যেভাবে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

যুব বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। চারবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে মাটিতে নামিয়ে বিশ্বসেরা হলো টাইগাররা। গ্রুপপর্ব থেকে কোয়ার্টার হয়ে সেমি, প্রতিপক্ষকে একচুলও ছাড় দেয়নি বাংলাদেশ। ভারতের গল্পটাও একই। টাইগার যুবাদের কাছে পাত্তা পায়নি স্বাগতিক সাউথ আফ্রিকা থেকে শুরু করে নিউজিল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দল। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ট্রফি নিয়েই ঘরে ফিরছে বাংলাদেশের যুবারা । এটাই বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা। রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) পচেফস্ট্রুমে চারবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে এ সাফল্য পেয়েছে তারা।

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে কোনও ম্যাচই হারেনি বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের একটি ম্যাচে বৃষ্টির কারণে ফল হয়নি। বাকি সবগুলো ম্যাচই জিতেছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।

আসরজুড়ে বাংলাদেশের ম্যাচগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যাবে শুধু ফাইনালই নয়, সবগুলো প্রতিপক্ষের উপর ছড়ি ঘুরিয়ে যুবাদের বিশ্বকাপে সেরা হয়েছে আকবর আলীর দল। শুরুটা গ্রুপপর্বে প্রথম প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়েকে দিয়ে।

বৃষ্টি ভেজা ম্যাচে পচেফস্ট্রুমে ২৮ ওভারে ১৩৭ পর্যন্ত তুলেছিল জিম্বাবুয়ের যুবারা। পরে বাংলাদেশের জন্য সেই লক্ষ্য নেমে আসে ২২ ওভারে ১৩২। ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমনের ৩৩ বলে ৫৮ রানের ইনিংসে প্রতিপক্ষ বোলারদের ছাতু বানিয়ে মাত্র ৬৮ বলেই ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ।

পরের ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেও একপেশে জয়। স্কটিশদের মাত্র ৮৯ রানে অলআউট করে ১৬.৪ ওভারে ম্যাচ ঘরে তোলে টাইগাররা। ২০ রানে ৪ উইকেট নেন স্পিনার রাকিবুল হাসান।

গ্রুপপর্বে বাংলাদেশকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতার মুখে ফেলেছিল পাকিস্তান। বৃষ্টি ভেজা মাঠে প্রথমে ব্যাট করে ১০৬ রান তুলতেই ৯ উইকেট হারিয়েছিল যুবারা। সে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত আর ফল দেখেনি। পাকিস্তানের চেয়ে শ্রেয়তর রানরেটে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ।

কোয়ার্টার ফাইনালে প্রতিপক্ষ সাউথ আফ্রিকা। যাদের বিপক্ষে ২০১৮, ২০১৯ সালে কোনো ম্যাচই খেলা হয়নি টাইগার যুবাদের। এ দুবছর দেখা না হলেও স্বাগতিকদের পাত্তা দেয়নি বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করে তানজিদ হাসান তামিমের ৮০ রানে ২৬১ রান তুলেছিল যুবারা।

এরপর বল হাতে জাদু দেখিয়েছেন রাকিবুল হাসান। বিশ্বকাপের হ্যাটট্রিকের কীর্তিতে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ১৯ রানে ৫ উইকেট নেন বাঁহাতি অফস্পিনার। প্রতিপক্ষকে ১৫৭ রানে অলআউট করে ১০৪ রানের জয়ে দ্বিতীয়বারের মতো যুব বিশ্বকাপে সেমির স্বাদ পায় বাংলাদেশ।

শেষ চারে নিউজিল্যান্ডকে হারাতেও সমস্যা হয়নি। ঠিক ১০০ রান করা মাহমুদুল হাসানের ব্যাট এনে দিয়েছে ৬ উইকেটের সহজ জয়। ওই জয়ে ভারতকে ফাইনালে পায় বাংলাদেশ।

ফাইনালেই সবচেয়ে বড় পরীক্ষায় পড়েছিল বাংলাদেশ। আরও একবার বোলাররা ভরসা দিয়েছেন। ভারতের মতো দলকে তারা ১৭৭ রানেই গুটিয়ে দেন। তবে শক্তিশালী ভারত হাল ছাড়েনি। দারুণ বোলিংয়ে ১৪৩ রানের মধ্যে বাংলাদেশের ৭ উইকেট তুলে নিয়ে শঙ্কায় ফেলে দিয়েছিল টাইগার সমর্থকদের।ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপ ট্রফিটা হাতে নিয়েই ছাড়লেন অদম্য আকবর আলী, পারভেজ হোসেন ইমনরা।

মাস তিনেক আগে এশিয়া কাপে ভারতকে ১০৬ রানে অলআউট করেও ৫ রানে হেরে গিয়েছিল এই যুবারা। তবে এবার আরও বড় মঞ্চে স্নায়ুচাপ ধরে রাখার কাজটা ভালোভাবেই করলো তারা।

রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসে অধিনায়ক আকবর আলী জানালেন তার রহস্য।

বললেন, ‘এটা অনেকটা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতোই। আমরা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। এটা গত দেড়-দুই বছরে আমাদের কঠোর পরিশ্রমের ফল।’

জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্যটা আহামরি ছিল না। মাত্র ১৭৮ রান। কিন্তু আকবর ঠিকই আঁচ করতে পেরেছিলেন, ভারতের অমন আগুনে বোলিংয়ে সামনে জয় সহজে ধরা দেবে না।

‘রান তাড়াটা যে কঠিন হবে, সেটা জানতাম। কারণ, ভারত সহজে ছেড়ে দেওয়ার দল নয়। তারা গোটা টুর্নামেন্টেই চমৎকার খেলেছে।’

আপনি আরও পড়তে পারেন