মাটি খেকোদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না দৌলতদিয়া।

মাটি খেকোদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না দৌলতদিয়া।

মোঃ সিরাজুল ইসলাম। 

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ছাত্তার মেম্বার পাড়া চর কর্নেশনা পদ্মা নদীর চর থেকে অবৈধ ভাবে মাটি কেটে নিচ্ছে প্রভাবশালী একটি চক্র।
মাটিকাটার গর্ত থেকে মাত্র ১শ হতে ২শ গজ এলাকার মধ্যে দৌলতদিয়ার ৭ নং ফেরিঘাট এবং একটি গ্রাম।

ওই এলাকায় দৌলতদিয়া ঘাট আধুনিকায়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় সাড়ে ১৩ শ কোটি টাকা ব্যয়ে নদী শাসন,একটি বন্দর ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শিগগরই শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। ওই এলাকা হতে অবাধে মাটি ও বালু কাটার ফলে বন্দর এলাকা, ফেরিঘাট এবং দৌলতদিয়া ১নং ওয়ার্ডের সাত্তার মেম্বার পাড়া অতি-ঝুঁকিতে রয়েছে।


স্হানীয়রা জানান, চরের মাটি ও বালু প্রতিদিন অন্তত অর্ধশত ট্রাকে বিভিন্ন ইটভাটা, পুকুর ভরাট সহ বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছে চক্রটি। প্রতিদিন মাটিভর্তি বিপুল সংখ্যক ট্রাক-লরি চলাচলের কারণে চরবাসীর একমাত্র রাস্তাটিরও বেহাল দশা হয়েছে। এতে করে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন চরাঞ্চলের সাধারণ মানুষ ।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি এক্সেভেটর (খনন যন্ত্র) দিয়ে মাটি ও বালু কাটা হচ্ছে।ছোট বড় ট্রাক, লরি দিয়ে দিনরাত এ মাটি-বালু বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। এভাবে চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।


মাটি কাটার কাজে ব্যস্ত এক্সেভেটর (খনন যন্ত্র) চালক মো.হাবিবুর রহমান জানান, এই এক্সেভেটর (খনন যন্ত্র) মেশিনটির মালিক দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য উসমান কাজী। তিনিই মাটি কাটার বিষয়টি দেখাশুনা করেন।


স্থানীয় কয়েকজন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ছাত্তার মেম্বার পাড়া ও পাশ্ববর্তী চর কর্নেশনা হতে পদ্মা নদীর পাড় থেকে মাটি কাটার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইউপি সদস্য উসমান কাজী।


তার একটু পরেই অন্য একটি এক্সেভেটর (খনন যন্ত্র) দিয়ে মাটি কাটছে বেলায়েত মন্ডল, মুসা মন্ডল, আয়ুব খাঁ সহ আরো কয়েকজন জড়িত রয়েছেন। তবে জড়িত থাকা সবারই দাবি তারা তাদের নিজেদের জমি হতে মাটি কাটচ্ছেন। তবে চরের জায়গাগুলো সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত বলে অনেকেই জানান।


মাটির ট্রাকগুলো দৌলতদিয়া আক্কাস আলী হাইস্কুলের পিছনের রাস্তা দিয়ে দীর্ঘদিন যাতায়াতের কারনে ওই রাস্তাটি ইতিমধ্যে ধ্বসে গেছে এবং খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। প্রচন্ড ধুলাবালুতে ওই এলাকার মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।বর্তমানে মাটির ট্রাকগুলো ৭ নং ফেরি ঘাটের নব নির্মিত রাস্তা দিয়ে আসা যাওয়া করছে।

এতে করে ওই রাস্তাটিও নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।এদিকে গত ১৬ নভেম্বর এলাকাবাসী মাটি কাটা ও গাড়ি চলাচল বন্ধে ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিলেও তিনি নিজে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।

স্থানীয় কৃষক মো. ইউসুফ হোসেন বলেন, চরাঞ্চলের মানুষের চলাচলের জন্য প্রয়াত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মন্ডল প্রায় চার ফুট উচুঁ করে আক্কাস আলী হাইস্কুলের পিছন দিয়ে সুন্দর একটি রাস্তা করেছিলেন। কয়েক বছর ধরে চর থেকে প্রতিদিন মাটি ভর্তি গাড়ি চলাচল করায় অন্তত দুই হাতের বেশি দেবে গেছে। এখন চলাচল করাই দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। সরকারি মাটি বিক্রি করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।


অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউপি সদস্য উসমান কাজী বলেন, আমি কোন খাস জমি থেকে মাটি কাটছি না। আমার নানার জমি সহ বিভিন্ন ব্যাক্তি মালিকানা জমি হতে মাটি কাটছি। জমির বিষয়টি গোয়ালন্দের সার্ভেয়ার দিয়ে যাচাই করে নিয়েছি। তবে প্রশাসনের কোন অনুমোদন নেই।


দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল বলেন, ইউএনও’র পত্রের আলোকে আক্কাস আলী হাইস্কুলের পিছনের রাস্তা এবং হোসেন মন্ডল পাড়ার রাস্তা দিয়ে মাটির ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তাটি দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে।


এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আমিনুল ইসলাম জানান , চরে নদীর পাড় থেকে মাটি কেটে নেয়ার বিষয়ে কাউকে কোন অনুমতি দেয়া হয়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগের পর তিনি মাটি কাটা বন্ধ করে দিয়েছিলেন বলে দাবি করেন। খোঁজ নিয়ে আবারো ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে এই কর্মকর্তা জানান।

আপনি আরও পড়তে পারেন