শৈত্য প্রবাহ ও ঘন কুয়াশায় সরিষার ফলন কম হওয়ার কৃষকের শঙ্কা

শৈত্য প্রবাহ ও ঘন কুয়াশায় সরিষার ফলন কম হওয়ার কৃষকের শঙ্কা


মোঃ আব্দুর রহীম মিঞা ( টাঙ্গাইল) ভূঞাপুর উপজেলা প্রতিনিধি ঃ

দেশের চৌষট্রি জেলার মধ্য অঞ্চলের জেলা টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের মাঠের পর মাঠ সরিষার চাষ হয়েছে এবার। শীতকালীন ফসল এই সরিষা । বীজ বপনের দুই-তিন দিনের মধ্যে গাছ গজিয়ে উঠে ।

দশ-বারো দিনের মধ্যে ফুল আসা শুরু হয় সরিষা গাছের। এ দেশে যত প্রকার রবি শস্য রয়েছে তার মধ্যে সল্প খরচে অল্প সময়ে কৃষকের ঘরে উঠে এ ফসল। বিঘা প্রতি ৫-৬ মন পর্যন্ত সরিষার ফলন হয়ে থাকে। সরিষার বীজগুলো অতি ক্ষুদ্র হওয়ায় আয়ের দিক দিয়ে অন্যান্য ফসলের চেয়ে কম মনে হয়।

কিন্ত কৃষক অন্যান্য ফসলের চেয়ে দামের দিক দিযে উচ্চ মূল্য পান। কৃষকের সব চেয়ে বড় উপকার হয় সরিষা উঠানো পর ইরি ধানের চারা লাগানোর সময় ঐ জমিতে আর দ্বিতীয় বার সার প্রয়োগ করতে হয় না।


বাংলাদেশে বিভিন্ন যায়গার বিভিন্ন জাতের সরিষা উৎপাদন করা হয়। বিনা সরিষা-৪ বিনা সরিষা-৯ বিনা সরিষা ১০, বারি সরিষা-১৪ বারি সরিষা-১৫ বারি সরিষা ১৭ প্রভুতি জাতের সরিষা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন জাতের সরিষার বীজ বপন করে থাকে।

কিন্তু টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের কৃষকরা ধুপি ও পেচি (বিনা সরিষা-৪ বারি সরিষা-১৪) এই দুই জাতের সরিষা বেশি আবাদ করে থাকেন। বর্তমান সময় নববধূর গায়ে হলুদ শাড়ীর আচল বিছানো হদুল ফুলের দিগন্ত জোড়া মাঠ শোভা পাচ্ছে ভূঞাপুর উপজেলার চারিদিকে।

গ্রাম অঞ্চলে প্রবাদ বাক্য আছে ‘চোখে সরিষার ফুল দেখা’ কিন্তু দিগন্ত জোড়া মাঠের দিকে তাকালে অপরূপ দৃশ্য কৃষকের মন-প্রান আপ্লত করে। দেশের ঋতু পরিক্রমায় শীত ঋতুতে মাঠে মাঠে সরিষার চাষ কৃষকের মাঝে বয়ে আনে নতুন আশার আলো।


সরিষার বীজ ভোজ্য তৈল হিসেবে ব্যবহার করা হয় । একসময় গ্রাম বাংলার ভোজ্য তৈল ছিল সরিষা তৈল। এর ঔষধি গুনাগুনের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই কবিরাজি ও আয়ুর্বেদি চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে বহুকাল থেকে। বর্তমানে সোয়াবিন তৈল নির্ভর হওয়ায় এবং সরিষার আবাদ কমে যাওয়া সরিষার তৈলের ব্যবহার দিন দিন কমে আসছে।

তবে সরিষার তৈলের গুনাগুনের সম্পর্কে যারা অবগত আছেন তারা নিয়মিতই ব্যবহার করছেন এই তৈল। বিভিন্ন ভোজ্য তৈলের ওপর করা সমীক্ষায় দেখা যায় সরিষার তৈল ৭০ শতাংশ হৃৎপিন্ড সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি কমায়। সরিষার তৈল ব্যবহারে শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পায়। সরিষার তৈল ত্বকের তামাটে ভাব ও দাগ দূর করে এবং ত্বককে প্রাকৃতিভাবে উজ্জল করতে পারে। শীতের সকালে শরীরে সরিষা তৈল মাখিয়ে নিলে শরীরের উষ্ণতা ফিরে আসে।


ভূঞাপুরে সরিষার ফসলে মাঠে মাঠে মৌমাছির বাক্স বসিয়ে দিয়ে মধু সংগ্রহে মেতে উঠছে মৌ চাষিরা । মৌমাছি সরিষার ফুলে ফুলে ঘুরে মধু সংগ্রহ করে মৌচাকে জমা করে। মৌমাছি ফুলে ফুলে ঘুরে সরিষার ফলের পরাগায়ন গঠায় তাতে ফলনও ভালো হয়। সরিষার মাঠে চষে বেড়ানো মৌমাছির গুণগুণ গান কৃষকের মন-প্রাণ বিমোহিত করে।


এ অঞ্চলে প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে দেখা যায় মাঠের পর মাঠ সরিষার হলুদ ফুলের অপূর্ব শোভার চোখ জুড়ানো দৃশ্য আর মন মাতানো গন্ধে প্রকৃতির সৌন্দর্য যেমন বাড়িয়ে দিয়েছে; ঠিক তেমনি অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার হলুদ স্বপ্নে বিভোর এ অঞ্চলের কৃষকরা।


এদিকে ভূঞাপুর উপজেলার ফলদা ইউনিয়নের ঝনঝনীয়া গ্রামের কৃষক মোঃ আব্দুল করিম জানান তিনি ২০ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন । তার শঙ্কা সরিষার ফলনের বর্তমানে মাঝামাঝি সময় এখন পৌষ মাসের শেষের দিক এ সময় প্রচন্ড কুয়াশা ও শৈত্য প্রবাহে সরিষা মাঝে মাঝে নূড়ে পড়ছে তাতে সরিষার ক্ষতি ও ফলন কম হওয়া সম্ভাবনা রয়েছে।

একই গ্রামের মোঃ সেলিম জানান সে ১৮-২০ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন ঘন কুয়াশা ও মাঝে মাঝে শৈত্য প্রবাহের কারণে সরিষার ফলন কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের মতো আরো অনেক কুষক ঘন কুয়াশা ও মাঝে মাঝে শৈত্য প্রবাহের কারণে একই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।


ভূঞাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল জানান চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় সরিষার চাষ হয়েছে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে । ফলে ভূঞাপুর উপজেলায় চাষ হওয়া সরিষা দেশের মোট চাহিদার বড় একটা অংশ পূরণে ভুমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন করোনা কালীন মহা-দুর্যোগে কৃষকের মাঝে সরিষার বীজ, সারসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ বীনা মূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল বলেন সরেজমিন ঘুরে দেখেছি এবার আবহাওয়া মোটামুটি অনুকুলে থাকায় সরিষার ফলন খুবই ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সরিষা ফসল ঘরে তুলে কৃষক বন্যা পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাড়াবে আশা রাখি। তিনি আরো বলেন ঘন কুয়াশা ও মাঝে মাঝে শৈত্য প্রবাহের মাঝেও সরিষার ফলনের লক্ষ মাত্রা পূরণ হবে আশা করা যায়।


আপনি আরও পড়তে পারেন