রোজায় যৌন মিলনের জন্য যত বিধি বিধান, এক পলকে দেখেনিন কাজে লাগবে

রোজায় যৌন মিলনের জন্য যত বিধি বিধান, এক পলকে দেখেনিন কাজে লাগবে

রমজানের চাঁদ দেখা গেলে আজই পড়া হবে প্রথম তারাবিহ। হাফেজে কুরআন ইমামদের কুরআন তেলাওয়াতে মুখরিত হয়ে ওঠবে পাড়া, মহল্লা, গ্রাম কিংবা শহরের মসজিদগুলো।ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আহ্বান অনুযায়ী প্রথম তারাবিহতে পড়া হবে কুরআনুল কারিমের প্রথম দেড় পারা। এদিন সুরা ফাতেহাসহ সুরা বাক্বারার ২০৩নং আয়াত পর্যন্ত পড়া হবে।

সুরা ফাতেহাকে বলা হয়েছে উম্মুল কুরআন। এ সুরায় ওঠে এসেছে পবিত্র কুরআনের মূল আলোচনা। মানুষের কাজ ও আল্লাহর কাজ। তারপরও অন্যান্য সুরায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে মানুষকে নিয়ে। কেননা মানুষই যে কুরআনের একমাত্র আলোচ্য বিষয়।

প্রথম তারাবিহতেই তেলাওয়াত হবে রোজার বিধান মানুষের জন্য ফরজ তা প্রথম তারাবিহতেই তেলাওয়াত করা হবে। রোজার মাসায়েল বর্ণনার আগে সুরা বাক্বারার শুরুর দিকে মানুষের পরিচয় তুলে ধরা হবে।

শুরুতেই আল্লাহ তাআলা মানুষকে ৩ শ্রেণীতে বিভক্ত করে আলাদা আলাদাভাবে পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য ও কর্মকাণ্ড এবং তাদের কৃতকর্মের প্রাপ্তি তুলে ধরেছেন।প্রথম তারাবিহ পড়তে যাওয়ার আগে মুমিন মুসলমানের উচিত সুরা ফাতেহাসহ সুরা বাক্বারার ২০৩নং আয়াত পয়ন্ত অধ্যয়ন করা। অর্থ ও তাফসির পড়ে নেয়া।এ সুরা ও আয়াতগুলোর অর্থ ও তাফসির পড়তে সম্ভব না হলে বা অপরাগ হলে অন্তত তা তেলাওয়াত করা দরকার। পড়তে না জানলে তেলাওয়াত শোনার সুযোগ থাকলে তাই করা উত্তম। তাহলে নামাজে হাফেজেদের তেলাওয়াতের সময় কুরআনের বাস্তবচিত্রই ফুটে ওঠবে মুমিন মুসলমানের হৃদয়ে।রোজার বিধান সম্পর্কি আলোচনার পাশাপাশি আজকের আলোচ্য বিষয়গুলো তুলে ধরাহলো-

কুরআনুল কারিমের ধারাবাহিক আলোচনায় সুরা বাকারার ১৮৩নং আয়াতে রোজা ফরজ হওয়ার বিধান ওঠে এসেছে। ইসলামের অন্যান্য বিধানের মতো রোজাও পর্যায়ক্রমে ফরজ হয়েছে। প্রথমদিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদেরকে প্রতি মাসে মাত্র তিন দিন রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখন রমজানের এ রোজা ফরজ ছিল না।দ্বিতীয় হিজরিতে আরবি ক্যালেন্ডারের রমজান মাসজুড়ে রোজা পালনের নির্দেশ সর্ম্পকিত আয়াতটি নাজিল হয়।

 

আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেভাবে তোমাদের আগের লোকদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছিল। আশা করা যায়, তোমরা আল্লাহভীতি বা পরহেজগারী অর্জন করতে পারবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩রোজার এ বিধান দেয়ার আগে মুসলমানদের জন্য মাসে তিনদিন রোজা রাখা আবশ্যক ছিল। পরবর্তীতে আল্লাহ তাআলা বিধান নাজিল করেন যে, রমজান মাসজুড়ে রোজা রাখা ফরজ।এ আয়াতের মধ্যে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের এ কথাও স্মরণ করিয়ে দেন যে, শুধু তোমাদের ওপরই রোজা ফরজ করা হয়নি বরং তোমাদের আগে যারা দুনিয়াতে অন্যান্য নবি-রাসুলের সময়ে তাদের অনুসারি ছিল, তাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে।

অতঃপর আয়াতের শেষাংশে রোজা পালনের মহান উদ্দেশ্যের কথাও তুলে ধরেন। যদি তোমরা রোজাকে যথাযথ হক আদায় করে পালন করতে পার ‘আশা করা যায়, তোমরা তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয় অর্জন করতে পারবে।’ অর্থাৎ যারা রোজা পালন করবেন তারাই তাকওয়া বা পরহেজগারী অর্জন করবেন।এ রোজা হজরত আদম আলাইহিস সালামের সময় থেকেই প্রবর্তিত এবং প্রচলিত রয়েছে। মানব জীবনকে পূতঃ পবিত্র করে গড়ে তোলার অত্যন্ত কার্যকরী পন্থা হলো রমজানের রোজা পালন।

আল্লাহর নির্দেশ পালনে রমজানের রোজা পালনের কারণেই তিনি বান্দার জন্য রহমতের দ্বারসমুহকে উন্মুক্ত করে দেন। হাদিসে পাকে প্রিয়নবি ঘোষণা করেন- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন রমজান মাসের শুভাগমন হয়, তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ (বন্দি) করে রাখা হয়।’ (বুখারি)

আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি রোজার বিধান জোর-জবরদস্তি করে চাপিয়ে দেননি। তিনি অনেকের জন্যই রোজার বিধানকে হালকা করেছেন। যারা রোজা বিধান পালন করতে সক্ষম নয় তাদের জন্যও দিয়েছেন বিধান। রমজানের রোজা পালনে অপারগ ব্যক্তিদের করণীয় ও বিধান উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘(রোজা ফরজ করা হয়েছে) কয়েকটি নির্দিষ্ট দিনের জন্য।

(তারপরও) কেউ যদি সে (দিনগুলোতে) অসুস্থ হয়ে যায় কিং কেউ যদি (তখন) সফরে থাকে, সে ব্যক্তি সমপরিমাণ দিনের রোজা (সুস্থ হয়ে অথবা সফর থেকে ফিরে এসে) আদায় করে নেবে। (এরপরও) যাদের ওপর (রোজা) একান্ত কষ্টকর হবে, তাদের জন্য এর বিনিময়ে ফিদিয়া থাকবে। (এবং তা হচ্ছে) একজন গরিব ব্যক্তিকে (তৃপ্তিসহ) খাবার দেয়া। অবশ্য যদি কেউ (এর চেয়ে বেশি দিয়ে) ভালো কাজ করতে চায়, তাহলে এ (অতিরিক্ত) কাজ তার জন্যে হবে একান্ত কল্যাণকর। তবে (এ সময়) তোমরা যদি রোজা রাখতে পারো তা হবে তোমাদের জন্য ভালো। তোমরা যদি রোজার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে (যে, কী পরিমাণ কল্যাণ রয়েছে!)।

উল্লেখিত আয়াতে একান্তই যারা রোজা পালনে সক্ষম নয়, তাদের বিষয়েও আল্লাহ তাআলা এ বিধি বর্ণনা করেছেন। যাতে অক্ষম বা সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিরাও রোজার তাৎপর্য থেকে বঞ্চিত না হয়। এ বিধান ৩টি ধাপে তুলে ধরা হলো-

প্রথমতঃ যারা রোজা রাখতে অক্ষম তাদের মধ্য থেকে অসুস্থ ও সফরকারী লোকদেরকে এ শর্তে মুক্তি দেয়া হয়েছে যে, তারা রোগ এবং সফরের কারণে যে কয়দিন রোজা রাখতে অপারগ হবে পরে সে দিনগুলোতে রোজা রেখে রমজানের রোজা (২৯/৩০) পূর্ণ করে নিবে।

দ্বিতীয়তঃ হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় যে বক্তি বেশি বার্ধক্যে পৌঁছে যাওয়ার কারণে অথবা সুস্থ্য হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই; যাদের রোজা রাখা অত্যন্ত কষ্টকার বা একেবারেই অসম্ভব। তাদের জন্য (রমজানের প্রতিদিনি) একজন মিসকিনকে খাদ্যদান করা আবশ্যক।

তবে অনেক তাফসিরকারক বলেছেন, ‘ইসলামের প্রথম পর্যায়ে যারা রোজা রাখতে সামর্থ ছিল কিন্তু অভ্যাস না থাকার কারণে কষ্টকর ছিল; তারা যদি রোজা না রাখতে পারে তবে তাদের পরিবর্তে একজন মিসকিনকে ফিদিয়া তথা খাদ্যদান করার কথা বলা হয়েছে। পরবর্তীতে সামর্থবানদের জন্য ফিদিয়া দেয়ার বিধানকে রহিত করা হয়েছে।

আবার যারা সন্তান সম্ভবা নারী কিংবা শিশু বাচ্চাদের দুধদানকারী নারী, তাদের জন্য রোজা রাখা কষ্টকর হলে তারাও সন্তানের নিরাপত্তায় রোগীর বিধানের আওতায় পড়বে। যা পরে আদায় করে নিতে হবে।

তৃতীয়তঃ অসুস্থ রোগীদের যারা সামর্থবান, তারা যদি একজন মিসকিনের পরিবর্তে একাধিক মিসকিনকে খাদ্য দান করে, তবে তাদের জন্য এটা খুবই উত্তম।

অতঃপর আয়াতের শেষাংশে রোজার উপকারিতার কথা ‘যদি তোমরা জানতে’ বলে আকর্ষণ তৈরি করে দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে- প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের আশায় রাতের নামাজ তারাবিহ আদায় করবে, আল্লাহ তাআলা তার আগের জীবনের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’

আর যারা ঠিকভাবে রোজা পালন করবে না তাদের ব্যাপারেও প্রিয় নবি সতর্কতা ঘোষণা করেছেন-
হজরত কাব ইবনে উজরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত এক দিন রাসুলুল্লাাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (মসজিদে নববির) মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখলেন, তখন বললেন, ‘আমিন’। যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেন, তখন বললেন, ‘আমিন‘। যখন তিনি তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেন তখনও বললেন, ‘আমিন’।

হজরত কাব ইবনে উজরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যখন তিনি (মিম্বর থেকে) নামলেন, আমরা তাঁর কাছে আমিন বলার কারণ জানতে চাইলাম। বললাম এর আগে আপনাকে কখনো এভাবে আমিন বলতে শুনিনি।

উত্তরে তিনি বললেন, প্রথম সিঁড়িতে পা রাখার সময় জিবরিল আলাইহিস সালাম আমার কাছে এসে বলরেন, ‘ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি যে রমযান মাস পেল, তবুও তার গোনাহ মাফ করাতে পারল না। আমি বললাম, ‘আমিন’।

যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখলাম তখন বললেন, ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি যার কাছে আপনার নাম উচ্চারিত হলো অথচ সে আপনার প্রতি দরূদ পাঠ করল না। আমি বললাম, ‘আমিন’।

যখন তৃতীয় সিড়িঁতে পা রাখলাম, তখন বললেন, ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি যে বৃদ্ধ পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে পেল অথচ তারা উভয় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারল না। অর্থাৎ তাদের খেদমতের মাধ্যমে নিজেকে জান্নাতবাসী করতে পারল না। আমি বললাম, আমিন।’ (মুসলিম, তিরজিমি)

রোজা বিধানের জন্য রমজান মাসকে বেচে নেয়ার কারণও আল্লাহ তুলে ধরেছেন এবং ১৮৪নং আয়াতের বিধানের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করে আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘রমজান সেই মাস; যে মাসে পবিত্র কুরআন নাজিল করা হয়েছে। যে কুরআন মানব জাতির জন্য পথ প্রদর্শক। আর তাতে রয়েছে সুস্পষ্ট হেদায়েত। যা হক ও বাতিলের পার্থকারী। সুতরাং তোমাদের যে কেউ এ মাস পবে তাকে অবশ্যই রোজা রাখতে হবে। আর যে (এ মাসে) অসুস্থ কিংবা মুসাফির হবে সে অন্য সময় এ সংখ্যা (রমজানের রোজা) পূর্ণ করে নেবে। তোমাদের জন্য যা সহজ আল্লাহ তাই করেন। আর যা তোমাদের জন্য কঠিন তা তিনি করার ইচ্ছা করেন না। যেন তোমরা নির্ধারিত (রমজান মাসের) সময়টি সম্পূর্ণ করতে পার এবং আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর, কেননা আল্লাহ তোমাদের সঠিক পথ দেখিয়েছেন। যাতে তোমরা তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)

কুরআন আল্লাহ তাআলার নূর। দুনিয়ায় মানুষের একমাত্র জীবন বিধান। আর তা তিনি এ রমজান মাসেই নাজিল করেন। কারণ মানুষ যেন এ কুরআনের নূর গ্রহণ করে দুনিয়া ও পরকালের জীবন সাজাতে পারেন। আর রোজা পালনের মাধ্যমে মানুষ আসমানি হেদায়েত গ্রহণের উপযোগী করে নিজেকে তৈরি করতে পারেন।

এ কারণেই আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালাম ও হজরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আসমানি কিতাব তাওরাত ও ইঞ্জিল দেয়ার আগে ৪০ দিন রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাঁরাও আসমানি কিতাব ধারণ করতে ৪০ দিন রোজা পালন করে নিজেদের তৈরি করেছিলেন।

এ কুরআন উম্মাতে মুসলিমার জন্য হেদায়েতের নিদর্শন, সঠিক পথ প্রদর্শক এবং ইসলামের বিধান পালনে সত্য-মিথ্যার সুস্পষ্ট পার্থক্যকারী।

সুতরাং যারা কুরআন নাজিলের মাস রমজানকে হায়াতে জিন্দেগিতে পাবে তারা যেন এ মাসে রোজা পালন করে। এবং রমজান মাসব্যাপী রোজা পালন তাঁদের জন্য ফরজ। এ কারণেই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের ২ মাস আগে থেকে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব মাস থেকে রমজান লাভে দোয়া করতে থাকতেন। আর শাবান মাস আসলে তিনি রমজানের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠতেন। প্রিয় নবি বলতেন- ‘হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাসকে আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌছে দিন।’

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসে চাঁদের হিসাব রাখতে দিন গণনা করতেন। আর রমজানের নতুন চাঁদ দেখার জন্য অপেক্ষা করতেন।

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসের চাঁদের হিসাব যেভাবে রাখতেন অন্য কোনো মাসের হিসাব সেভাবে রাখতেন না। পরে চাঁদ দেখে রোজা রাখতেন।’ (মুসনাদে আহমদ)

আয়াতে রোজা পালনে যাদের জন্য কষ্টকর তাদেরকে মিসকিন খাওয়ানোর ব্যাপারে বিধান দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে আল্লাহ তাআলা এ আয়াতের মধ্যে ওই বিধানকে রহিত করে দিয়ে বলেন, কষ্ট হলেও যারা রোজা রাখতে সক্ষম তাদের রোজা রাখতে হবে। ফিদিয়া প্রদানের মাধ্যমে রোজা আদায় তাদের জন্য বৈধ নয়।

অতঃপর আল্লাহ তাআলা অসুস্থ ও মুসাফিরের রোজা আদায়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। যা তিনি পূর্ববর্তী আয়াতে ঘোষণা করেছেন। যা তারা সুস্থ হয়ে এবং সফর শেষ করার পর রোজার সংখ্যা পূর্ণ করবেন।

একবার রোজা রাখা অবস্থায় পিপাসায় কাতর এক ব্যক্তির ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সফর অবস্থায় রোজা রাখা নেক কাজ নয়।’ কেননা বান্দার জন্য আল্লাহ তাআলার নির্দেশ এ রকম, ‘তিনি তার বান্দাদের জন্য যা সহজ তারই ইচ্ছা করেন।

আয়াতের শেষাংসে রোজার বিধান ও কুরআন লাভের কারণে বান্দাকে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের কথাও তুলে ধরেছেন। আর আজকের তারাবিহতেই তেলাওয়াত হবে এসব আয়াতগুলো।

রমজানে পানাহার ও নিজেদের স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যারা এ দু’টি কাজে লিপ্ত হবে তাদের রোজা হবে না। এ নিয়ে সাহাবায়ে কেরাম পেরেশানিতে পড়ে যান। আল্লাহ তাআলা এ ব্যাপারে বিধান জারি করে সমাধান দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘রোজার (মাসের) রাতের বেলায় তোমাদের স্ত্রীদের কাছে যৌন মিলনের জন্য যাওয়া তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। (কারণ তোমাদের) নারীরা যেমনি তোমাদের জন্য পোশাক (স্বরূপ, ঠিক) তোমরাও তাদের জন্য পোশাক (সমতুল্য)। আল্লাহ তাআলা এটা জানেন, (রোজার মাসে রাতের বেলায় স্ত্রী সহবাসের ব্যাপারে) তোমরা (নানা ধরনের) আত্মপ্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছিলে, তাই তিনি (তোমাদের ওপর থেকে কড়াকড়ি শিথিল করে) তোমাদের ওপর দয়া করলেন এবং তোমাদের ক্ষমা করে দিলেন। এখন তোমরা চাইলে তাদের সাথে সহবাস করতে পারো এবং (এ ব্যাপারে) আল্লাহ তোমাদের জন্য যা (বিধি বিধান কিংবা সন্তান সন্তুতি) লিখে রেখেছেন তা সন্ধান করো।

(রোজার সময় পানাহারের ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশ হচ্ছে,) তোমরা পানাহার অব্যাহত রাখতে পারো যতক্ষণ পর্যন্ত রাতের অন্ধকার রেখার ভেতর থেকে ভোরের শুভ্র আলোক রেখা তোমাদের জন্য পরিষ্কার না হয়। অতঃপর তোমরা রাতের আগমন পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করে নাও। (তবে) মসজিদে যখন তোমরা ইতেকাফ অবস্থায় থাকবে তখন নারী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকো। এ হচ্ছে আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত সীমারেখা। অতএব তোমরা কখনো এর কাছেও যেয়ো না। এভাবেই আল্লাহ তাআলা তাঁর যাবতীয় নির্দশন মানুষের জন্য বলে দিয়েছেন। যাতে করে তারা (এ আলোকে) আল্লাহ তাআলাকে ভয় করতে পারে।’ (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৮৭)

প্রথম তারাবিহতে পঠিত হবে সুরা ফাতিহা ও সুরা বাক্বারা : আয়াত ০১-২০৩। আজকের বিষয়গুলো দশটি পর্বে ভাগ করে উল্লেখ করা হলো-

প্রথম পর্ব : (আয়াত ১-২৯)

মুত্তাকিদের করণীয়, সফলতা ও পরিচয়, কাফেরদের পরিচয় এবং মুনাফিকের পরিচয়। (১-২০)

সমগ্র মানবজাতির প্রতি ইবাদাতের আহ্বান; কুরআনের সন্দেহপোষণকারীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ; মুমিনদের জন্য জান্নাতের বর্ণনা; আল্লাহর অবাধ্যকারী কাফের-ফাসেকদের ক্ষতিগ্রস্তের বিবরণ (২১-২৯)।

দ্বিতীয় পর্ব (আয়াত ৩০-৩৯)

জ্ঞান-বিজ্ঞানে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ও হজরত আদম আলাইহিস সালামের খিলাফাত (৩০-৩৩)
, হজরত আদম আলাইহিস সালামের মর্যাদা-সম্মান ও দুনিয়া প্রেরণ, আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীতে মানুষের অবস্থান, গোনাহ থেকে তাওবার শিক্ষা এবং ইবলিসের (শয়তানের) পতন (৩৪-৩৯)।

তৃতীয় পর্ব : (আয়াত ৪০-৭৪)

ইয়াহুদিদের ইতিহাস; মুসলমানদের দুর্দশার বিবরণ ও কারণ; দুনিয়ায় ইসলাম বাস্তবায়নের প্রস্তুতি (৪০-৪৬) অকৃতজ্ঞ ইয়াহুদি জাতির বর্ণনা (৪৭-৬৪), ইয়াহুদিদের কুট কৌশল ও হঠকারিতা (৬৫-৬৬), সুরা বাক্বারা নাম করণে গরু (গাভী) যবেহের ঐতিহাসিক বর্ণনা (৬৭-৭৪)

চতুর্থ পর্ব : (আয়াত ৭৫-১০৩)

ইয়াহুদিদের হেদায়াতে তৎকালীন মুমিনদের অবস্থার বর্ণনা (৭৫-৭৭)

ইয়াহুদি প্রসঙ্গ : বনি ইসরাঈলের ইতিবৃত্ত (৭৮-৮০)

মানুষের পাপ-পূণ্যের বিচার (৮১-৮২)

ইয়াহুদিদের প্রতিশ্রুতিভঙ্গ (৮৩-৮৭)

বিশ্বনবির সঙ্গে ইয়াহুদিদের প্রতারণা (৮৮-৯৩)

পরকালের সফলতা লাভে ইয়াহুদিদের চাপাবাজি (৯৪-৯৬)

জিবরিল আলাইহিস ও বিশ্বনবির সঙ্গে ইয়াহুদিদের শত্রুতা পোষণ (৯৭-৯৮)

বিশ্বনবির প্রতি কুরাআন নাজিল ও তাঁর সত্যয়ন (৯৯-১০১)

ইয়াহুদিদের জাদু বিদ্যা বা জাদু প্রীতি (১০২-১০৩)

পঞ্চম পর্ব : (আয়াত ১০৪-১২৩)

ইয়াহুদিদের শিষ্টাচার বিবর্জিত আচরণ (১০৪-১০৫)

কুরআনের আয়াত ও বিধান রহিতকরণ সম্পর্কিত ব্যাখ্যা (১০৬-১০৮)

ইয়াহুদিদের ষড়যন্ত্র (১০৯)

মুসলমানের চেতনাবোধ জাগ্রত (১১০)

ইয়াহুদিদের প্রতিপক্ষ নাসারাদের চাপাবাজি (১১১-১১২)

ইয়াহুদি-খ্রিস্টান পরস্পরের ঝগড়া (১১৩)

ক্বেবলা পরিবর্তনে ইয়াহুদিদের ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার (১১৪-১১৫)

ইয়াহুদি-খ্রিস্টান-মুশরিকদের ভ্রান্ত আক্বিদা-বিশ্বাস (১১৬-১১৮, ১২০-১২১)

নির্ভেজাল তাওহিদের ঘোষণা (১১৯)

অন্যদের সঙ্গে ঈমানদারদের বিশ্বাসে সবচেয়ে বড় আদর্শিক সংঘাত (১২২-১২৩)

ষষ্ঠ পর্ব : (আয়াত ১২৪-১৪১)

মুসলিম জাতির নেতা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম >> বাইতুল্লাহ বা কাবা ঘর নির্মাণ; বাইতুল্লাহ নির্মাণকালে তার দোয়া (১২৬-১২৮), নিজ বংশে রাসুল পাঠানোর আহ্বান (১২৯), হজরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের বংশধরদের আলোচনা (১৩০-১৪১)

সপ্তম পর্ব : (আয়াত ১৪২-১৫৭)

ক্বেবলা পরিবর্তনের রহস্য আলোচনা, মুসলিম জাতির গুণ, পরিচয় এবং অমুসলিমদের কার্যাবলী, বিশ্বনবির নবুয়ত, আল্লাহর কৃতজ্ঞতার সঠিক ধারণা, আল্লাহর সাহায্য লাভে সবর ও নামাজ, ঈমানের অগ্নিপরীক্ষা ও শহিদের মর্যাদা।

অষ্টম পর্ব : (আয়াত ১৫৮-১৮২)

সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয় মহান আল্লাহর নির্দশন, সত্য গোপনকারী অবিশ্বাসী নেতাদের ভয়াবহ পরিণতি ও হুশিয়ারি, তাওহিদের মূলনীতি, ঈমানি চিন্তাধারা, হালাল-হারাম সম্পর্কিত কুরআনি নীতিমালা , পূর্ব পুরুষদের অন্ধ অনুকরণের কুপ্রভাব, ইসলামের দৃষ্টিতে ইবাদাত-বন্দেগি (১৫৮-১৭৭)
, ইসলামে কিসাস বা হত্যাকারীর শাস্তির বিধান, মুক্তিপণের সময়সীমা, অসিয়তের বিধান (১৭৮-১৮২)

নবম পর্ব : (আয়াত ১৮৩-১৮৮)

রোজা বিধান, শিক্ষা ও তাৎপর্য, সাহরি খাওয়ার বিধান, ই’তিকাফের বিধান, আল্লাহর কাছে বান্দার সাহায্য কামনার আদেশ, অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ ভোগ ও তার বিধান।

দশম পর্ব : আয়াত : ১৮৯-২০৩

চাঁদের আবির্ভাব, ক্রমবৃদ্ধি ও ক্রমহ্রাসের বিবরণ, কুসংস্কারের মুলোৎপাটন, পবিত্র মাসসমূহে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ, জিহাদে লক্ষ্য উদ্দেশ্য, বিধান, আল্লাহ পথে ব্যয়, হজ ও ওমরা বিধি-বিধান, হজের সমাপ্ত পর্বের আলোচনা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনুল কারিম বুঝে পড়ার এবং কুরআনের বিধান পালন করে আমলি জিন্দেগি যাপন করার তাওফিক দান করুন। তারাবিহ-এর আগে প্রতিদিনের তেলাওয়াতকৃত অংশ অধ্যয়নের তাওফিক দান করুন। আমিন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment