব্যয় হবে ১১ কোটি টাকারও বেশি, যার সিংহভাগই খরচ হবে ইভিএমের পেছনে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, মেয়র পদে ভোট না হলেও কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ফলে নির্বাচন পরিচালনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও ইভিএম- এ তিন খাতে ১১ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হতে পারে। এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা ব্যয় হওয়ার সম্ভাবনা দেড় কোটি টাকা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেছনে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি। বাকিটা ইভিএমের পেছনে ব্যয় হবে।

ইসির বাজেট শাখা জানায়, ইভিএম মেশিনগুলোর দাম ধরা রয়েছে, যেটা পরবর্তীতে আর কাউন্ট হবে না। এটা এককালীন। তার পর তো কমে আসবে। আর যেহেতু সব কেন্দ্রেই ইভিএমে ভোট হবে, তাই প্রশিক্ষণও হবে বড় আকারে। মক ভোটিংও নিতে হবে সব কেন্দ্রে, সেটারও ব্যয় আছে। ইভিএম পরিচালনার জন্যও আলাদা ব্যয় হবে। সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তা নিতে হতে পারে, সে ব্যয়ও যোগ হবে। কাজেই সব মিলিয়ে ইভিএমের পেছনে ব্যয়টা বেড়ে যায়। নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে ইভিএম প্রস্তুত করে নিচ্ছে। প্রতিটি ইভিএমের দাম পড়ছে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। এমসিসি ভোটে ১৩০টি কেন্দ্রের প্রতিটিতে তিনটি করে ৩৯০টি ইভিএম ব্যবহার হবে।

ব্যাকআপ হিসেবেও সমসংখ্যক মেশিন রাখা হবে। তাই ইভিএম কেনার পেছনেই বাজেটের সিংহভাগ ব্যয় করতে হয়েছে। এদিকে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল গতকাল মঙ্গলবার। তার আগে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জাহাঙ্গীর আহমেদ সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ান। ফলে মাঠে আর কোনো প্রার্থী না থাকায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হচ্ছেন আওয়ামী লীগের ইকরামুল হক টিটু, যিনি ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রথম প্রশাসক। এর আগে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া পাঁচজনের মধ্যে যাচাই-বাছাইয়ে দুজনের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছিল। ফলে এতদিন জাহাঙ্গীর আহমেদই ছিলেন টিটুর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন রিটার্নিং অফিসার আলীমুজ্জামন জানান, যাচাই-বাছাই শেষে গত ১০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইকরামুল হক টিটু ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী জাহাঙ্গীর আহমেদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মুসা সরকার ও বিশ্বজিৎ ভাদুড়ী সব শর্ত পূরণ না করায় তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

এ ছাড়া ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী প্রার্থী শহীদুল ইসলামের (স্বপন ম-ল) প্রার্থিতাও বাতিল করা হয়। মেয়র পদ ছাড়া সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৩ ওয়ার্ডের বিপরীতে ৭১ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল দেশের দ্বাদশ এ সিটি করপোরেশনের অনুমোদন দেয় প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসসংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (নিকার)।

ওই বছরের ১৪ অক্টোবর ময়মনসিংহকে সিটি করপোরেশন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ময়মনসিংহ সিটির আয়তন ৯১ দশমিক ৩১ বর্গমিটার। মোট জনসংখ্যা ৪ লাখ ৭১ হাজার ৮৫৮। এর মধ্যে ৫ মে অনুষ্ঠেয় প্রথম নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন ২ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩৬ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৭৯ নারী ও ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪৫৭ পুরুষ ভোটার।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment