বিবস্ত্র করে ছবি তুলল প্রেমিক, স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা!

প্রেমের সম্পর্ক ছিন্ন করায় নবম শ্রেণির ছাত্রী নূপুর আক্তারকে (১৫)   অপহরণ করে প্রসূনজিৎ সরকার (১৬) এবং তার বন্ধুরা। এরপর ওই ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে মোবাইলে ছবি তোলে তারা। নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এ ঘটনা সহ্য করতে না পেরে নিজ ঘরে বাঁশের আড়ায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে ওই কিশোরী।

গতকাল বুধবার ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের বিষমপুর গ্রামে সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। রাত ১১টার গৌরীপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নূপুরের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। নূপুর বিষমপুর গ্রামের বাচ্চু মিয়ার মেয়ে এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মিজাজ খান টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বিমএ কলেজের ছাত্রী।

অপরদিকে, প্রসূনজিৎ একই ইউনিয়নের পাশ্ববর্তী কিল্লা তাজপুর গ্রামের স্বর্ণ ব্যবসায়ী বরুন সরকারের ছেলে ও একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির ছাত্র।

নূপুরের মামা শফিকুল ইসলাম জানান, স্কুলে লেখাপড়ার সুবাধে সম্প্রতি প্রসূনজিতের সঙ্গে পরিচয় হয় নূপুরের। প্রসূনজিৎ হিন্দু পরিবারের ছেলে হওয়ায় পরিচয় গোপন করে নূপুরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। কিছুদিন পর নূপুর জানতে পারে প্রসূনজিৎ হিন্দু পরিবারের ছেলে। এরপর নূপুর তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিন্ন করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। সম্পর্ক ছিন্ন করায় প্রসূনজিৎ বিভিন্ন সময়ে নূপুরকে নানা হুমকি দিয়ে আসছিল।

গত ২৪ জুন নূপুর একই ইউনিয়নের বীর আহাম্মদপুর গ্রামে তার বড় বোন তাছলিমার বাড়িতে বেড়াতে যায়। বুধবার বিকেলে বোনের বাড়ি থেকে নিজ বাড়ি ফেরার সময় রাস্তায় প্রসূনজিৎ এবং তার বন্ধুরা নূপুরকে জোরপূর্বক অটো রিকশায় উঠিয়ে নেয়। সেখান থেকে নূপুরকে নিয়ে নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার রামপুরে জল্লী গ্রামে নিঝুম পার্কে নিয়ে যায়। সেখানে জোরপূর্বক বিবস্ত্র করে নূপুরের ছবি তোলে প্রসূনজিৎ ও তার বন্ধুরা। একই সঙ্গে সে যদি প্রেমের সম্পর্ক না রাখে তাহলে তার এসব ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয় প্রসূনজিৎ।

বিষয়টি পার্ক কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় লোকজন বুঝতে পারলে তারা প্রসূজিৎকে আটকিয়ে রাখে এবং তার পরিবারের লোকজনকে মোবাইলে খবর দেন। খবর পেয়ে প্রসূনজিতের বাবা বরুন সরকার ও স্থানীয় আরও কয়েকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এরপর প্রসূনজিৎ ও নূপুরকে তাদের হাতে তুলে দেয়। পরে ভোর ৪টার দিকে প্রসূনজিৎ ও তার সহযোগীরা নূপুরকে বিষমপুর গ্রামে তার নিজ বাড়িতে রেখে চলে যায়। এ ঘটনায় অপমান সইতে না পেরে বুধবার সন্ধ্যা ৭ টায় নিজ ঘরে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে নূপুর। মৃত্যুর আগে এসব ঘটনা নূপুর তার বলে গেছে বলে দাবি তার মা-বাবার।

স্থানীয়রা জানায়, ঘটনার পর থেকে প্রসূনজিৎ ও তার পরিবারের লোকজন বাড়ি থেকে পালিয়ে আত্মগোপনে রয়েছে। বিষয়টি জানতে প্রসূনজিৎ এর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে কল করা হলে সংযোগটি বন্ধ পাওয়া যায়।

গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম মিয়া জানান, খবর পেয়ে ঘটনার দিন রাত ১১টার দিকে নিহত নূপুরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আজ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। তদন্ত সাপেক্ষে উক্ত ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

আপনি আরও পড়তে পারেন