ভাস্কর্য বিরোধিতাকারীদের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী নয় আ.লীগ

ভাস্কর্য বিরোধিতাকারীদের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী নয় আ.লীগ

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতাকারীদের সঙ্গে কোনো আলোচনায় যেতে চায় না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে অনড় দলটি। সোমবার (৭ ডিসেম্বর) সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানা গেছে।

তারা জানান, স্বাধীনতাবিরোধী একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী গোষ্ঠী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি বা ভাস্কর্য সংরক্ষণ সাংবিধানিকভাবেই বিধিবদ্ধ বিষয়। এটা নিয়ে আলোচনার কিছু নেই। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সম্প্রতি রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতায় নেমেছে কয়েকটি ইসলামি সংগঠন। ইসলামি জীবন বিধান অনুযায়ী কোনো প্রাণীর মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ নিষিদ্ধ বলে তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।

প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ ও সরকার বিষয়টি পর্যবেক্ষণের অবস্থান নিলেও ওই সংগঠনগুলোর লাগাতার বক্তব্য, বিবৃতি ও সর্বশেষ কুষ্টিয়ার ঘটনার পর সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য তৈরির বিরোধিতা ও ভাঙচুর করা বাংলাদেশের অস্তিত্ব, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানের ওপর আঘাত বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের অবস্থান থেকে তারা সরে আসবেন না। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ ও সরকারের অবস্থান অনড়। কুষ্টিয়ার ঘটনার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কদেরের বক্তব্যেও সরকারের অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে।

এদিকে ভাস্কর্যের বিরোধিতাকারী সংগঠনগুলোর নেতারাও তাদের অবস্থানে অনড়। তারা দাবিগুলো নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চান। তবে এ বিষয়ে আলোচনায় আগ্রহী নয় আওয়ামী লীগ।

তবে বিষয়টি নিয়ে সরকার সতর্কভাবে ও কৌশলে এগোচ্ছে। ইসলামী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। তারা বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। যা বলার তিনিই বলবেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, কিসের আলোচনা, কিসের জন্য আলোচনায় যাবে আওয়ামী লীগ সরকার। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী, উগ্র মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সঙ্গে কোনো আলোচনা হতে পারে না। এরা ইসলাম থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম, সত্যের ধর্ম। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যে আরবে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তন করেছিলেন সেই পবিত্র ভূমি সৌদি আরবেও ভাস্কর্য রয়েছে। সেখানে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে এখানে যারা পাকিস্তানি ভাবধারার ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায় তাদের।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের ম্যানডেট নিয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার ভিত্তিতেই তিনি রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র সংবিধানে যুক্ত করেছিলেন। সেই সংবিধানের আলোকেই এ দেশ চলবে। কোনো মোল্লাতন্ত্র, মৌলবাদী ধারায় দেশ চলবে না। আর এটাকে কেউ বাধা দিলে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সংবিধানে বঙ্গবন্ধুকে সম্মান ও তার প্রতিকৃতি সংক্ষণের কথা বলা আছে। সেখানে বঙ্গবন্ধুকে অবমানা করা হয়েছে। এটা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। আওয়ামী লীগ তো বটেই, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিশ্বাসী কেউই এ ঔদ্ধত্যকে মেনে নিতে পারে না।

তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশ্নে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নের কোনো আপস তো হতে পারে না। রাজনৈতিক-প্রশাসনিকভাবে সব ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়া হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন