ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজশাহীর কামাররা

রাজশাহী ব্যুরো ডাঃ মোঃ হাফিজুর রহমান (পান্না)

ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে রাজশাহীর কামাররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। টুংটাং শব্দই বলছে ঈদ লেগেছে কামারের দোকানগুলোতে। দিন রাত চলছে চাপাতি, দা, বটি, ছুরি তৈরি ও শানের কাজ। নাওয়া খাওয়া ভুলে নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। বছরে তো একটাই সময় কটা দিন মাত্র ব্যস্ত, কুরবানি ঈদের পর তো আর তেমন কোন কাজ থাকে না। তাইতো এই সময়টাকে বেশ উপভোগ করে কামারা। নগরীর মথুরডাঙ্গা, নওদাঁপাড়া, সালবাগান, রেলগেন, সাহেব বাজার, রাজশাহী নিউমাকেট কামাররা এখন মহাব্যাস্ত সময় পার করছেন। লাল আগুনের লোহায় কামারদের পিটাপিটিতে মুখর হয়ে উঠেছে কামার দোকান গুলো। টুংটাং শব্দটি তাদের জন্য এক প্রকার ছন্দ। এ ছন্দের তালে চলছে স্বহস্তের জাদুময়ী হাতুড় আর ছেনীর কলা কৌশল। বাজার থেকে লোহা কিনে সেগুলো আগুনে পুড়ে দা, বটি, চাকু, চাপাতিসহ বিভিন্ন জিনিস পত্র তৈরি করছেন কামাররা। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামারা দূর্দিন চললেও ঈদুল আজাহাকে সামনে রেখে জমে উঠে তাদের এই হস্ত শিল্প।সারা বছর এই কোনবানির ঈদের (ঈদুল আযাহা) জন্য অপেক্ষায় থাকেন তারা। রাজশাহীর নগরীর মথুর ডাঙ্গার কর্মকার পলাশ বলেন এ সময়টিতে যারা কোরবানির পশু জবাই করেন তারা প্রত্যেকে চাপাতি, দা, বটি, ছুরি তৈরি করেন। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে এ সময়টিতে কাজ বেশি হওয়ার কারণে লাভও বেশি হয়। কিন্তু লোহার দাম কিছুটা কম থাকলেও কয়লার দাম বেশি থাকায় মজুরি একটু বেশি নিতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমাদের পরিচিত কিছু গ্রাহক দা, বটি, ছুরি বানানোর অর্ডার দিয়ে গেছে এবং শাণ দিতে অর্ডার পেয়েছি। পাশাপাশি নতুন বটি, ছুরি তৈরি করছি। বিশেষ করে কোরবানির ৩ থেকে ৪ দিন আগে গ্রাহকদের আনাগোনা বেশি বেড়ে যায় বলেও জানান তিনি। কর্র্মকার পলাশ আরো বরেন, জানান এ পেশার ভবিষ্যত নিয়েও তারাঁ এখন চিন্তিত, কারণ এ কাজের সময় আওয়াজ হয় বলে শহরে তেমন কেউ তাদের দোকান ভাড়াও দিতে চায় না। সীমিত আয় দিয়ে তাদের সংসার চলে। যেমন পূঁজি নেই তেমনি আয়ও নেই। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। আগামীতে এ পেশা টিকিয়ে রাখা খুব কষ্ট হয়ে পড়বে বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন। কামারের দোকানে চাপাতি তৈনি করতে আসা মোঃ সেলিম হোসেন বাপী বলেন, এই সময়টায় (ঈদুল আযহায়) কোরবানির পশু জবাই দেয়া হয়। যার কারণে কসাই পাওয়া অনেক মুশকিল হয়ে পড়ে। তাই নিজেরাই কোরবানির পশুর কাঁটাছিলা কাজে লেগে যাই। এ সময় দরকার পড়ে গোশত কাটার জন্য চাপাতি, দা ও ছুরির। আর সেগুলো তৈরি করেন কামাররা। তারা দেশীয় প্রযুক্তিতে লোহা আগুনে গরম করে পিটিয়ে তৈরি করেন দা, ছুরি ইত্যাদি। এখানে নিজেদের সুবিধা মত তৈরী করা যায়। এবং এগুলি খুব টেকশই হয়। বর্তমানে রাজশাহী নগরীর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন কামারের দোকানে গ্রাহকের আনাগোনা বেড়েছে। কামাররাও দা, বটি, ছুরি, শান দিতে ব্যস্ত। দোকানের সামনে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রেখেছেন নতুন দা, ছুরি, বটি। মানভেদে নতুন চাপাতি-১২০০-২০০০টাকা,দা ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা, ছুরি ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা, বটি ৩০০ থেকে ৬০০টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন