জীবনের পড়ন্ত বেলায় সরকারি সহযোগিতা চান রংপুরের গঙ্গাচড়ার ছগির উদ্দিন বয়াতি

জীবনের পড়ন্ত বেলায় সরকারি সহযোগিতা চান রংপুরের গঙ্গাচড়ার ছগির উদ্দিন বয়াতি

মারুফা জামান, গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি:

ছগির উদ্দিন বয়াতি। রংপুর অঞ্চলের একটি পরিচিত নাম। সদা হাস্যোজ্জ্বল সংগীতপ্রেমী একজন মানুষ। চলতে ফিরতে মানুষকে আনন্দ দেওয়াই যার কাজ। তিনি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর গ্রামের তিস্তা বিধৌত শংকরদহ গ্রামে ১৯৬৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও সে গ্রামটি এখন নেই।

বাবা বশির উদ্দিন বয়াতি। ভাই ছফর উদ্দিন বয়াতি। ছগির উদ্দিন বয়াতি খুব অল্প বয়সেই বাবার কাছে মন্দিরা বাজানো শিখেন। আর ভাইয়ের কাছে শিখেন দোতরা বাজানো। সেই দোতরাই এখন তার জীবনের সঙ্গী, জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। এক সময় ছগির উদ্দিন বয়াতির কাওয়ালি ও জারি গান শোনার জন্য মানুষ আগ্রহ ভরে অপেক্ষা করত।

ছগির উদ্দিন বয়াতি একাধারে শিল্পী, গীতিকার ও সুরকার। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লিখেছেন ২০টি গান। নিজে সুর করেছেন, গেয়েছেন। শেখ হাসিনা ও শেখ রাসেলকে নিয়েও লিখেছেন।

এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গান হচ্ছে ‘কী অপরাধ করেছিল শেখ মুজিবের সন্তান, এত সুন্দর দুধের শিশুকে মারিল কোন পাষাণ’।তিনি শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লিখেছেন, ‘বীর বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, স্বাধীনতা পাইলাম আমরা তারই অবদান’ কিংবা ‘রক্ত দিয়ে এই দেশটা করেছে স্বাধীন, আমরা কি পারব শোধ করিতে সেই রক্তের ঋণ।’

আরো লিখেছেন, ‘আমার ভাগ্য হয়েছে গো মুজিবকে দেখিতে, হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে ছিল রংপুর ষ্টেশনেতে।’ গেয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের গান। বেগম রোকেয়াকে নিয়েও গান লিখেছেন। এছাড়াও তিনি লিখেন জারি, কীর্তন, গুরুভক্তি, লোকগীতি, মারুফতি ও মুর্শিদী গান। তিন শতাধিক গান তিনি লিখেছেন, সুর করেছেন এবং গেয়েছেন।

তার অনেক গান বাংলাদেশ বেতারেও বাজে।কথা হয় ছগির উদ্দিনের সঙ্গে তার বাড়িতে। তিস্তার ধার ঘেঁষে ডানতীর রক্ষা বাঁধে টিনশেড ঘর। এরই মাঝে ঘর থেকে বের করলেন সেই দোতরা। একে একে শোনালেন অনেক গান।গানের ফাঁকে ফাঁকে বলেন, জীবনের পাওয়া না পাওয়া আর হতাশা ও ব্যর্থতার শতকথা।

জীবনের শুরুতেই আসে নানা ঘাত-প্রতিঘাত। সবচেয়ে বড় আঘাত তার আর্থিক দৈনদশা। নদীভাঙ্গা মানুষ হলেও হাল ছাড়েননি গানের। এক সময় ট্রেনে গান গেয়ে সংসার চালাতেন। এরই ফাঁকে সুযোগ হয় বেতারে। ১৯৭৪ সালে বেতারে জারি ও মারুফতি গান গেয়ে শুরু হয় নতুন জীবন।

পরবর্তীকালে ২০০১ সালে রংপুর বেতার কেন্দ্রে দোতরা বাদক হিসেবে অস্থায়ী চাকরি পেয়ে যান। সেই বছরই গীতিকার হিসেবেও স্বীকৃতি পান তিনি। তাছাড়া বিটিভি, বৈশাখী, একুশে এবং এটিএন বাংলায় কিছু প্রোগাম করেছেন তিনি। দুঃখ করে বলেন, গরিব বলেই পিছিয়ে থাকলাম। পরিবারে এক ছেলে ও দুই মেয়ে। ছেলে সিরাজউদ্দিন বেতার শিল্পী।

মেয়েরাও সংগীতের সঙ্গে জড়িত। স্ত্রী জাহেরা বেগমও একসময় গান করতেন।সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাননি বলে তার বিশেষ আক্ষেপ। স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৬ সালে লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে তাকে কৃতি সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

এছাড়া ২০১৯ সালে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি তাকে সম্মাননা প্রদান করেন। কিন্তু জীবনের পড়ন্ত বেলায় কেউ তার খোঁজ নেয় না বলে দুঃখ প্রকাশ করেন সংগীতপ্রেমী ছগির উদ্দিন বয়াতি।

আপনি আরও পড়তে পারেন