জমিদারীপ্রথা বিলুপ্ত হয়েছে অনেক আগেই জমিদারদের খাজনাঘরে ভুতের বসবাস

জমিদারীপ্রথা বিলুপ্ত হয়েছে অনেক আগেই জমিদারদের খাজনাঘরে ভুতের বসবাস

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ ঃ

জমিদারীপ্রথা বিলুপ্ত হয়েছে
বগুকাল আগেই। তাদেও ব্যবহৃত বিলাসবহুল খাজনাঘরে এখন ভুতের বসবাস।
ওই ঘরে কাজ করা দুরে থাক প্রবেশ করতেই আঁতকে উঠবে সবাই।
মুড়াপাড়ার জমিদার বাবু রামরতন ব্যানার্জীর জমিদার আমলের নানা
স্থাপনা কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের আনাচে
কানাচে ।

শুধুমাত্র জমিদারের করা ৬২ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত
রাজবাড়িটিই নয়; রূপগঞ্জ মহকুমা‘র বেশ কিছু এলাকায় রয়েছে
জমিদার আমলের নানা স্মৃতিচিহ্ন ।

এসবের মাঝে কাঞ্চন পৌরসভার
আতলাশপুর গ্রামের ১৫০ বছরের পুরানো আইচ বাড়ি অন্যতম। বাড়িটি
সংরক্ষনের অভাবে কালের বিবর্তে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাড়িয়ে আছে।
এক সময়ের দৃষ্টি নন্দন এ নায়েব বাড়িটিতে জমিদারের প্রজারা তাদের
কর নিয়ে হাজির হতেন। ভীর করতে এর আঙ্গিণায়। আজ তা জরাজীর্ণ ও
ভুতুরে পরিবেশে দাড়িয়ে আছে। দিনদুপুরে দেখা মেলে শিয়ালসহ নানা ও
বন্যপ্রাণীর।
এখন জমিদার নেই তাই জমিদারীও নেই। নেই কর আদায়কারী সম্প্রদায়
আইচরাও। তবে তাদের স্মৃতিচিহ্ন আইচ বাড়িটি এখন জরাজীর্ণ
প্রায়। পুরাতন পদ্ধতিতে করা দ্বিতল এ বাড়িটি এখন ছাত্তার জুট মিলের
প্রাচীরের অধীনে।

ক তফসিলভুক্ত এ বাড়িটি সরকারীভাবে সংরক্ষণ ও
জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত থাকার কথা থাকলেও পাটকলের অভ্যন্তরীন থাকায়
ছাত্তার জুট মিলের কর্মকর্তারা এখানে বসবাস করতেন। এদিকে ছাত্তার
জুট মিল গত একযুগ ধরে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ বাড়িটি হয়ে যায়
অনেকটা বেওয়ারিশ। ২০০৫ এর দিকে মিলটির মালিক নারায়ণগঞ্জ-
৪(সিদ্দিরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য সাবেক পাটমন্ত্রী এমএ ছাত্তার ওই
জমি বিক্রি করে দেন সিনহা গ্রুপের মালিক শিল্পপতি আনিসুর রহমান
সিনহার কাছে। তবে পুরো মিলটি দেখাশুনা করছেন প্রহরীকাজে ২
জনের অধিক শ্রমিক। আর মিলের প্রাচীরঘেরা থাকায় নজর এড়িয়ে যায়
বাড়িটি স্থানীয় প্রশাসনের। ইতিহাস ঐতিহ্য ও পুরানো স্থাপনা

রক্ষণাবেক্ষন ও সংরক্ষনের দায়িত্বে থাকা প্রতœতত্ত্ব বিভাগেরও নজর নেই এ
বাড়িটির দিকে। কাঞ্চন পৌর এলাকায় অবস্থিত কেন্দুয়া ইউনিয়ন ভূমি
অফিস সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ১৯৬৭ ইং সন পর্যন্ত আইচ বংশীয়
রাইমোহন আইচের সন্তান চিত্তরঞ্জণ আইচ, গোপাল চন্দ্র আইচ,
রাধাশ্যাম আইন , পবিত্র কুমার আইচগং কাঞ্চন ও আতলাশপুর মৌজায় ২০
একর ৭০ শতক জমিতে বসবাস করতেন। তাদের দখলে আতলাশপুর মৌজায়ও
রয়েছে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি।
এ ভুমি অফিসে কর্মরত প্রবীণ কর্মচারী (অব.) রমেশ চন্দ্র দাস বলেন,
কাঞ্চনের আইচরা ১৯৪৭এর দেশভাগ পরবর্তি এ অঞ্চল ছেড়ে ভারতের
বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যান। তিনি আরো জানান, স্বাধীনতা পূর্ব থেকে
এখানে পাটকল গড়ে ওঠলেওই আইচদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি তা বাংলাদেশ
পাটকল কর্পোরেশনের (বিজেএমসির) অধীনে চলে যায়। এসব জমির
কিছু অংশ বর্তমানে ক তফসিল ও খ তফসিল ভুক্ত রয়েছে। জানা যায়,
তাদের বংশ পরম্পরায় ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে জমিদার প্রতাপচন্দ্র ব্যানার্জী,
পুত্র বিজয় চন্দ্র ব্যানার্জী ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে, ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে তার দুই
পুত্র জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী ও আশুতোষ চন্দ্র ব্যানার্জ এ অঞ্চলের
জমিদারী পরিচালনা করেন। আর তাদের অধীনে স্থানে স্থানে করা হয় কর
আদায় কেন্দ্র। ওই জমিদারের মনোনীত কর আদায়কারীদের মাঝে রূপগঞ্জের
বর্তমান কাঞ্চন পৌরসভা এলাকায় বসবাস করতেন আইচ বংশীয়
লোকেরা। ছাত্তার জুট মিলস মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল
কালাম আজাদ একটি সংরক্ষণকৃত বই সুত্রে বলেন, আইচরা ছিলেন
১৮৫০ খৃষ্টাব্দে ভারত উপমহাদেশের বর্তমান ত্রিপুরা রাজ্যের রায় রাধাকান্ত
আইচ রায় বাহাদুর জমিদারের উত্তরসূরী। এ বংশের প্রতিষ্ঠাতা রাজা
গজেন্দ্রনারায়ণ ও রাজেন্দ্রনারয়ণ আইচ রায়। তাদের মধ্যে বাবু
শিবচ›ন্দ্র আইচ রায় ত্রিপুর জেলা আদালতের লব্ধপ্রতিষ্ঠ উকীল। ওই বংশের
যোগসাজস ছিলো বিভিন্ন পরগণার জমিদারদের সঙ্গে। তারা আইনী
বিধি বিধানে অভিজ্ঞ থাকায় জমিদারদের কর আদায়, শাসন ব্যবস্থার
প্রণেতা হিসেবে কাজ করতেন। তারই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জ
জেলার বর্তমান রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌর এলাকায় শীতলক্ষ্যা পাড়ে ওই
জমিদারদের নিজ সম্পত্তিত্বে বসবাস করতে আইচ বংশীয় লোকেরা। তারা
মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ির জমিদারদের খাজনা আদায় কাজে নিয়োজিত
ছিলেন। সূত্র জানায়, আইচরা এখানে গড়ে তুলেছিলেন সরব জনপদ। তবে

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত উপমহাদেশ বিভক্ত হওয়ার পর জমিদার জগদীশ চন্দ্র তার
পরিবার নিয়ে কলকাতা গমন করেন। তারপর ১৯৫০ সনে জমিদারী প্রথা
বিলুপ্ত হলে কালের বিবর্তে আইচ বংশীয়রাও তাদের এসব জমি বিক্রি করে
চলে যান। তবে তাদের মন্দির, বাসস্থান , বিভিন্ন পুরানো স্থাপনা
আজো কালের স্বাক্ষী হয়ে ভঙ্ধসঢ়;গুর দশায় দাড়িয়ে আছে। যদিও নানা
অযুহাতে এসব পুরানো ঐতিহ্য সংরক্ষণের ব্যর্থ হয়েছেন সংশ্লিষ্ট
প্রশাসন। এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনা (ভূমি) আফিফা
খান বলেন, যেহেতু এ বাড়িটি বিজেএমসির অধীনে থাকা একটি বন্ধ
পাটকলের প্রাচীর ঘেরা। এর মালিকানা খতিয়ে দেখবো। প্রয়োজনে
সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবহিত করে তা সংরক্ষনের ব্যবস্থা করবো।

আপনি আরও পড়তে পারেন