চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে রাজশাহীর উপজেলা পর্যায়ের সড়কগুলো

রাজশাহী ব্যুরো ডাঃ মোঃ হাফিজুর রহমান (পান্না)

চালচলের প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে রাজশাহীর উপজেলা পর্যায়ের সড়কগুলো। বিশেষ করে জেলা সদরের সঙ্গে যুক্ত এমন অন্তত ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের বেহালদশা। এতে করে প্রতিদিনি লাখ লাখ মানুষ ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়ছে। যানবাহন চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। বাড়ছে দুর্ঘটনা। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহীর পুঠিয়া-তাহেরপুর সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত করে। এই সড়কটি দিয়ে বাগমারা উপজেলার অধিকাংশ মানুষ রাজশাহী সদর, নাটোর এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন। কিন্তু সড়কটি প্রায় দুই বছর ধরে চলাচলের জন্য প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। মাঝে মাঝে এতো বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে যে এই বর্ষায় সেসব গর্ত রীতিমত পুকুরে পরিণত হয়েছে। ফলে রাস্তায় কাদা-পানিতে একাকার হয়ে থাকছে সবসময়। আবার রাস্তাটির অধিকাংশ স্থানে কার্পেটিং উঠে গিয়েও চরম ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। মানুষ তারপরেও বাধ্য হয়ে এই রাস্তায় ব্যবহার করছে। এতে করে প্রতিনিয়ই কোথাও কোথাও না কোথাও ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। গত বছর এই রাস্তার পুরান তাহেরপুরের কাছে বাস উল্টে খাদে পড়ে গিয়ে দুইজন নিহতের ঘটনাও ঘটে। এর বাইরেও ঘটছে বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনা। কিন্তু রাস্তাটি সংস্কারে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’ এই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী বাস চালক আব্দুল মজিদ বলেন, প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে দুইবার রাজশাহীতে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু প্রায় ১৭ কিলোমিটার অংশ ভয়ানক খারাপ হওয়ার কারণে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। কোথাও কোথাও মনে হয় এই বুঝি উল্টে যাবে বাস। আবার যাত্রীদেরও চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে।’ জানা গেছে, প্রায় ১৭ কিলোমিটার এই রাস্তাটি বছর চারেক আগে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হলেও বছর না যেতেই খানা-খন্দকে ভর্তি হয়ে যায়। এখন পুরো রাস্তাটিজুড়েই খানা-খন্দকে ভর্তি। কোথাও একটু যায়গায় ভালো নাই। ফলে ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে পথচারিদের। রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুজ্জোহা রাস্তাটির কারণে মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘রাস্তাটি নিয়ে আমাদের বড় একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রায় ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি পাশ হতে সময় লাগবে। আমরা সম্প্রতি এই প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে। তার পরেও জনভোগান্তির বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা একেবারে ব্যাপক খারাপ স্থানে সোয়েলিংয়ের জন্য টেন্ডার আহ্বান করেছি। প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয় হবে এই কাজে। এটি করা গেলে কিছুটা দুর্ভোগ লাঘব হবে মানুষের।’ এদিকে জেলার কাটাখালি থেকে দুর্গাপুর প্রায় ২৫ কিলোমিটার রাস্তাটিও খানা-খন্দকে ভরে গেছে। কোথাও কোথাও রাস্তার একাংশ ভেঙে পাশের পুকুরের চলে গেছে। আবার কোথাও বড় বড় গর্তে সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুুষ চলাচল করছে এই রাস্তা দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। রাস্তাটিতে হরিয়ান থেকে চৌপুখরিয়া পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হতে পখথচারিদের। আবার অনেকেই এই রাস্তা পরিহার করে বিকল্প রাস্তাও ব্যবহার করছেন বাধ্য হয়ে। যদিও সেটি করতে গিয়ে অনেকটা পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এই রাস্তায় চলাচলকারী জেলার চৌপুখরিয়া গ্রামের কালম শেখ বলেন, ‘রাস্তাটি ভয়ঙ্কর হয়ে আছে। যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল করায় দায় হয়ে পড়েছে। তার পরেও মানুষ জীবনের ঝূঁকি নিয়ে চলাচল করছে বাধ্য হয়ে। আবার অনেকেই আমগাছী থেকে ভিতর দিয়ে হাড়িয়াপাড়া হয়ে রাজশাহী সহরে যাতায়াত করছেন।’ একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে রাজশাহীর পুঠিয়ার শিবপুর থেকে দুর্গাপুর উপজেলা সদর, দুর্গাপুর থেকে বাগমারার তাহেরপুর, তাহেরপুর-ভবানিগঞ্জ, ভবানিগঞ্জ-মচমইল, মাথাভাঙ্গা-বাইগাছা, পবার দামকুড়া থেকে গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট, পবার বড়গাছি থেকে দাউকান্দি, পবার বায়া থেকে তানোর উপজেলা সদরসহ আরো কয়েকটি রাস্তা বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। এসব রাস্তাও সংস্কারের অভাবে চলাচলের প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আবার কোনো কোনো রাস্তা সংস্কারের বছর খানেকের মধ্যেই ফের খানা-খন্দকে ভরে গেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে পবার বায়া থেকে তানোর উপজেলা সদর পর্যন্ত রাস্তাটি এক বছরের মধ্যেই বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তানোরে বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সংস্কার হতে দেখলাম কিছুদিন আগেই। আবার ভাঙতেও শুরু করে কয়েকদিন পরেই। এখন রাস্তাটির অধিকাংশ স্থানেই খানা-খন্দকে ভর্তি।

আপনি আরও পড়তে পারেন