গত নয় মাসে ধর্ষণের শিকার ৯৭৫ নারী

 

গত ৯ মাসে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯৭৫ জন নারী। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২০৮ জন নারী। এছাড়া ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৩ জন হতভাগা নারী। আর আত্মহত্যা করেছেন ১২ জন নারী।

গড়ে প্রতিদিন তিনটির বেশি ধর্ষণের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও নারী-শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন ও নিপীড়নের মতো আরো অনেক ঘটনা রয়েছে, যেগুলো অপ্রকাশিতই থেকে যায়। একের পর এক এমন ঘটনার জন্য বিচারিক প্রক্রিয়ার দীর্ঘ সূত্রিতা ও দ্রুত বিচারের রায় কার্যকর না হওয়াই দায়ী।

বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে ধর্ষণের বিরুদ্ধে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এসব তথ্য তুলে ধরেন। দুপুরে প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা দিনব্যাপী এ কর্মসূচির আয়োজন করে।

সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, ‘নয় মাসে ৯৭৫টি ধর্ষণের ঘটনা উদ্বেগজনক। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে খাগড়াছড়িতে ভারসাম্যহীন নারীকে নয়জন মিলে ধর্ষণ, সিলেট এমসি কলেজে স্বামীকে বেধে রেখে এক নববধূকে গণধর্ষণ, রাজশাহীর তানোরে তিনদিন বেঁধে রেখে গির্জায় ফাদার কর্তৃক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনা আলোচিত। এছাড়াও চলতি অক্টোবরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, জামালপুর, গোপালগঞ্জ, নোয়াখালী ও দিনাজপুরে বেশ কয়েকটি নারী-শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে।’

রংপুরে তৃতীয় দিনের মতো অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন- প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা শাহাদত হোসেন, জেলা বাসদের সমন্বয়ক আব্দুল কুদ্দুস, নাট্য ব্যক্তিত্ব ডা. মফিজুল ইসলাম মান্টু, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর শ্বাশত ভট্টাচার্য্য, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা দেবদাস ঘোষ দেবু, রংপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রফিক সরকার প্রমুখ।

এ সময় সমাবেশ থেকে অবিলম্বে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি নিশ্চিত করতে সরকার প্রধানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, ‘সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে গণধর্ষণের পর নোয়াখালীতে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন। এভাবে একের পর এক ধর্ষণ ও নারীর প্রতি নিপীড়ন, নির্যাতন বেড়েই চলছে। একটি ঘটনার সমাধান না হতেই আরেকটি ঘটনা এসে আগের ঘটনাকে আড়াল করে দিচ্ছে। ঘটনাগুলোর শেষ কি তা জনসম্মুখে আসছে না। সমস্ত ঘটনার বিচারিক প্রক্রিয়ার দীর্ঘ সূত্রিতা ও রায় কার্যকরে কালক্ষেপণের কারণে আজ নুসরাত, তনু, রুপারা কবরেও কাঁদে। আর ধর্ষকরা, অপরাধীরা অট্টহাসি হাসি হাসে। ধর্ষকের হাসি রুখতে ফাঁসি দিতে হবে।’

এদিকে সকাল থেকেই রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্ল্যাকার্ড হাতে জড়ো হতে থাকে। পরে দুপুর ১১টা থেকে শুরু হয় প্রতিবাদ কর্মসূচি। এতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, শুভ সংঘ, পল্লীশ্রীসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

এছাড়াও ধর্ষণের প্রতিবাদে উত্তাল রংপুর মহানগরীর গ্রান্ডহোটেল মোড় বিএনপি, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধু পরিষদ, টাউন হল প্রজন্ম চত্বরে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন মানববন্ধন সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে। নগরীর ডিসির মোড় বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল চত্বরে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে প্রতীকী ফাঁসির মঞ্চ, পথ নাটক ও সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্বলনে দিনব্যাপী প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করছে ফেসবুক ভিত্তিক সংগঠন নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও দমন গ্রুপ।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন