স্বাধীনতার ৪৯বছরেওশহীদের স্বীকৃতি পায়নি শহীদ আশরাফের পরিবার

স্বাধীনতার ৪৯বছরেওশহীদের স্বীকৃতি পায়নি শহীদ আশরাফের পরিবার

(শহীদের স্বীকৃতি চান শহীদ আশরাফের পরিবার)


স্টাফ রিপোর্টার, নওগাঁঃ

লাল সবুজের এই বাংলাদেশকে স্বাধীন ও মুক্ত করার লক্ষ্যে নিজের প্রাণ ও বুকের তাজা রক্ত দিয়েছেন শহীদ আশরাফুল ইসলাম ওরফে আফছার। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৯বছর পার হলেও শহীদ হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি তার পরিবার। তাই শহীদ হিসেবে স্বীকৃতি চান শহীদ আশরাফ উদ্দীন ওরফে আফছারের পরিবার।

নওগাঁর পার্শ্ববর্তি বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের অন্তাহার গ্রামের মৃত-লাল চাঁন মিয়ার ছেলে আশরাফ উদ্দিন। শুধুমাত্র রাস্তার পাশে একটি সড়কের ফলকে ও বিভিন্ন তালিকায় শহীদ আশরাফের নাম শোভা পেলেও সকল সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত আশরাফের দিনমজুর গরীব পরিবার। 


সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১সালে আশরাফ উদ্দিন আফছার একজন টগবগে যুবক। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য আশরাফ উদ্দিন ভারতের শিলিগুড়ি, দার্জিলিংসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে ৭নং সেক্টর নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলার স্থল বড়বড়িয়া গ্রামে পাক-সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করেন।

এখানে যুদ্ধ করার সময় ১৯৭১সালের ৯ডিসেম্বর পাক-সেনাদের গুলিতে নিহত হন আশরাফ উদ্দিন। আদমদীঘি উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড অফিসে শহীদদের নামীয় তালিকায় আশরাফ উদ্দিনের সিরিয়াল ১৮। ভারতীয় তালিকায় সিরিয়াল ৩২২৭। মুক্তিবার্তা নম্বর ০৩০৬০৯০১১১। গেজেট নম্বর বি-২১১৮। শহীদ আশরাফ বিবাহিত না হওয়ার কারণে এরপর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তার পরিবারের ছোট ভাই বিভিন্ন জায়গায় অনেক যোগাযোগ করলেও কোন লাভ হয়নি। 


শহীদ আশরাফের ছোট ভাই আব্দুস সামাদ খোকা জানান, আমার বড় ভাই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আদমদীঘি উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অফিস তালিকায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের শহীদ তালিকায় ও পুঙ্গ মুক্তিযোদ্ধার তালিকাতেও ভাইয়ের নাম রয়েছে। তবে আমাদের পরিবারের কেউ জানতাম না যে শহীদ পরিবার হিসেবে আমরা শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি ও ভাইয়ের ভাতা পাবো কারণ আমার ভাইয়ের কোন সন্তানাদী নেই।

বাংলাদেশ সরকারের সুযোগ-সুবিধা বীরমুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাগনের স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, পিতা-মাতা কেউ যদি জীবিত না থাকে তাহলে তাহার ভাই-বোন ওয়ারিশ সূত্রে ভাতার সুবিধা পাবে।

কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৯বছর পার হলেও আমি আমার ভাইয়ের কোন ভাতা তো দূরের কথা স্বীকৃতি পর্যন্ত পেলাম না। আমার ভাইয়ের তাজা জীবনের বিনিময়েও আজ ভাই হিসেবে আমি কোন সুবিধাই পেলাম না। এখন আমাদের পরিবারের শুধুমাত্র আমি ছাড়া আর কেউ অবশিষ্ট নেই। সকল কাগজপত্রাদি নিয়ে কত অফিসের দুয়ারে, কত ব্যক্তির কাছে গিয়েছি কিন্তু আমি ভাইয়ের সুবিধা পাচ্ছি না। জানি না আর কয়দিন বা বাঁচবো। তাই মরে যাওয়ার আগে যদি ভাইয়ের শহীদ পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পেতাম তবুও একটু শান্তি পেতাম। ভাই হারানার যন্ত্রণা অনেকটাই লাঘব হতো।


উপজেলা সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবির হোসেন জানান, তার কাগজপত্র সঠিক থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা এ বিষয়টি দেখবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শীমা শারমিন বলেন, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট বরাবর আবেদন করে যাচাই বাছাই অন্তে সেখান থেকেই ৩২হাজার টাকা ভাতা প্রদান করে হবে। ছেলে-মেয়ে, মা-বাবা অথবা আপন ভাই বোনরা এই সুবিধাটি পেয়ে থাকবেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন