‘সেকন্ড ওয়েভ সামলানোর আত্মবিশ্বাস বাংলাদেশের করোনাযোদ্ধাদের আছে’

‘সেকন্ড ওয়েভ সামলানোর আত্মবিশ্বাস বাংলাদেশের করোনাযোদ্ধাদের আছে’

করোনাকালের প্রথম ঢেউ বাংলাদেশের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা শক্তহাতে সামলেছেন। অন্যান্য পেশাজীবীরাও নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করেছে। এতে হয়তো তাদের বেশিরভাগই ভীষণ শারীরিক-মানসিক-আর্থিকভাবে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছেন বাংলাদেশের করোনাযোদ্ধারা। সেটাই সেকেন্ড ওয়েভ সামলাতে সাহায্য করবে। বললেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এমএইচ চৌধুরী লেলিন।

শনিবার (২৮ নভেম্বর) রাতে ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড ডেভলপমেন্ট (আইইডি) এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি’র (ইউএনডিপি) যৌথ আয়োজিত ডাইভারসিটি টকসে এসব কথা বলেন তিনি। সাংবাদিক মুন্নি সাহার সঞ্চালনায় ‘করোনাকালে মানবিক উদ্যোগের কারিগরেরা’ শীর্ষক আলোচনাটিতে করোনাকালে মানবিক সহায়তায় অবদান রাখা ডা. এম এইচ লেলিন চৌধুরী ছাড়াও আরো ৫ করোনাযোদ্ধা অংশ নেন।

তারা হলেন গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার শামসুন্নার পিপিএম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভীর হাসান সৈকত, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবী সালমান বিন ইয়াসিন, দৈনিক দেশ রূপান্তরের ফটোসাংবাদিক হারুন অর রশিদ রুবেল এবং বাংলাদেশ হুইলচেয়ার ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মহসিন।

ডা. এম এইচ চৌধুরী লেলিন আরো বলেন, করোনাকালের শুরুতে অনেক হাসপাতাল বন্ধ হয়েছে। ওই সময়কালে কি ক্ষতি হবে, সেটা বিবেচনা করিনি। আমরা মনে করেছি, এটাই আমাদের প্রথম পেশাগত দায়িত্ব। মানবিক দায়িত্ব তো বটেই।

তিনি বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়েই আমরা হাসপাতালে রোগী ভর্তি করেছি। সেবা দিয়েছি। এতে আমাদের অর্ধেকের বেশি চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। আর্থিক ক্ষতি তো হয়েছেই। কিন্তু এই লড়াইয়ে আমরা আমত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছি।

তিনি বলেন, করোনার ভ্যাকসিন এলেও এখনকার যে বাস্তবতা, এটা সত্য কথা যে, আমাদের আগামী জীবন করোনা নিয়েই চলতে হবে। কিন্তু এটাও সত্য, এখান থেকে মুক্তির একটা পথ আমরা ঠিকই বের করতে পারবো।

পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার বলেন, করোনা আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত করেছে। দরিদ্র মানুষের রুটি-রুজি কেড়ে নিয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় করা একা সম্ভব নয়। সব পেশার সব মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবী সালমান খান ইয়াসিন বলেন, মানুষের অর্থায়নেই চলে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। মানুষ এগিয়ে এসেছে বলেই বিদ্যানন্দ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছে।

তিনি বলেন, এমন সংকটের দিনে বিপদে পড়া মানুষ যখন চোখে অন্ধকার দেখছে, তখন আমরা বসে থাকতে পারিনি। আমরা জানি, ছিন্নমূল মানুষরা দৈনিক দুবেলা আহার জোগাড় করতেই হিমশিম খান, সেখানে করোনার এই দিনে কাজহীন অবস্থায় তারা আরও বিপদে পড়বেন, এটাই স্বাভাবিক।

তিনি বলেন, আমরা মনে করেছি, দ্রুততম সময়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। কিছু মানুষ আমাদের দেয়া খাবার নিয়ে যদি তাদের পরিবার নিয়ে পেটপুরে খেতে পারেন, খেটে খাওয়া মানুষ যদি কিছুটা উপকার পান, এর চেয়া আর কী হতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রতিদিন কয়েক হাজার ছিন্নমূল মানুষের মুখে খাবার তুলে দেয়া শিক্ষার্থী তানভীর হাসান সৈকত বলেন, মানুষের খাবারের প্রতি যে আকাঙ্ক্ষা সেটা বাস্তবতার মুখোমুখি না হলে বোঝানো যাবে না। আমরা টিএসসি থেকে শুরু করে রাজধানী ঘুরে ঘুরে দেখেছি খাবারের জন্য মানুষের হাহাকার। একজন অনাহারী মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার পর যে হাসি সেটা কোটি টাকার চেয়েও মূল্যবান।

তিনি বলেন, মানুষের সেবা করা ব্যক্তিগত তৃপ্তিবোধের বিষয়। আমি মানুষের জন্য কাজ করতে পারলেই একটা অন্যরকম সুখ অনুভব করি। ভবিষ্যতেও আমি এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখবো।

আপনি আরও পড়তে পারেন