লালমনিরহাটে জালিয়াতির মাধ্যমে অধ্যক্ষ নিয়োগ, দুদকের নির্দেশে তদন্ত শুরু

লালমনিরহাটে জালিয়াতির মাধ্যমে অধ্যক্ষ নিয়োগ, দুদকের নির্দেশে তদন্ত শুরু

লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে জালিয়াতির মাধ্যমে অধ্যক্ষ নিয়োগের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নির্দেশে তদন্ত শুরু করে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস। গত ২৭ জানুয়ারি আদিতমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

অভিযোগে প্রকাশ, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে গত ১৯৯৭ সালের ১৮ অক্টোবর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে প্রভাষক পদে যোগদান করেন শারওয়ার আলম। এরপর ২০০১ সালে এপ্রিল মাসে এমপিওভুক্ত হন। যার ইনডেক্স নং- ৬১৮৪০৮। এরপর তিনি সনদ জালিয়াতি করে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে উচ্চতর বেতন গ্রহণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত ২০১১ সালের ৫ জুন কলেজ শাখার প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ শহিদুর রহমান অবসর গ্রহণ করলে পরদিন সহকারী অধ্যাপক শারওয়ার আলম প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। উক্ত সময় গঠিত প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের হলে নিম্ন আদালত ও মহামান্য হাইকোর্ট পরিচালনা পর্ষদের কার্যক্রম স্থগিতাদেশ প্রদান করেন।

আদালতের নির্দেশ অমান্য করে উক্ত পরিচালনা পর্ষদের স্বাক্ষরে পূর্বের পদে ইস্তফা না দিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে একাধিক তৃতীয় বিভাগের শারওয়ার আলম অতিগোপনে গত ২০১২ সালের ২১ জানুয়ারি অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। অধ্যক্ষ হিসেবে ২০১২ সালের ২১ জানুয়ারি যোগদান দেখালেও একই সালে আগস্ট মাস পর্যন্ত পূর্বের পদের বেতন ভাতাদি উত্তোলন করে আত্নসাৎ করেন। বিরতিহীন ভাবে সহকারী অধ্যাপক হতে অধ্যক্ষ পদে বেতন ভাতাদি গ্রহণ করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

অধ্যক্ষ পদের ১২ বছরের এমপিওভুক্তের অভিজ্ঞতা থাকা আবশ্যক হলেও তার অভিজ্ঞতা ১১ বছরের নিচে। এ ছাড়াও পরিপত্র অনুযায়ী অধ্যক্ষ পদে কোনভাবেই তৃতীয় বিভাগ গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু শারওয়ার আলম এসএসসি ও স্নাতকে তৃতীয় বিভাগ নিয়েও অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বাগিয়ে নেন। এভাবে সরকারি পরিপত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ নিয়ে সরকারি বেতনভাতাদি আত্নসাৎ করেন।

অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগের পরে যুক্তিবিদ্যা বিষয়ের প্রভাষক সতীশ চন্দ্র দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকলেও দুই লাখ টাকার বিনিময়ে ওই প্রভাষককে সম্পূর্ণ বেতন প্রদান করেন অধ্যক্ষ শারওয়ার আলম। একই সাথে মর্জিনা পারভিন নামের একজনের কাছে ৯ লাখ টাকা নেয়ার পরেও অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দেননি। রবিউল ইসলাম নামে একজনকে ১২ লাখ টাকায় অফিস সহকারী পদে নিয়োগ দিয়ে আরও ২ লাখ টাকা দাবি করেন অধ্যক্ষ শারওয়ার আলম। দাবিকৃত টাকা না দেয়ায় তার বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করেন অধ্যক্ষ। নিয়োগের নামে অধ্যক্ষ শারওয়ার আলমের বিরুদ্ধে অর্থ বাণিজ্য এবং স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে স্থানীয় ও ভুক্তভোগীরা পরিচয় গোপনের শর্তে দুর্নীতি দমন কমিশনে একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান স্বাক্ষরিত ০০.০১.০০০০.১০৯.৩৮.০০১.২০-৩৩নং স্মারকে ৭ জানুয়ারি একটি পত্র পাঠিয়ে লালমনিরহাট জেলা শিক্ষা অফিসারকে তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত করে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ই-মেইলে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। দুদকের নির্দেশনা পেয়ে তদন্ত শুরু করেন জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস। ২৭ জানুয়ারি আদিতমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নিজ দফতরে অভিযোগের স্বপক্ষে একাধিক ব্যক্তির স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন।

নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টি অস্বীকার করে মহিষখোচা বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ শারওয়ার আলম বলেন, আমার এসএসসি ও স্নাতক তৃতীয় বিভাগ হলেও নিয়োগ তৎকালীন বিধি সম্মতভাবে হয়েছে। কয়েকবার অডিট হয়েছে, কোন আপত্তি ছিল না। এখন শিক্ষা অফিস তদন্ত করছে। নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টি প্রমাণ করতে পারবে না বলেও দাবি করেন তিনি।

আদিতমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আরিফ মাহফুজ বলেন, দুদকের পত্রের আলোকে তদন্ত শুরু করেছি। যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, দুদকের প্রধান কার্যালয়ের পত্রের নির্দেশনা মোতাবেক সনদ জাল ও জালিয়াতির মাধ্যমে অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়টি জেলা শিক্ষা অফিস তদন্ত করছে। অধ্যক্ষ শারওয়ার আলমের বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগ এসেছে। তাই ওই অধ্যক্ষের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা অফিসকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন