কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে দ্বিখণ্ডিত না করতে আইনি নোটিশ 

কুবি প্রতিনিধিঃ
ক্যাম্পাস সংলগ্ন ভূমি অধিগ্রহণ করে ক্যাম্পাস সম্প্রসারণের দাবিতে এবার আইনি নোটিশ প্রেরণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬৫৫ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পে ক্যাম্পাসকে দ্বিখণ্ডিত করার প্রতিবাদে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীদের আন্দোলনের পর এবার এ আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মোঃ কামাল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ১৩ জন বাদীর পক্ষে এ আইনি নোটিশটি প্রেরণ করেন বলে জানা যায়।
এ আইনি নোটিশটি গত ৩০ মে প্রেরণ করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সাম্প্রতিক এটি সাংবাদিকদের নজরে আসে। নোটিশটি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ইউজিসির চেয়ারম্যান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারী, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারী, চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক, কুমিল্লা পুলিশ সুপার, কোটবাড়ী পুলিশ স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল পুলিশ স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর প্রেরণ করেন।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়কে দ্বিখণ্ডিত করার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এলাকাবাসী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েক দিন আন্দোলন করেন। তখন শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখে আন্দোলন করে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বর্তমান ক্যাম্পাসের সাথে নতুন ক্যম্পাসের একটি সুপ্রশস্ত নিজস্ব রাস্তা করে দিবে এমন আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থেকে ফিরে আসে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি প্রভাবশালী মহলকে খুশি করতে আন্দোলনরত এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের দাবিকে সুকৌশলে এড়িয়ে যান।
এছাড়া স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা ভূমি অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারিত স্থানসহ এর আশপাশে জায়গা কিনে রেখেছে বলে জানা যায়।
আইনি নোটিশে বলা হয়, গত ২৩ অক্টোবর ২০১৮ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ১ হাজার ৬৫৫ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার মেগা প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। উক্ত প্রকল্পের জন্য ব্যয়িত অর্থের অধিকাংশই ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় হবে বলে জানা যায়। মেগা প্রকল্পটি হাতে নেয়ার বিষয়টি জানার পর একটি প্রভাবশালী মহল সিন্ডিকেট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এলাকায় (ভূমি অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারিত এলাকা) প্রায় ১ বছর আগে বিশাল সম্পত্তি কিনে নিয়েছে।
নোটিশটিতে আরো বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ভূমি অধিগ্রহনে কুমিল্লা সদর উপেজেলার লালমাই মৌজার অর্ন্তভূক্ত ৭, ৯, ১২ ও ১৩ নং সিটের জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রভাবশালী ওই মহলটি উক্ত জমি বর্তমান ক্যাম্পস থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এতে বিশ্ববিদ্যালয়টা দ্বিখণ্ডিত করার মধ্য দিয়ে প্রভাবশালী এ মহলটি গভীরে চক্রান্ত করছে বলে উল্লেখ করা হয়।
বর্তমান ক্যাম্পাসটি যেখানে অবস্থিত সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দরা যে কোন শর্তে ক্যাস্পাস সম্প্রসারণে ভূমি দিতে প্রস্তুত বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়। নোটিশ প্রেরণের তারিখ হইতে ১৫ দিনের মধ্যে নোটিশ দাতাগণের প্রার্থীত দাবির প্রক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। অন্যথায় মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন দায়ের করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র নেতারা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সুকৌশলে ক্যাম্পাস দ্বিখণ্ডিত করার চেষ্টা করছে। বর্তমান ক্যাম্পাস সংলগ্ন যাদের জমি আছে তারা যে কোন শর্তে জমি দিতে প্রস্তুত এবং এ ব্যাপারে তারা হাইকোর্টেও লিখিত দিয়েছে।
এমনকি ক্যাম্পাস দ্বিখণ্ডিত করার কার্যক্রম বন্ধ না করলে তারা কঠোর আন্দোলনের হুমকি দেন। যদি ক্যাম্পাস সংলগ্ন জমি দিতে তারা রাজি থাকে তাহলে কেন দূরে গিয়ে ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে? এখানে স্বার্থান্বেষী একটি মহল মেগা প্রকল্পের টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে আত্মসাত্ করার সুক্ষ পরিকল্পনা করছে।’
এ বিষয়ে নোটিশ দাতা আইনজীবী কামাল হোসেন বলেন, ‘গত ৩০ মে সংশ্লিষ্টদের বরাবর বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি সংক্রান্ত আইনি নোটিশ প্রেরণ করি এবং সেখানে নোটিশ প্রাপ্তির পরে ক্যাম্পাস দ্বিখণ্ডিত করার কার্যক্রম বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। আশা করি নোটিশ গ্রহিতাগণ এ বিষয়ে কার্যকরি পদক্ষেপ নিবেন।’
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘লিগ্যাল নোটিশ আমি পাইনি তাই এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। তবে আমি এটুকু বলতে পারি যদি বর্তমান ক্যাম্পাস সংলগ্ন পর্যাপ্ত জায়গা থাকে তাহলে দূরে কেন জায়গা নিবে? তাছাড়া এখানে সরকারের কোটি কোটি ব্যয় হয়েছে। আমার সুযোগ থাকলে এ বিষয়ে আমি কথা বলবো।’

আপনি আরও পড়তে পারেন