দোহারে সংবাদ প্রকাশের পরেও আবাসিক এলাকায় চলছে ইটের ভাটা, প্রশাসন নীরব

দোহার (ঢাকা) প্রতিনিধিঃ
ঢাকার দোহার উপজেলার নারিশা ইউনিয়নের উত্তর শিমুলিয়া জালালপুর নামক আবাসিক এলাকায় চলছে (এস.বি.আই) ইটের ভাটা। দেখার কেউ নাই। প্রশাসন নীরব ভূমিকায়, দেখেও যেন না দেখার ভান করছে।
এই ইট ভাটার কালো ধোয়া বাতাসের সাথে মিশে পরিবেশের উপাদান বায়ুকে করছে দূষিত। যার ফলে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে পৃথিবী হচ্ছে উত্তপ্ত। যার দরুণ দেখা দিচ্ছে খড়া, অনাবৃষ্টি ও ভয়াবহ বন্যা। এছাড়া ইট ভাটার বিকট আওয়াজে শব্দ দূষণ, ধুলা বালিতে বায়ু দূষন, আশে পাশের ফসলী জমির মাটি দূষণ, গাছ পালার ব্যাপক  ক্ষয়ক্ষতিসহ গাছের ফলন কমে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
উত্তর শিমুলিয়ার আক্তারুজ্জামান খালাসী অভিযোগ করে বলেন, এই ভাটার কারনে আমার আম বাগানের প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে।  ধুলাবালির কারণে আশেপাশের  ঘরবাড়ি, গাছপালা, রাস্তাঘাট নষ্ট  হয়ে যাচ্ছে। আম গাছের মুকুল ঝরে পরছে, নারিকেল গাছের নারিকেল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই ইট ভাটা এখান থেকে সরিয়ে দিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি করছি।
সড়েজমিনে গিয়ে দেখা যায় এ ভাটার কাচামাল হিসেবে ব্যবহারিত হচ্ছে ফসলি জমির উপরের উর্বর মাটির অংশ বা টপ সয়েল। এতে কৃষকরা হারাচ্ছে ফসলি জমি এবং কমে যাচ্ছে ফসল উৎপাদন। এছাড়া ইট ভাটায় চলছে শিশু শ্রম ও শ্রমিক নির্যাতনের মত নির্মম ঘটনা। আবার ভাটার কাচামাল পরিবহনের জন্য ব্যবহারিত হচ্ছে মাহেন্দ্র। যার ফলে অচিরেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত রাস্তা ঘাট। এসব মাহেন্দ্রার চালকদের নাই কোন প্রকার ড্রাইবিং লাইসেন্স এবং অনেক মাহেন্দ্র চালকের বয়স ১৮ এর নিচে। ফলশ্রুতিতে ঘনঘন ঘটে চলেছে মারাত্মক দূর্ঘটনা। এছাড়া বিকট শব্দ ও ধুলাবালির কারনে মানুষের নানা ধরনের ফুসফুসীয় রোগ দেখা দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে “দোহারে নিয়মনীতি ছাড়াই চলছে (এস.বি.আই) ইটের ভাটা” শিরোনামে দৈনিক আগামীর সময় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে (এস.বি.আই) ইট ভাটার মালিক পক্ষ দৈনিক আগামীর সময় পত্রিকার দোহার প্রতিনিধি মহিউল ইসলাম পলাশের বিরুদ্ধে দোহার থানায় একটি চাঁদাবাজির অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু দোহার প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামরুল হাসান এবং সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমানের আইনি প্রক্রিয়ায় থানায় মামলাটি রুজু করা হয়নি। এখন আবার নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছে  ইটভাটার মালিক পক্ষ।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ সনের ৫৯ নং আইনের ধারা ৮ এর উপ-ধারা ১ এ বলা হয়েছে, “আপাতত বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক আর না থাকুক এই আইন কার্যকর হইবার পর নিন্মেবর্ণিত এলাকার সীমানার অভ্যন্তরে কোন ব্যক্তি কোন ইট ভাটা স্থাপন করতে পারবে না”। ধারা ৮ এর উপধারা ১ এর (ক) তে বলা হয়েছে, ” আবাসিক, সংরক্ষিত বা বানিজ্যিক এলাকায়”। আবাসিক অর্থাৎ যেখানে কমপক্ষে পঞ্চাশ (৫০) টি পরিবার বসবাস করে এমন এলাকা।(গ) তে বলা হয়েছে, সরকারি  বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অরণ্য, বাগান বা জলাভূমি”। বাগান অর্থাৎ যেখানে হেক্টর প্রতি একশত (১০০) ফলজ বা বনজ বা উভয় ধরনের গাছ রয়েছে। (ঘ) তে বলা হয়েছে, “কৃষি জমি”। ধারা ৮ এর উপধারা ২ এ বলা হয়েছে, ” এই আইন কার্যকর হবার পর, নিষিদ্ধ এলাকার সীমানার অভ্যন্তরে ইটভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর, বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কোন আইনের অধীন কোনরুপ অনুমতি বা ছাড়পত্র বা লাইসেন্স যে, নামেই অভিহিত হউক, প্রদান করিতে পারবে না”। কিন্তু এরা কিভাবে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, লাইসেন্স, ডিসির অনুমতি পাইল?
এছাড়া ১৮নং ধারায় বলা হয়েছে, “ধারা ৮ এর উপধারা ১ লঙ্ঘন করে যদি কেউ ইটভাটা স্থাপন করে, তাহলে তাকে অনধিক পাঁচ (৫) বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ (৫) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় যথাযথ  কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে না নিয়ে এড়িয়ে যায়। তাই বিষয়টি দেখার জন্য উর্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

আপনি আরও পড়তে পারেন