মহামারি করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং এ সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা কেউ জানিনা এর শেষ কোথায়।
অপরদিকে ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড় সহ অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপদ-আপদ একের পর এক আঘাত হানছে? কার মৃত্যু কখন এবং কীভাবে হয় তা আমরা কেউ বলতে পারি না।
এক বছরের বেশি সময় ধরে করোনাকাল চলছে, ইতোমধ্যে অনেকেই আমরা নিজ আপনজনদের হারিয়েছি। তারপরও আমাদের বিবেক জাগ্রত হচ্ছে না?
প্রতিনিয়ত পাপ কাজ করেই যাচ্ছি। খুন, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, ব্যবসায় অধিক মুনাফা, মিথ্যা বলা সহ এমন কোন পাপ আছে যা আমার দ্বারা হচ্ছে না?
মতের অমিল হলে হত্যা করতেও দ্বিধা করছি না। আমাদের পাপের জন্য দয়াময় আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার করার সময় কি এখনও আসেনি। আমাদের পাপ সমূহ ক্ষমার জন্য তাওবা ও ইস্তেগফার করার এখনই সময়।
আমরা যদি আমাদের পাপ সমূহের জন্য ক্ষমা চাই ও ইস্তেগফারে রত থাকি তাহলে হয়তো তিনি আমাদেরকে সকল বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করবেন এবং ক্ষমা করে দিবেন।
এ বিষয়ে একটি হাদিসে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ‘ইস্তেগফার’-এর সঙ্গে আঁকড়ে থাকে অর্থাৎ ইস্তেগফারে সর্বদা নিয়োজিত থাকে আল্লাহতায়ালা তাকে সর্ব প্রকার বিপদ-আপদ থেকে উদ্ধারের পথ সৃষ্টি করে দেন আর প্রত্যেক দূরাবস্থা থেকে উত্তরণের রাস্তা বের করে দেন আর তাকে ওই সমস্ত রাস্তায় দান করেন যা সে ধারণাও করতে পারে না’ (সুনান আবি দাউদ, কিতাবুল বিতর, বাব ফিল ইস্তেগফার)।
তাই আমাদেরও উচিত হবে সর্বদা ইস্তেগফারে রত থাকা। আমরা যখন যেই অবস্থাতেই থাকি না কেন, আমরা ইচ্ছা করলেই মহান আল্লাহপাককে স্মরণ করতে পারি।
আমাদের কারো জানা নেই যে, কখন, কোন অবস্থায় মৃত্যু ঘটবে। তাই আমরা যদি আমাদের দোষ-ত্রুটিকে ক্ষমা করাতে চাই, তাহলে ইস্তেগফারের বিকল্প নেই।
তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, আমি ভুল করেছি, তারপর আমার মাঝে উপলব্ধি হলো আর আমি এর জন্য আল্লাহর কাছে কাকুতি মিনতি করে ক্ষমা চাইলাম আর তিনি আমাকে ক্ষমা করে দিলেন। তাই বলে বারবার ভুল করবো আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে থাকবো তা ঠিক নয়।
মুমিন একই ভুল বার বার করেন না। আমাদেরকে এমনভাবে ইস্তেগফার করতে হবে যেন আমার দ্বারা দ্বিতীয়বার এমন ভুল আর কখনও সংঘটিত না হয়।
একটি হাদিসে এসেছে, হজরত নুমান বিন বশির (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘যে ব্যক্তি স্বল্পে তুষ্ট হয় না সে অধিক পেলেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। আর যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে না সে আল্লাহতায়ালার করুণারাজিরও কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারে না। আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহরাজির উত্তম স্বীকারোক্তি প্রকাশ করাটাও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন। আর আল্লাহতয়ালার আশিস সমূহের উত্তম স্বীকারোক্তি প্রকাশ না করাটা অকৃতজ্ঞতা’ (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল)।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের পাপ সমূহ ক্ষমা করে বিশ্ববাসীকে মহামারি করোনা থেকে রক্ষা করুন, আমিন।
লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
masumon83@yahoo.com