করোনায় গ্রামমুখী ইতালির তরুণ প্রজন্ম!

করোনায় গ্রামমুখী ইতালির তরুণ প্রজন্ম!

করোনা মহামারি আর লকডাউনে বিপর্যস্ত ইতালির অর্থনৈতিক অবস্থা। গত এক বছরে ইতালির বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে রেকর্ড পরিমাণে। শহর অঞ্চলের বাড়ির প্রতি আগ্রহ কমেছে নতুন ক্রেতাদের।

তবে  শহরতলি ও গ্রাম অঞ্চলের বাড়ির প্রতি আগ্রহ বেড়েছে ক্রেতাদের, যা ষাটের দশকের পর থেকে এখন পর্যন্ত ব্যতিক্রম। ইতালির বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্রয়-বিক্রয় এবং বসবাসের বর্তমান চিত্রের রিপোর্ট উঠে এসেছে ইতালির জাতীয় পরিসংখ্যান ও গণমাধ্যমে।

ইতালির দুই তৃতীয়াংশ মানুষের বসবাস আ্যপার্টমেন্টে। যদিও বাসস্থানগুলোর আকার ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় ছোট। ইতালির বাসস্থানের গড় আয়তন ৮১ বর্গমিটার। সেই তুলনায় স্পেনের ৯৭ বর্গমিটার, জার্মানির ১০৯ বর্গমিটার ও ফ্রান্সের ১১২ বর্গমিটার। ইতালির মানুষ বাড়ি থেকে বাইরে সময় কাটাতে বেশি পছন্দ করতেন। কাউকে দাওয়াত করলে আপ্যায়ন পর্ব চলে রেস্টুরেন্টে।

অনেক পরিবারের সকাল, দুপুর ও রাতের খাবার প্রতিদিন চলে রেস্টুরেন্টে। কিন্তু করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি সবকিছু পরিবর্তন করে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে বাস্তবতা। এখন মানুষ শহরের ছোট বাসা ছেড়ে গ্রাম ও শহরতলীতে বড় বারান্দা ও টেরাস সম্মৃদ্ধ বাসস্থানের দিকে ঝুঁকছে। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে শহর ছেড়ে গ্রাম বসবাসে আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে ২০ শতাংশ তরুণ প্রজন্মের ইতালিয়ানের। 

বিশেষ করে দক্ষিণ ইতালি ও দ্বীপাঞ্চলের প্রতি তরুণ প্রজন্মের ক্রেতাদের আগ্রহ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। ২০২১ সালের প্রথম একশ দিনে দক্ষিণের বাড়ি ক্রয় বৃদ্ধি পেয়েছে ১.৯ শতাংশ।

যুগ যুগ ধরে দক্ষিণের মানুষ উত্তরাঞ্চলের শিল্প সমৃদ্ধ শহরগুলোতে কর্মসংস্থানের জন্য এসে বসতি স্থাপন করেছে। তাই উত্তরাঞ্চলের শিল্প সমৃদ্ধ শহরগুলোতে বাসস্থানের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে অতিদ্রুত।

বিশেষ করে মিলান অঞ্চলের বাড়ির দাম ইতালির মধ্যে সবচেয়ে বেশি এবং ইউরোপের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য। উত্তর ইতালির মিলান, ভেনিস, বলোনিয়া, তুরিন শহরগুলোতে লক্ষাধিক বাংলাদেশি প্রবাসীদের বসবাস। অনেকেই কিনেছেন নিজস্ব অ্যাপার্টমেন্ট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

সমগ্র ইতালিতে প্রায় ১৫ হাজার অ্যাপার্টমেন্ট ও বাসা বাড়ির মালিক বাংলাদেশি প্রবাসীরা। সংখ্যার দিক দিয়ে উত্তরাঞ্চলই বেশি। এর মধ্যে বড় বড় শহরগুলো উল্লেখযোগ্য। এর বাইরে ছোট ছোট শহরেও বাংলাদেশি প্রবাসীদের বাসাবাড়ি রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভূমির মালিকানা বাংলাদেশি প্রবাসীদের।

করোনায় এসব প্রতিষ্ঠানের মূল্য কমে যাওয়াতে বিপাকে পড়েছেন অনেকেই। তবে আগামীতে এসব প্রতিষ্ঠানের মূল্য বৃদ্ধি পাবে বলে প্রত্যাশা করছেন দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ২০২১ সালের শেষ নাগাদ করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে ধারণা করা হচ্ছে, স্থায়ী সম্পত্তির বিক্রির বৃদ্ধি পাবে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত।

করোনা মহামারির জন্য শহর ছেড়ে গ্রামমুখী হচ্ছে অনেক তরুণ নাগরিক। এতে খুশি ইতালির স্থানীয় সরকারগুলো। করোনা শেষ হলে ২০২১ সালের শেষ নাগাদ ইতালির বাড়িঘরের বিক্রয় বৃদ্ধি পাবে এমন মত প্রকাশ করেছেন ইতালির সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কিত ‘এষ্টেট এজেন্ট এজেন্সি’। তবে শহরের ছোট বাড়ি ছেড়ে গ্রামের বড় বাড়ির দিকে ঝুঁকছে নতুন ক্রেতারা। 

এছাড়া গ্রামে এতোদিন পতিত দাদা বা নানার বাড়িগুলো সংস্কারে হাত দিচ্ছে তরুণ প্রজন্মের ইতালিয়ান পরিবারগুলো। এই খাতে সহজ শর্তে ব্যাংক লোন দেওয়া হচ্ছে এবং স্থানীয় সরকারগুলো লোভনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করছেন উদ্যোক্তাদের। যেহেতু মানুষ বর্তমানে গ্রামমুখী তাই শহরের বাড়ির দাম সহসায় বৃদ্ধি পাওয়ায় সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো।

খবরটি বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য কিছুটা অস্বস্তিদায়ক, কারণ বাংলাদেশি প্রবাসীদের অধিকাংশ বিনিয়োগে সাধারণত বড় বড় শহরগুলোর কেন্দ্রে অবস্থিত। যেখানে বর্তমান বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মূল্য কমতির দিকে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে বাজার চাঙ্গা হবে বলে ধারণা করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

আপনি আরও পড়তে পারেন