দোহারে মাদ্রাসা-মসজিদের অর্থ লুণ্ঠনের অভিযোগ জানালেন এমপি’র নিকট

দোহারে মাদ্রাসা-মসজিদের অর্থ লুণ্ঠনের অভিযোগ জানালেন এমপি’র নিকট

মাহবুবুর রহমান টিপু,দোহার (ঢাকা) প্রতিনিধি :

দোহার উপজেলার মালিকান্দা-মেঘুলা এলাকার আল-জামি’আতুল ইসলামিয়া ফজলে খোদা মাদ্রাসা-মসজিদ কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠানটির বাৎসরিক আয়-ব্যায় অসন্তোষ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও বিচার দাবী নিয়ে প্রতিবাদ সভা করেছে কমিটির সদস্যরা।

অপরদিকে প্রতিষ্ঠানটির সাধারন-সম্পাদক আওলাদ হোসেন এর প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো.আলমগীর হোসেন ও ঢাকা-১ আসনের সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান বরাবর।

এর আগেও গত শুক্রবার প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে সকল সদস্যের উপস্থিতিতে আয়-ব্যায়ের হিসাব দাখিলের জন্য প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল হযরত মাওলানা আবুল কালামের কাছে জানতে চাইলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।পরে এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল হযরত মাওলানা আবুল কালাম প্রচার করেন কমিটি বাতিলের আদেশ প্রদান করেছেন কমিটির অন্যতম উপদেষ্টা ঢাকা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মাহবুবুর রহমান। এতে কমিটির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন ও স্থানীয়রা পাল্টাপাল্টি প্রতিবাদ সভা ও লিখিতভাবে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্টে অভিযোগে জানান,কমিটির কিছু সংখ্যক সদস্য ও কমিটির উপদেষ্ঠার পরোক্ষ সহযোগীতায় মাদ্রাসা-মসজিদের দানকৃত অর্থ লুণ্ঠন করছেন মোহতামিম হযরত মাওলানা আবুল কালাম আজাদ।

জানা যায়, দোহারের স্বনামধন্য ইসলামিক ¯œাতকোত্তর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির গত ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ৫৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়।এতে পরিচালনা কমিটির উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকেন ঢাকা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা অওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মাহবুবুর রহমান। উপদেষ্ঠা তার পছন্দের লোক হিসাবে সভাপতির দায়িত্ব দেন দক্ষিণ শিমুলিয়া গ্রামের আব্দুস সালাম শিকদারকে। সহ-সভাপতি হিসাবে ঢাকা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সম্বন্ধী গিয়াসউদ্দিন আল-মামুন এবং সাধারণ সম্পাদক হিসাবে চেয়ারম্যানের ভাতিজা আওলাদ হোসেনসহ তার নিকট আত্বীয়রা এই কমিটিতে গুরুত্বপূর্ন পদে থাকেন।

উক্ত মাদ্রাসার মোহতামিম আবুল কালাম আজাদ ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যায়ের হিসাব দাখিল না করে প্রভাবশালীদের সহযোগীতায় অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেনের।এছাড়াও তিনি বিষয়টি সুরাহা চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন। উপজেলা পরিষদের কাছে দেওয়া অভিযোগে লেখা আছে, মাদ্রাসা-মসজিদের অর্থ সম্পদ লুণ্ঠন করে তিনি আজ অবৈধ সম্পদশালী। তার অবৈধ সম্পদের মধ্যে চুনকুটিয়ায় ১টি প্লট যার বাজার মূল্য ৬০ লাখ টাকা।

চুনকুটিয়ার মদিনা টাওয়ারে ১টি ফ্ল্যাট ও ১টি দোকান এবং বিল্ডিংয়ের আন্ডারগ্রাউন্ড ও ছাদের মালিকানা যাহার বর্তমান বাজার মূল্য ৬০-৭০ লাখ টাকা। চুনকুটিয়ার মক্কা টাওয়ারে দুইটি ফ্ল্যাট যার আনুমানিক আয়তন ১৬ থেকে ১৮’শ স্কয়ার ফিট। আহম্মেদ নগর কেরানীগঞ্জে একটি বিশাল প্লট যার মূল্য ৩০-৪০ লাখ টাকা। তাজমহল সিটি, চিটাগং রোডে একটি প্লট যার মূল্য ৩০ লাখ টাকার উপরে। জয়পাড়া, দোহারে তার দুটি প্লট আছে। মালিকান্দা, দোহারে তার বিশাল দু’তলা দালান বাড়ি ও একটি প্লটসহ কমপক্ষে ১১টি বাড়ি ও প্লটের মালিকসহ অজ্ঞাত সম্পদের মালিক। যা তিনি মাদ্রাসার টাকা অপব্যবহার ও লুণ্ঠন করে ক্রয় করেন। এছাড়া মাদ্রাসা বিল্ডিংয়ে বিভিন্ন কোম্পানির মোবাইল টাওয়ার ভাড়া বাবদ তার নামে চেকের মাধ্যমে দীর্ঘদিন জমা হয়। যা তিনি মাদ্রাসাকে না দিয়ে নিজেই অবৈধভাবে ব্যবহার করতেছেন দীর্ঘদিন যাবৎ। এ সকল বিষয়ে সুষ্ঠ তদন্তের দাবি জানান আওলাদ হোসেন।
এ বিষয়ে দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল জানান,এ ঘটনায় উভয় গ্রুপই আইন অমান্য করে মিছিল ও মিটিং করে।দুই পক্ষকেই সাবধান করা হয়েছে বিষয়টিতে বাড়াবাড়ি না করতে এবং দুপক্ষকেই মৌখিকভাবে উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে দোহারের ইউএনও এ এফ এম ফিরোজ মাহমুদ জানান,কমিটির সাধারন-সম্পাদক মো.আওলাদ হোসেনসহ কমিটির একাধিক ব্যাক্তি অনিয়মের তদন্ত করতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো.আলমগীর হোসেন ও ঢাকা-১ আসনের সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।ওনারা সম্মতি প্রকাশ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই কমিটির উপদেষ্টা ঢাকা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান জানান, মাদ্রাসার মোহতামিম আবুল কালাম আজাদ একজন ধার্মিক ও ইসলামী চিন্তাবীদ। তার নেতৃত্বে সুন্দর ও সুচারুভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ মাদ্রাসাটি সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে পরিচালিত হচ্ছে। মাদ্রাসা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেনও মাদ্রাসার মোহতামিমের গুণকৃত্বণে মগ্ন ছিলেন। হঠাৎ করে কি কারণে তিনি এমন অভিযোগ এনেছেন তা আমার বোধগম্য নয়।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপ্যাল হযরত মাওলানা আবুল কালাম আজাদের সাথে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,এ সকল বিষয় সবই ষড়যন্ত্র বলে জানান।
দোহার, ঢাকা।

আপনি আরও পড়তে পারেন