ঘাটাইলে স্বাধীনতাবিরোধীর নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

ঘাটাইলে স্বাধীনতাবিরোধীর নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

সৈয়দ মিঠুন ঘাটাইল টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:

ডা. শওকত আলী ভূইয়া মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ছিলেন পাকিস্তানিদের দোসর। তিনি ছিলেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় তৎকালীন উপজেলার স্বাধীনতাবিরোধী পিস কমিটির প্রধান। মৃত্যুবরণ করেছেন ১৯৮৩ সালে। মৃত্যুর পর ১৯৯৫ সালে তার নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেছেন তার সন্তানরা। নাম দিয়েছেন ডা. শওকত আলী ভূইয়া উচ্চ বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটি মাধ্যমিক স্তরে এমপিওভুক্ত।

ঘাটাইল উপজেলার তিন ভাগের দুই ভাগই পাহাড়ি অঞ্চল। আর এ অঞ্চলে ভূইয়াদের আগেও ছিল একক আধিপত্য, এখনও রয়েছে। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসন থেকে শওকত ভূইয়া সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

শওকত ভূইয়ার ছয় ছেলে ও দুই মেয়ে। মেজো ছেলে বুলবুল ভূইয়া উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি থাকাকালে গত বছর মারা যান। আরেক ছেলে টুটুল ভূইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। সবার ছোট এজহারুল ইসলাম মিঠু ভূইয়া ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত বর্তমান ধলাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান, এখন যোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগে।

বাবার মৃত্যুর পর ধলাপাড়ার শহরগোপিনপুর নামক স্থানে ডা. শওকত আলী ভূইয়া উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন সন্তানরা। স্বাধীনতাবিরোধীর নামে স্বাধীন দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় অনেকটা বিব্রত উপজেলাসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। প্রতিষ্ঠানটি চলে শওকত ভূইয়ার সন্তানদের নেতৃত্বে। এখনও সভাপতি তার ছেলে শফিকুল ইসলাম সেন্টু ভূইয়া।

সাবেক ধলাপাড়া ইউনিয়ন ও থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সহকারী কমান্ডার (সাংগঠনিক) বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন বলেন, শওকত ভূইয়ার গ্রামের বাড়ি সরিষাআটা থেকেই ঘাটাইলে রাজাকারের উৎপত্তি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন পিস কমিটির প্রধান। তার সঙ্গে ছিলেন ধলাপাড়া চৌধুরীবাড়ির জসিম চৌধুরী। সে সময় তারা ছিলেন এলাকায় প্রভাবশালী।


তিনি বলেন, হানাদার বাহিনী ক্যাম্প করেছিল তাদের বাড়িতে। পাকিস্তানি সেনারা অসহায় মানুষের গরু-ছাগল ছিনিয়ে এনে ভোগ করত। তাদের নেতৃত্বেই জ্ব্বালিয়ে দেওয়া হয় শত শত ঘরবাড়ি। উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে ওই দুই বাড়িতে চালানো হতো অমানবিক নির্যাতন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন আরও বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও পাকিস্তানি এমন একজন দালালের নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকা খুবই বেদনাদায়ক, যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না

ঘাটাইল সরকারি জিবিজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শামছুল আলম মনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। ওই বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা হয়তো জানে না, যার নামে প্রতিষ্ঠানটি, সেই নামের মানুষটি স্বাধীনতা চাননি। প্রতিষ্ঠার এত বছর পর হলেও বিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি।


ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে আছেন শওকত ভূইয়ার ছেলে শফিকুল ইসলাম সেন্টু ভূইয়া। বাবা পিস কমিটির প্রধান ছিলেন- এ কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় আমি ময়মনসিংহে ছিলাম, কোনো কিছু বলতে পারব না। তবে বাবা পিস কমিটিতে ছিলেন না।


ইউএনও অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, পিস কমিটির প্রধানের নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান- বিষয়টি বীর মুক্তিযোদ্ধারা কোনোদিন আমাকে জানাননি। এই প্রথম জানতে পারলাম। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে বিষয়টি অবগত করা হবে। স্বাধীন দেশে স্বাধীনতাবিরোধীর নামে কোনো প্রতিষ্ঠান থাকতে পারে না।

আপনি আরও পড়তে পারেন