লালমনিরহাটে তামাক খেতে শিশু

লালমনিরহাটে তামাক খেতে শিশু

সাধন রায় লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ

লালমনিরহাট তামাক খেতে শিশু।স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাবেয়া খাতুন (৭)। তামাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানার আগেই বাবা-মায়ের উদাসীনতার কারণে তামাকের সঙ্গে মিশে যেতে হচ্ছে তাকে।

সে বাবা-মায়ের সঙ্গে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তামাক খেতে কাজ করে।তামাক গাছে সার মিশ্রিত পানি দেওয়া আর খেতের মাটি সমান করতে সময় কাটছে তার। আর কিছুদিন পর মরিয়মকে ভাঙতে হবে তামাকপাতা। এরপর তামাকপাতা শুকানোর কাজও তাকে করতে হবে। এ দৃশ্য শুধু লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার জামুরটারী গ্রামের শিশু রাবেয়া নয়।

শিশুদের তামাক খেতে কাজ করার এমন দৃশ্য এখন গ্রামে গ্রামে।শিশুদের দিয়ে তামাক খেতে কাজ করানোটা এখন নিয়মিত দৃশ্য হয়ে উঠেছে। জামুরটারীর পাশে ভাদাই গ্রামে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মাইদুল ইসলাম (৮) তার বাবা-মায়ের সঙ্গে কাজ করছে তামাক খেতে। শিশুটি ক্লান্ত হয়ে পড়লেও কাজ করতে হয়।মহিদুল বলে, ‘কাজ করতে করতে আমি ক্লান্ত হই। বাবা আমাকে দিয়ে সবসময় কাজ করান।

’রাবেয়া খাতুন বলে, ‘বাবা-মায়ের সঙ্গে কাজ করে ভালো লাগে। তামাক খেতে কাজ করলে কি আর ক্ষতি হবে।’রাবেয়া বাবা মিলন ইসলাম (৩০)।  ‘তামাকের খেতে কাজ করা একটি পারিবারিক কাজ। পরিবারের সবাইকে নিয়ে কাজ করা হয়। তাহলে তামাক চাষে আশানুরূপ আয় হয়। একজন শ্রমিক নিলে চারশ টাকা খরচ হবে। কিন্তু, মেয়েকে দিয়ে সে কাজ হচ্ছে।’তিনি এ বছর ১০ বিঘা জমিতে তামাকের চাষ করেছেন। গত বছরও সমপরিমাণ জমিতে তামাকের চাষ করেছিলেন বলে জানান।

স্কুল শিক্ষার্থী মাইদুল ইসলামের বাবা নজরুল ইসলাম (৪৫) বলেন, ‘কৃষক পরিবারের সন্তানকে কৃষি কাজ করতে হয়। কৃষি কাজে কখনো না বলতে নেই। তামাকের কাজ পরিবারের সবাই মিলে করলে পোষাবে। গ্রামে এখন শিশু-বৃদ্ধ সবাই তামাকের কাজ করছে। তামাকপাতা বিক্রি না করা পযর্ন্ত আমাদের তামাকের কাজ করতে হয়।’লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘শিশুরা তামাক উৎপাদন ও প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে তারা শারিরীক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তামাকের নিকোটিনের কারণে শিশুদের জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।’
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর  বলেন, ‘তামাক চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে তামাক কোম্পানিগুলো যাতে সক্রিয় ভুমিকা না রাখে সেজন্য কৃষি বিভাগকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগের চেয়ে তামাক চাষ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। শিশুরা যেন তামাক উৎপাদন ও প্রক্রিয়ার কাজে জড়িয়ে না যায় সেজন্য অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে এবং স্থানীয পর্যায়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে।’

আপনি আরও পড়তে পারেন