৩ বিশ্ব রেকর্ড করল পদ্মা সেতু

৩ বিশ্ব রেকর্ড করল পদ্মা সেতু

এক সময়ের স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন দৃষ্টিসীমায় দিগন্তজুড়ে দাঁড়িয়ে। পদ্মার তীরে গেলেই দেখা যায় পিলারের দীর্ঘ সারি। তার উপর একে একে বসানো ইস্পাতের ৪১টি স্প্যান। পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানো হয়েছে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর)। এর মাধ্যমে পুরোপুরি দৃশ্যমান হল ৬ হাজার ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি।

এ পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হওয়ার মধ্যেই তিনটি বিশ্ব রেকর্ড করে ফেলেছে পদ্মা সেতু। একটি হল- পদ্মা সেতুর পাইলিং। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীলরা বলছেন, পদ্মা সেতুর খুঁটির নিচে সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীরে স্টিলের পাইল বসানো হয়েছে। এসব পাইল তিন মিটার ব্যাসার্ধের। বিশ্বে এখনও পর্যন্ত কোনো সেতুর জন্য এত গভীরে পাইলিং হয়নি এবং মোটা পাইল বসানো হয়নি।

এছাড়াও কোন নির্মাণ কাজে বিশ্বে প্রথম দুই বিশেষ উপাদান ব্যবহার হয়েছে। একটি হচ্ছে- ভার্টিক্যাল আরসিসি বোর্ড পাইলে গ্রাউটিং ইনজেক্ট স্কিন ফিকশন করে দৃঢ়তা বৃদ্ধি করে নদীর তলদেশে বর্হিভাবে শক্তি বৃদ্ধি। পদ্মায় এমন পাইল সংখ্যা ২২টি। অপরটি হলো স্টিল টিউবুলার ড্রিভেন পাইলে গ্রাউটিং ইনজেক্ট করে পাইলের তলদেশের স্কিন ফিকশন সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এমন পাইল সংখ্যা ২৫২ টি।

৩টি বিশ্বরেকর্ড নিয়ে পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী রজ্জব আলী জানান, সেতুতে ১৫টন ওজনের ৯৮৭২৫ কিলো নিউটন ক্ষমতা সম্পন্ন ফিকশন প্যান্ডিলাম বেয়ারিং ব্যবহার করা হচ্ছে। যা উচ্চ মাত্রার ভূমিকম্প প্রতিরোধক। পুরো সেতুতে ৫ ধরণের ৯৬টি বেয়ারিং ব্যবহার করা হচ্ছে। যার মধ্যে ৩৫টি স্প্যানের সাথে ২টি করে বেয়ারিং ব্যবহার করা হচ্ছে। আর সেতুর এক্সপানশন জয়েন্টে ৪টি করে বেয়ারিং ব্যবহার হচ্ছে। ৬.১৫ কিলোমিটার সেতুতে মোট ৭টি জয়েন্ট থাকছে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদী শাসনে চায়না সিনোহাইড্রো কর্পোরেশনের সাথে সর্বোচ্চ প্রায় ৮ হাজার ৮শ’ কোটি টাকার চুক্তি হয়। এটিও বিশ্ব রেকর্ড। নদী শাসনে এখনও পর্যন্ত এত বড় চুক্তি আর কোথাও হয়নি।

পদ্মা সেতুর পাইলে ১ লাখ ৪৬ হাজার মেট্রিক টন স্টিল ব্যবহার করা হয়েছে। সবমোর্ট ২৬৬ পাইল । আর পদ্মা সেতুর ৪১টি স্প্যানের ওজন ১ লাখ ১৬ হাজার ৩৮৮ মেট্রিক টন। প্রতিটি স্প্যানের সর্বোচ্চ ওজন ৩০ হাজার ৮৮ মে. টন।

পদ্মা সেতুর প্রতিটি পাইলের সক্ষমতা ১২৪.৬০ মেগা নিউটন। অর্থ্যাৎ প্রায় ৮ হাজার ৭ শ’ মেট্রিক টন। পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে রয়েছে ১২.১২ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোড। পদ্মা সেতুতে ২৯৬০টি রেলওয়ে স্ল্যাব এবং ২৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাব স্থাপন হচ্ছে। ।

ইউরোপের লুক্সেমবার্গ থেকে আনা রেলওয়ে স্ট্যানজার স্থাপন হচ্ছে প্রতিটি স্প্যানে চারটি করে। সেতুতে সাধারণ আলোর ব্যবস্থা ছাড়াও আর্কিটেকচার লাইটিংও থাকছে। বিশেষ বিশেষ দিবসগুলোতে এবং বিশেষ সময়ে লাইটিংয়ের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধণ করা হবে।

পদ্মা সেতুর ন্যাশনাল গ্রিডিংয়ের জন্য সেতুর ৫০০ মিটার ভাটিতে পদ্মায় ৮টি বৈদ্যুতিক টাওয়ারের পাইল স্থাপন করা হয়েছে এই প্রকল্পের আওতায়। ৬.১৫ কিলোমিটার মূল সেতুর সাথে ৩.৬৮ কিলোমিটার সংযোগ সেতুসহ পদ্মা সেতু হচ্ছে ৯.৮৩ কিলোমিটার। সংযোগ সেতুর মাওয়া প্রান্তে ১.৪৭৮০৩ কিলোমিটার এবং জাজিরা প্রান্তে ১.৬৭০০৩ কিলোমিটার। আর মূল সেতুর সাথে দুই প্রান্তে রেল সংযোগ সেতু রয়েছে ১.৫৩২ কিলোমিটার।

পদ্মা সেতেুতে সিসি ক্যামেরা থাকছে। সেতু চালুর প্রথমেই প্রতিদিন ১২ হাজার যান পারাপার হবে। ২০৩০ সালে পদ্মা সেতু দিয়ে প্রতিদিন ৩০ হাজার গাড়ি চলাচলের টার্গেট রয়েছে। শুরুর দিকে প্রতিদিন টোল আদায়ে আয় হবে প্রায় আড়াই কোটি টাকার। আর অতিরিক্ত মাল পরিবহন ঠেকাতে সেতুর দুই প্রান্তে দুইপারেই ওয়েব্রিজ বসানো হচ্ছে।

সেতুর দুপারে অ্যাপোচ রোডের মধ্যে জাজিরা প্রান্তে সাড়ে ১০ কিলোমিটার এবং মাওয়া প্রান্তে ১.৬৭ কিলোমিটার। এটি উদ্বোধন হয় ২০১৭ সালে ৮ জানুয়ারিতে। পদ্মা সেতুর প্রকল্পের পুনর্বাসনে জন্য ২৯০৬ প্লট করা হয়েছে। এরমধ্যে ২৮৫৫টি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্লটের রেজিস্টশন শুরু হয়েছে ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে। এপর্যন্ত ১৩৬টি রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে।

এদিকে প্রাণী জাদুঘরে ২২৮১টি প্রাণীকূলের নমুমা সংগ্রহ হয়েছে। পদ্মা সেতুর সার্ভিস এরিয়ায়-১ এই জাদুঘর। এখানে ব্রিজ মিউজিয়ামও হচ্ছে। সেতুতে যে সকল উপকরণ, বেয়ারিং, গার্ডারসহ যেসব কিছু ব্যবহার হয়েছে পার্টে পার্টে এর নমুনা থাকছে এই জাদুঘরে।

আপনি আরও পড়তে পারেন