মাঠের লড়াই শেষে প্রার্থীরা আস্থা রাখছেন ইভিএমে

প্রথমবারের মতো শনিবার (০৯ অক্টোবর) চাঁদপুর পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে শেষ সময়েও ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন। 

এতে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর প্রধান বিরোধীদল বিএনপির মেয়রপ্রার্থীও ইভিএমের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও সমর্থন জানিয়েছেন। শেষমূহূর্তে এই দুই দলের কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন এবং জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা তাদের দলের মেয়রপ্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন।

এতে প্রার্থীরাও ইভিএমের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও সমর্থন জানিয়েছেন। শেষমুহূর্তে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন প্রার্থীরা।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তোফায়েল হোসেন জানান, শনিবার (১০ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ইভিএম পদ্ধতিতে পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডে একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। এতে চাঁদপুর পৌরসভার এই ১৫টি ওয়ার্ডে এক লাখ ১৬ হাজার ৪৮৭ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

এই নির্বাচনে মেয়রপদে তিনজন এবং সাধারণ কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলরসহ ৬৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে প্রার্থীদের প্রচারণা শেষ হয়েছে। চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র পদে যে তিন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা হলেন; আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান জুয়েল (নৌকা), বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আক্তার হোসেন মাঝি (ধানের শীষ) এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মামুনুর রশিদ বেলাল (হাতপাখা)।

এদিকে আওয়ামী লীগের নৌকার মেয়রপ্রার্থী অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান জুয়েল তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। এতে ঐতিহ্য, বাণিজ্য ও পর্যটননির্ভর নান্দনিক চাঁদপুর গড়ার কথা বলেছেন এই মেয়রপ্রার্থী।

এ ছাড়া বিএনপির ধানের শীষের আক্তার হোসেন মাঝি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মামুনুর রশিদ বেলাল পৃথকভাবে তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন।

আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট মনোনীত মেয়রপ্রার্থী নৌকা প্রতীকের অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান জুয়েল ছাত্রজীবনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক। মেয়রপদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরুতে প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন তিনি। ওই সময় বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী আক্তার হোসেন মাঝিকে নিয়ে একসঙ্গে মিছিল করেন। এতে যোগ দেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই রাজনৈতিক দলের সহস্রাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থক। শুধু তাই নয়, জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে নৌকা প্রতীকের ব্যানার অপসারণ এবং ধানের শীষ প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ে গিয়ে একসঙ্গে বসে গল্প করে চায়ের কাপে ঝড় তোলেন জুয়েল। এমন আচরণের কারণে নিজ রাজনৈতিক সতীর্থদের বাইরেও এখন সাধারণ ভোটারের আলোচনায় জুয়েল।

অন্যদিকে, চাঁদপুর সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদের একসময়ের নির্বাচিত ভিপি আক্তার হোসেন মাঝি এখন বিএনপি নেতা। দলের বাইরেও তার ব্যক্তিগত ইমেজ রয়েছে। ইভিএমে ভোট হচ্ছে তাই ভোটের পরিবেশ নিয়ে তার কোনো অভিযোগ নেই। একই সঙ্গে নৌকা প্রতীকের মেয়রপ্রার্থীও ইভিএমের প্রতি পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করে ভোটের ফলাফল মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে বড় দুই দলের মেয়রপ্রার্থী ফুরফুরে মেজাজে থাকলেও জয়ের ব্যাপারে কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ঘটাতে তাদের ঘুম হারাম। বাদ যাচ্ছেন না কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। কারণ, ইভিএমে ভোট। তাই টেনশন প্রতিদ্বিন্দ্বী এসব প্রার্থীদের পিছু ছাড়ছে না।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, কেন্দ্রের শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত করা হবে। তাছাড়া বাইরে বিজিবি, র‌্যাব, আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটকেন্দ্র এবং শহরের পরিবেশ নিরাপদ রাখতে শুক্রবার জেলা পুলিশ লাইনন্সে বিশেষ সমাবেশ করেন জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সদস্য ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এতে দায়িত্ব পালনে সবাইকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের নির্দেশ প্রদান করেন তিনি।

মেয়াদপূর্ণ হওয়ায় চলতি বছরের মার্চ মাসে চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচনের কয়েক দিন আগে বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী সফিকুর রহমান ভূঁইয়া মারা যান। ফলে নতুন করে বিএনপি মেয়রপ্রার্থীর জন্য তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

আপনি আরও পড়তে পারেন