থানায় গণধর্ষণের শিকার সেই গৃহবধূ জামিনে মুক্ত

খুলনা জিআরপি (রেলওয়ে) থানায় আটক রেখে গণধর্ষণের শিকার সেই গৃহবধূ মাদক মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। খুলনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (ফুলতলা আদালত) গতকাল বুধবার দুপুরে তার জামিন মঞ্জুর করেন।

গৃহবধূকে আইনি সহায়তাদানকারী বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মোমিনুল ইসলাম বলেন, গত ৯ আগস্ট শুনানিতে ওই গৃহবধূর জামিন মঞ্জুর করেনি আদালত। পরে ২৮ আগস্ট আবারও জামিনের আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে বিচারক তার জামিন মঞ্জুর করেন।

যশোর থেকে কমিউটার ট্রেনে খুলনায় আসার পথে গত ২ আগস্ট ফুলতলা রেলস্টেশনে জিআরপি পুলিশ সদস্যরা ওই গৃবধূকে মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে আটক করেন। রাতে তাকে খুলনা জিআরপি থানা হাজতে রাখা হয়। ৩ আগস্ট তার কাছ থেকে ৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখিয়ে আদালতে চালান দেওয়া হয়। খুলনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত ফুলতলার মাধ্যমে ওই দিনই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ৪ আগস্ট ওই গৃহবধূকে আদালতে জামিন শুনানির জন্য হাজির করা হলে তিনি জিআরপি থানায় রাতভর গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে আদালতের সামনে তুলে ধরেন।

এ সময় তিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উছমান গনি পাঠান, এসআই নাজমুল ইসলাম ও এসআই গৌতম পালসহ (মাদক মামলায় নিযুক্ত তদন্ত কর্মকর্তা) পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন। পরে আদালতের নির্দেশে ৫ আগস্ট খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (খুমেক) ওই গৃহবধূর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। তবে আদালত ছাড়া ডাক্তারি পরীক্ষার ফল মিডিয়াকে জানানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন মেডিক্যালের আরএমও ডা. অঞ্জন কুমার চক্রবর্তী।

এর পর পাকশী রেলওয়ে জেলা পুলিশের এসপি মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের নির্দেশে ধর্ষণের অভিযোগ তদন্তের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয় কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদকে। সদস্যরা হলেন কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের ডিআইও-১ পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) শ. ম. কামাল হোসেইন ও দর্শনা রেলওয়ে ইমিগ্রেশন ক্যাম্পের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. বাহারুল ইসলাম। এ কমিটি ৬ আগস্ট থেকে তদন্ত শুরু করে। ৭ আগস্ট ওসি উছমান গনি পাঠান ও এসআই নাজমুলকে ক্লোজড করে পাকশী নেওয়া হয়।

৮ আগস্ট পাকশী ও ঢাকা থেকে গঠিত পৃথক দুটি তদন্ত টিমের সদস্যরা আদালতের অনুমতি নিয়ে জেল গেটে ভিকটিমের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এর পর আদালতের নির্দেশে ৯ আগস্ট ৫ পুলিশের বিরুদ্ধে জিআরপি থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে ফিরোজ আহমেদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি তদন্তের শুরুতে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ভিকটিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৪ আগস্ট আবেদন করেন। আদালতের অনুমতি নিয়ে ২৬ আগস্ট তিনি জেল গেটে ভিকটিমকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন