চাইলেন সাহায্য, ৫০ টাকা দিয়ে বের করে দিলেন ইউএনও

 

 

সোমবার দুপুর ১২টা। চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরকার মোহাম্মদ রায়হানের অফিসকক্ষ থেকে অশ্রুসজল চোখে বের হয়ে এলেন এক নারী। বাইরে বের হয়েই সামনের সিঁড়িতে বসে পড়লেন তিনি। ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছেন খোলা আকাশের দিকে। পাশেই একটি গামলায় রাখা কয়েক আঁটি ডাটার শাক। ডালার এক কোণের প্যাকেটে রয়েছে এক ব্যক্তির দেওয়া ১ কেজি চাল।

কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন, ‘ঘরে খাবার নেই, ইউএনও স্যারের কাছে চাইতে এসেছিলাম। তিনি ৫০ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে দূর দূর করে ঘর থেকে বের করে দিলেন। যেতে বললেন চেয়ারম্যান-মেম্বারের কাছে।’

ওই নারীর নাম আঞ্জুয়ারা খাতুন (৩৫)। পাবনার চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের ভাদ্রা গ্রামে অন্যের জমিতে ছাপড়া ঘরে অসুস্থ স্বামী ও দুই ছেলেকে নিয়ে বসবাস করেন এই নারী। করোনাভাইরাসের কারণে উপজেলাকে অঘোষিত লকডাউনের পর থেকেই ঘরে খাবার নেই এই নারীর।

জানা গেল, স্বামী অসুস্থ হয়ে বিছানা শয্যা হওয়ার পর থেকেই তিনি বাড়ি বাড়ি ঘুরে শাক বিক্রি করেন এবং মানুষের বাড়ি কাজ করে অর্ধাহারে অনাহারে সংসার চালান। তবে করোনভাইরাসের প্রভাবে বাসা-বাড়ির কেউ শাক কেনেন না বা বাড়িতে ঢুকতেও দেন না। বন্ধ হয়ে গেছে বাসা-বাড়ির কাজও। তাই সোমবার দুপুরে ইউএনও সরকার মোহাম্মদ রায়হানের কাছে খাবারের জন্য গেলে তিনি ইউপি চেয়ারম্যান বা মেম্বরের কাছে যেতে বলেন। পরে নাছোড়বান্দা ওই নারী খাবারের জন্য আকুতি জানালে ইউএনও তার হাতে ৫০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আঞ্জুয়ারা খাতুন বলেন, ‘কোনোদিন কারো কাছে হাত পাতিনি! কিন্তু উপার্জন বন্ধ হওয়ায় খাবার চাইতে এসেছিলাম। ইউএনও স্যার ধমকের সুরে ৫০ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিলেন। পরে আপনার সাথে কথা বলা দেখে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তার ওপর গাড়ি দাঁড় করিয়ে আমাকে এক প্যাকেট খাবার দিয়েছে এবং ভুল স্বীকার করেছে।’

ইউএনও সরকার মোহাম্মদ রায়হান বলেন, ‘তখন আমি ব্যস্ত ছিলাম। দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলে তো আমি ৫০ টাকা দিতাম না। ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও দিল আবার আমিও দিলাম। এতে ডাবলিং হতে পারে। তাই যাচাই করে পরে ওই মহিলাকে (আঞ্জুয়ারা) খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।’

আপনি আরও পড়তে পারেন