মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো দোহার থানা পুলিশ

 রাত আনুমানিক ১.০০ টা বাজে। পুরো দোহার বাসি যখন ঘুমে বিভোর । তখন জয়পাড়া বাজার ডিউটি অবস্থায় দোহার পুলিশ দেখতে পায় দুইজন মহিলা একজন পুরুষ, একজন প্রসব বেদনায় কাতর গর্ভবতী মহিলাকে নিয়ে এলোমেলো দিশেহারা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তখন টহলরত এ.এস.আই তুহিন পারভেজ সঙ্গীয় ফোর্সসহ তাদের সহোযোগিতায় এগিয়ে যায় এবং মহিলার প্রসব যন্ত্রণা দেখে দোহার থানা অফিসার ইনচার্জ জনাব সাজ্জাদ হোসেন এবং অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) জনাব আরাফাত হোসেন কে তৎক্ষনাৎ ফোনে তাহার অবস্থা জানান। ঐ মূহুর্তে ওসি স্যার দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে সার্বিক সহোযোগিতার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন‌ এবং তিনি নিজে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কে ফোন দেন এবং ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন। অফিসার ইনচার্জ এর অনুমতি সাপেক্ষে ওই মুহূর্তে প্রসব বেদনায় কাতর মহিলাকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যায় ।কিন্তু ওখানে দায়িত্ব রত ডাক্তার বলেন যে আমাদের এখানে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই উনাকে অন্য কোথাও নিয়ে গেলে আরো ভালো চিকিৎসা পাবেন । পরবর্তীতে ওই দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যগণ ওই মহিলাকে ওখান থেকে নিজেদের তত্ত্বাবধানে নিকটস্থ জয়পাড়া ক্লিনিকে নিয়ে যান। ওই মুহূর্তে রাত দুটো 20 মিনিট বাজে। কিন্তু ওই ক্লিনিকে গাইনি ডাক্তার না থাকায় পুনরায় অফিসার্স ইনচার্জ সাহেবের নির্দেশক্রমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের‌ গাইনি ডাক্তার শিউলি আক্তার কে পুলিশের গাড়িতে করে জয়পাড়া ক্লিনিকে নিয়ে আসা হয় । তারপর তিনি ওই রোগীকে অবজারভেশন করেন এবং তার চিকিৎসা শুরু করেন। ওই সময় ডাক্তার রোগীর অবস্থা দেখে বলেন যে রোগীর অবস্থা বেশি ভালো না দুজন রক্তদানকারী প্রয়োজন দুই ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করতে হবে। তখন পুনরায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানালে তিনি রাতের থানায় ডিউটি অফিসার শেখ মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন এর মাধ্যমে থানার যত পুলিশ সদস্য‌ রয়েছে তাদেরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলেন এবং এদের ভেতর থেকে দুইজন রক্ত দাতা সংগ্রহ করেন। রাত যখন তিনটা বাজে তখন থানা থেকে 2 জন পুলিশ সদস্য মহিলাকে রক্ত দানের উদ্দেশ্য হসপিটালে যান এদের মধ্যে একজন প্রবেশনার সাব-ইন্সপেক্টর মশিউর রহমান এবং আরেকজন কনস্টেবল মোসলেম। তাদের ব্লাড গ্রুপ বি পজেটিভ ক্রস ম্যাচ করে। তারপরে ডাক্তার শিউলি আক্তার চিকিৎসা শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বলেন এই রোগীকে এখানে চিকিৎসা করা সম্ভব হবে না । বাচ্চার ওজন তিন কেজি 800 গ্রাম এবং মহিলার শ্বাসকষ্ট থাকার কারণে ডাক্তার তাকে ঢাকায় রেফার্ড করেন। পরবর্তীতে অফিসার ইনর্চাজকে অবহিত করা হলে তিনি দায়িত্বরত এএসআই তুহিনকে নির্দেশ দেন ।তাহার নির্দেশক্রমে একটা এম্বুলেন্স ভাড়া করে সুচিকিৎসার জন্য ঢাকার উদ্দেশ্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এ এস আই তুহিন এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখেন। অদ্য 23 এপ্রিল আনুমানিক বেলা পৌনে 2 ঘটিকার সময় তাদের একটা কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। তারা দুজনেই আল্লাহর রহমতে ভালো আছে। আমরা দোয়া করি তারা যেন ভালো থাকে সুস্থ থাকে। অফিসার ইনচার্জ তাদের আশ্বস্ত করেন বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে তাদের সকল প্রকার সহযোগিতা আমাদের পক্ষ থেকে অব্যাহত থাকবে। চলমান মহামারীর এই পরিস্থিতিতে আমরা পুলিশ সদস্যরা সর্বদা যে কোন অবস্থায় মানুষের সেবা দিতে প্রস্তুত আছি। এই মহামারিতে আমরা জানিনা বাড়িতে ফিরে যেতে পারবো কিনা আমাদের মা বাবা ছেলে সন্তানের কাছে। কিন্তু আমরা চাই আপনারা আপনাদের ছেলে সন্তান নিয়ে ভালো থাকুন। তাই আপনাদের সেবা করার জন্য আমরা বাইরে আছি দয়া করে আপনারা সবাই ঘরে অবস্থান করুন নিরাপদে থাকুন সুস্থ থাকুন।

আপনি আরও পড়তে পারেন