বৃদ্ধ মা-বাবার ঠাঁই হলো বিদ্যালয়ের বারান্দায়

শুধু পেটের ক্ষুধা মেটানোর জন্য সন্তানদের কাছে খাবার চাওয়ায় কাল হলো বৃদ্ধ বাবা-মায়ের। ফলশ্রুতিতে নিজ বাড়ি থেকে বিতারিত হলেন জামেরুল ইসলাম (৭০) ও রাশেদা বেগম (৬৫)। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত সন্তানরা। তারা জানান, বাড়ি মেরামত করার জন্য তাদের বাইরে থাকতে বলা হয়েছে।

রোববার দুপুরে নাটোরের গুরুদাসপুর উত্তর নাড়িবাড়ি এলাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে এলাকায় তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে। একই সঙ্গে স্থানীয়রা সঠিক তদন্ত করে অভিযুক্ত সন্তানদের শাস্তির দাবি জানান।

বৃদ্ধা মা রাশেদা জানান, একসময়ে তাদের সহায় সম্পত্তি সবই ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে তার স্বামী প্যারালাইজড হওয়ার পরে তার চিকিৎসার জন্য জমানো টাকা ও জমিজমা বিক্রয় করা হয়। তাদের শেষ সম্বল বলতে ছিল তিন শতক জমি।

তাও তিন ছেলে জালাল উদ্দিন (৪৫) আলাল শেখ (৪২) ও রসুল উদ্দিন (৩৮) ভরণপোষণের আশ্বাস দিয়ে কৌশলে লিখে নেন। এরপর থেকে শুরু হয় তাদের ছেলেদের খারাপ ব্যবহার, বন্ধ করে দেন ভরণপোষণ। এতে চরম কষ্টে দিন কাটছিল তাদের।

সর্বশেষ রোববার সকালে ছোট ছেলে মোফাজ্জলের কাছে খাবার চান রাশেদা বেগম। তখন তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার শুরু করেন মোফাজ্জল। এক পর্যায়ে বৃদ্ধ দম্পতিকে বাড়ি মেরামতের অজুহাতে দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন তারা। এ সময় উপায়ন্তর না পেয়ে পাশের শহীদ মবিদুল উচ্চ বিদ্যালয়ের বারান্দায় আশ্রয় নেন বৃদ্ধ দম্পতি।

পরবর্তীতে স্কুলে মিটিং করতে এসে ওই দৃশ্য দেখে তাদের একটি কক্ষ খুলে দেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ সময় পেটের ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কমিশনার মুজিবুর রহমানের কাছে ত্রাণ সহায়তা চান। কিন্তু ত্রাণের তালিকায় তাদের নাম দিতে বারণ করেন ছেলেরা।

স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার মুজিবুর রহমান বলেন, ত্রাণের জন্য বৃদ্ধা আমার কাছে এসেছিলেন। আমি মাঝে মধ্যে ত্রাণ সহায়তা দিয়ে থাকি। ছেলে ও ছেলেদের স্ত্রী কেউ দেখতে পারে না, তাই ওই স্কুলে গিয়ে থাকে। এছাড়া বৃদ্ধ মা-বাবাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার ঘটনা তিনি শুনেছেন বলে জানান।

বৃদ্ধ বাবা-মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া প্রসঙ্গে তাদের বড় ছেলে জালাল উদ্দিন জানান, তার বাড়ি মেরামত করা হচ্ছে। তাই কয়েক দিনের জন্য তাদের বাড়ির বাইরে থাকতে বলা হয়েছে।
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোজাহারুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনাটি তার জানা নেই। অভিযোগ সত্য হলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন