৪৬ বছর পর মৃত বাবার ঋণ শোধ করলেন দুই ছেলে

৪৬ বছর পর মৃত বাবার ঋণ শোধ করলেন দুই ছেলে

রাকিবুল ইসলাম (সাতক্ষীরা) :

কর্জ গ্রহনের ৪৬ বছর পর পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করলেন দেনাদারের সন্তানেরা। বিশ^াস করতে কষ্ট হলেও বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) বিকালে সাতক্ষীরা শহরতলীর সুলতানপুর কাজীপাড়ায় ঘটে এ অবিশ^াস্য ঘটনা। মৃত্যকালে প্রিয় জন্মদাতার অছিয়ত, দু:সময়ে ধার নেয়া অন্যের দেনাটা পরিশোধ দিতেই হবে।

দেনাটা সামন্য হলেও ভারটা যেন পাহাড় সমান। বাবা নেই। দেনাটা আছে। ৪৬ বছর আগে বাবার গ্রহণ করা দেনা পরিশোধ করেতে পেরে যেন পাহাড় নেমে গেল মাথার উপর থেকে। বাবার মৃত্যুর পর কেঁদেছিলেন তারা। আজ বাবার রেখে যাওয়া ধার দেনা পরিশোধ করতে পেরে অঝোরে কাঁদলেন তারা। বাবার প্রতি সন্তানের দায়িত্ববোধ জাগ্রহ করে দিল উপস্থিত মানুষের বিবেককেও।


খুলনা জেলার কয়রা থানার বধালী গ্রামের নেছার আলী (৫৭) ও সহিদুল ইসলাম (৫২) জানান, তাদের বাবার নাম জব্বার সরদার। বাবা জব্বার সরদার দেশ স্বাধীনের পর সাতক্ষীরা শহরে থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসা করতেন। ১৯৭৫ সালে তীব্র অভাব অনাটন দেখা দিলে তিনি পরিবারের ভারন পোষনের জন্য সুলতানপুর কাজীপাড়ার শেখ নুরুল হকের নিকট থেকে ১৩শ’ টাকা কর্জ গ্রহণ করেন।

গত ২০০০ সালে কর্জ গ্রহীতা জব্বার সরদার মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি তার সন্তানদের নাম ঠিকানা দিয়ে তার কর্জ গ্রহণকরা ১৩শ’ টাকা পরিশোধ করে দেয়ার জন্য সন্তানদের অছিয়ত করে যান।
মৃত্যুর পর জব্বার সরদারের স্বজনরা সাতক্ষীরা শহরে এসে শেখ নুরুল হককে খোজাখোজি করেও না পেয়ে ফিরে যান। ইতিমধ্যে পাওনাদার শেখ নুরুল হক গত ২০১২ সালে মৃত্যু বরণ করেন।


আজ মৃত জব্বার সরদারের দুই ছেলে সারাদিন মৃত শেখ নুরুল হকের ওয়ারেশদের খোজা শুরু করে। দিন শেষে তারা নুরুল হকের তিন কন্যা সন্তানের খোজ পান। তারা সেখানে হাজির হয়ে ঘটনার বর্ণনা দেন। এসময় প্রতিবেশীরাও জড়ো হয়ে তাদের মুখ থেকে শোনেন ৪৬ বছর আগে কর্জ গ্রহণের ঘটনা। নুরুল হকের স্বজনরা সেই ১৩শ’ টাকা গ্রহণ কওে স্থানীয় জামে মসজিদে দান ছদকা করে দেন।

বাবার ১৩শ’ টাকা দেনা পরিশোধ করে গুনা মাফের দোয়া চাইলেন নেছার আলী ও শহিদুল ইসলাম। এসময় জন্মদাতা বাবার দেনা শোধ করত পেওে অঝোওে কাঁদতে থাকেন দু’ভাই। বাবার জন্য ভালোবাস দেখে চোখ ভিজে আসে উপস্থিত মানুষেরও। সাতক্ষীরার সুলতানপুর গ্রামের কাজীপাড়া এলাকার ময় মুরব্বীসহ সকালে তাদের জন্য দোয়া করলেন। সততার এমন নজির বিহীন ঘটনায় স্থানীয় মানুষও হয়ে পড়ে আবেগে আপ্লুত।

আপনি আরও পড়তে পারেন